প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২৩, ০২:৫৬ এএম
ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার মাঝে দেশের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো চাল মজুত করার চেষ্টা করলে, বাজার অস্থির হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা চট্টগ্রামের চাল ব্যবসায়ী নেতাদের। অথচ পরপর দুই মৌসুম বোরো ও আমনের বাম্পার ফলনে বাংলাদেশে আপাতত চালের কোনো সংকট নেই। মোকাম থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের গুদামে পর্যাপ্ত চাল মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী চাল বাজারের সামনে গেলে দেখা মিলে চালবাহী ট্রাক-মিনি ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যানের সারি। দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মোকাম থেকে আনা চাল রাখা হচ্ছে গুদামে। দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের বাজার চাক্তাই এলাকাতেও একই দৃশ্য।
বিভিন্ন মোকাম থেকে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ চালবাহী গাড়ি আসছে এসব বাজারে। যে কারণে ভারতের চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারিকে তেমন সংকট হিসাবে দেখছেননা মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা।
আগে বাংলাদেশ ২২ থেকে ২৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করলেও এখন তা ৮ থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
পাহাড়তলী বনিক সমিতির সহ সভাপতি মো. জাফর আলম বলেন, বিভিন্ন উৎপাদনকারী মোকাম ও বিভিন্ন বিক্রি মোকামে যথেষ্ট পরিমাণ চাল মজুত আছে। যে পরিমাণ চাল তাতে সংকটে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
পাহাড়তলী বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রেজা খান বলেন, খাদ্যমন্ত্রী একটি আইন পাস করেছেন; ওই আইন মেনে যদি আমরা সবাই ব্যবসা করি তাহলে চালের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না, খাদ্য ঘাটতি হবে না। আর সরকারের কাছেও অনেক চাল আছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে পর পর আমন এবং বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে দেশে। সদ্যবিদায়ী বোরো মৌসুম এবং হাওরের ধান বাজারে চলে আসায় পর্যাপ্ত চালের মজুদ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে গত দুমাস ধরেই স্থিতিশীল দেশের চালের বাজার।
বিশেষ করে মোটা সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ২০০ টাকা। আর মিনিকেট-পারী-গুটি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। গত বছর তিন মৌসুমে বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটি মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন বলেন, আমাদের সরকারের কোনো চালের সংকট নেই। বলা হচ্ছে, সরকারের কাছে ১৪ লাখ টন চাল আছে। কিন্তু আমাদের হিসাবে সরকারের কাছে ১৯ লাখ টন চাল আছে।
তবে গত কয়েক বছর ধরে বেশক`টি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পগ্রুপ চালের ব্যবসা করায় শুরু হয়ে গেছে সিন্ডিকেট প্রথা। বাজারের পরিবর্তে মোকাম থেকেই চাল সংগ্রহ করে এসব প্রতিষ্ঠান। এমনকি কম শুল্কে আমদানি করা চাল এবং প্রতিষ্ঠান কারসাজির মাধ্যমে বেশি দামে বিক্রি করেছিলো বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ অবস্থায় ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার সুযোগে যাতে কর্পোরেট হাউজগুলো কোনো রকম মজুদ করতে না পারে সে লক্ষ্যে প্রশাসনের তদারকির কথা বলছেন চাল ব্যবসায়ী নেতারা।
চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, যেসব মিলার বিপুল পরিমাণ ধান স্টক করে রাখে, ওদের দিকে নজর রাখতে হবে। যাতে ওরা এই রপ্তানি বন্ধের সুযোগটা না নিতে পারে।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ জুলাই পর্যন্ত বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৫৮ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ধান এবং ৮ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।
জেকেএস/