• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

বাম্পার উৎপাদনের পরও নিয়ন্ত্রণহীন লবণের বাজার

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৩, ০৭:১০ পিএম

বাম্পার উৎপাদনের পরও নিয়ন্ত্রণহীন লবণের বাজার

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাম্পার উৎপাদনের পরও মাঠের পাশাপাশি করপোরেট গুদামে মজুতের কারণে নিয়ন্ত্রণহীন লবণের বাজার। পাইকারি পর্যায়ে ৭৪ কেজির প্রতি বস্তা লবণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। কোনো রকম সংকট না থাকলেও গত এক বছরে প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ৪০০ টাকা।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে সরেজমিনে দেখা গেছে, নোঙর করে রাখা সারিবদ্ধ বোট থেকে ক্রুড লবণ নামিয়ে আনছেন শ্রমিকরা। প্রতি ঝুড়িতে আছে ৫৪ কেজি থেকে ৫৫ কেজি লবণ। আবার নদীর পাশের মিলেই এই লবণ পরিশোধন হচ্ছে।

মূলত আসন্ন কোরবানির ঈদের চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় লবণের জোগান দিতে শ্রমিকদের এই ব্যস্ততা।

বর্তমানে দেশের বাজারে দৃশ্যমান লবণের কোনো সংকট না থাকলেও দাম নিয়ন্ত্রণহীন। বিশেষ করে খাবরের লবণের ৭৪ কেজির প্রতি বস্তা ১ হাজার ২৮০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে আর চামড়ায় ব্যবহার করা লবণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়। অথচ গত বছর খাবারের লবণ ৯০০ টাকা এবং চামড়ার লবণ ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

লবণের উৎপাদন ও সরবরাহ ভালো থাকার কথা উল্লেখ করে চট্টগ্রামের মেসার্স জামাল অ্যান্ড সন্সের মালিক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, কাজেই লবণের বাজার অতিরিক্ত বাড়ার কারণ নেই।

আরেকজন লবণ ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের মেসার্স জনতা সল্প ফ্যাক্টরির মালিক শিমুল কান্তি দত্ত বলেন, আমরা ১ হাজার ১৫০ টাকা দরে কিনে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছি। আমাদের ওয়েস্টেজ ও লেবার খরচও তো আছে।

বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী কক্সবাজারের টেকনাফ-মহেশখালী-কুতুবদিয়া এবং চকরিয়ার বিস্তীর্ণ মাঠে ক্রুড লবণ উৎপাদন হয়। বর্তমানে মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ ক্রুড লবণ ৫৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য বোট ভাড়া এবং শ্রমিক খরচ দিয়ে এই ক্রুড লবণ মিলে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

তবে কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে দাম বাড়াতে মাঠ ও বোটে লবণের মজুত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে এক লবণ ব্যবসায়ী বলেন, মাঠপর্যায়ের বড় বড় ব্যবসায়ীরা লবণ মজুত করছে। কৃষকের কাছে প্রচুর লবণ আছে। তার সত্ত্বেও তারা বাজারে স্বল্প পরিমাণে বাজারে ছাড়ছে। যার কারণে বাজারে দাম উঠে যায়। কৃষকরা যখন দেখেছে দাম বেড়েছে। তারপর তারা ভেবেছে যে দাম আরও বাড়বে। দাম বাড়লেই বাজারে লবণ ছাড়বেন।

মাঠের মতো কিছু কিছু করপোরেট হাউসও লবণের মজুত করছে বলে অভিযোগ সাধারণ ব্যবসায়ীদের। এক্ষেত্রে করপোরেট হাউসগুলো সংকটের অজুহাতে কৌশলে লবণ আমদানির অনুমতি নেয়ারও পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের দেশে যে পরিমাণ লবণ রয়েছে, তা দিয়েই দেশের চাহিদা পূরণ করা যায়। আমদানির প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু বড় বড় ব্যবসায়ীরা লবণ মজুত করছে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার জন্য।

প্রসঙ্গত, দেশে বছরের প্রায় ২০ লাখ টন লবণের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে কোরবানির চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন হয় ৩ লাখ টন লবণ। আর শুধু ১ লাখ টন শিল্পের কাঁচামালের লবণ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার মাঠপর্যায়ে রেকর্ড পরিমাণ ক্রুড লবণ উৎপাদন হয়েছে। সে ক্রুড লবণ মিল থেকে রিফাইন হয়ে চলে যাচ্ছে বাজারে। এককথায় বাজারে লবণের কোনো সংকট নেই। এক্ষেত্রে আসন্ন কোরবানের সময়ে লবণের চাহিদা বাড়লে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে সে লবণ আমদানির প্রক্রিয়া নেয়া হবে, এমনটিই শঙ্কা করছেন মাঠপর্যায়ের লবণ ব্যবসায়ীরা। 

 

জেকেএস/

আর্কাইভ