• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দরে কম শুল্কের আড়ালে দামি পণ্য আমদানি

প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৩, ০৭:৪৩ পিএম

চট্টগ্রাম বন্দরে কম শুল্কের আড়ালে দামি পণ্য আমদানি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

শুল্ক ফাঁকি দিতে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলছে। যন্ত্রপাতির কথা বলে দামি মদ-সিগারেট-গুঁড়া দুধসহ নানা পণ্য আনছে একটি চক্র। কম শুল্কের পণ্যের আড়ালে দামি পণ্য এনে যেমন শতকোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে এই চক্র, তেমনি আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে আমদানি করে বিদেশে ডলার পাচার হচ্ছে।

সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসআইয়ের সহযোগিতায় কাস্টম গোয়েন্দার হাতে আটক হওয়া এক কনটেইনারে দেখা মেলে কার্টনভর্তি বিদেশি মদের। এই কনটেইনারের সামনের দিকে সামান্য কিছু আমদানি পণ্য সোডা অ্যাশ রেখে পুরো কনটেইনারেই বিদেশি মদ নিয়ে আসা হয়েছে। এই চালানে আড়াই কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দেয়ার পাশাপাশি বিদেশে অন্তত ১৪ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।

আটক হওয়া আরেকটি চালানে দেখা গেছে, সামনের দিকে কম শুল্কের ইলেকট্রনিকস মেশিনারি দ্রব্য রেখে ৪০ ফুটের পুরো কনটেইনারে গুঁড়া দুধের কার্টন। 
প্রসঙ্গত, ইলেকট্রনিকসসামগ্রীর শুল্কহার মাত্র ২৬ শতাংশ হলে গুঁড়া দুধের শুল্ক ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। এই এক কনটেইনার পণ্যে ৫৫ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। একই সঙ্গে বিদেশে আড়াই কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে।

এখানে শুরু কিংবা শেষ নয়। প্রায়ইশ চট্টগ্রাম বন্দরে কাস্টম এবং শুল্ক গোয়েন্দার অভিযানে শুল্ক ফাঁকির অসংখ্য ঘটনার উদ্‌ঘাটন হচ্ছে। এমনকি এক চালানেই কয়েকশ কোটি টাকা মূল্যের ৫ কনটেইনার মদ আনা হয়েছে।
 
এমন চোরাচালান ধরা পড়লে কাস্টমসের নেয়া পদক্ষেপের বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, যখন এ ধরনের মিথ্যা ঘোষণা করা পণ্য ধরা পড়ে তখন যে পরিমাণ শুল্ক ফাঁকির উদ্দেশ্য ছিল সেটির ওপরে কম করে হলেও ২০০ শতাংশ অর্থ জরিমানা আরোপ করা হয়।

মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির ফলে একদিকে যেমন সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে বেশি দামের পণ্য আন্ডার ইনভয়েস করায় চোরাই শত কোটি ডলার পথে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রহুল আমিন সিকদার বলেন, সার্বসাকল্যে ক্ষতি হচ্ছে দেশের। কারণ আমদানি পণ্যের ওপর দেশের যে রাজস্ব পাওয়ার কথা সরকার সেই রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এবিষয়ে চট্টগ্রাম সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইমাম মাহমুদ বিলু বলেন, এরা হচ্ছেন একে বারেই চোরাচালানি। এদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা টাকা পাচারের উদ্দেশ্যে এসব কাজ করছে তারা অর্থপাচারকারী, তারা ব্যবসায়ী নন।


এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর বছরে ৩২ লাখের বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করছে। এর মধ্যে আমদানি কনটেইনারের পরিমাণ অন্তত ২০ লাখ। কিন্তু আইনি জটিলতার পাশাপাশি নানা সীমাবদ্ধতায় শুল্ক ফাঁকির ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। যার দায় নিতে নারাজ বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, আমরা কার্টন, ব্যাগ ও প্যালেটের সংখ্যা নিশ্চিত করি। কিন্তু এইসব কার্টনের ভেতরে কি আসে সেটি দেখার দায়িত্ব কাস্টমসের।
 
একই কথা শিপিং এজেন্টদেরও। কনটেইনারে আমদানি করা চোরাই পণ্যের দায় এককভাবে চোরাচালানিদের ওপর দিয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, যে এই কাজগুলো করার সে কিন্তু অনেক পথ অবলম্বন করেই এই কাজ করবেন। কিন্তু শিপিং এজেন্ট কখনোই এ বিষয়ে দায়িত্ব নিবেও না আর তার জানার কথাও না।

অন্যদিকে শুল্ক ফাঁকির এসব ঘটনায় মামলা হলেও কখনো মূলহোতারা ধরা পড়ে না। বিশেষ করে মিথ্যা ঘোষণার মতো ভুল ঠিকানা ব্যবহার করে আনা আমদানি পণ্যের মূল হোতা দেখা যায় কখনোই ধরা পড়েন না।

মিথ্যে ঘোষণায় কম মূল্যে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করে বাজারে যেমন অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়, ঠিক তেমনি বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান ডলার। আর এতে সার্বিকভাবে প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে।


এডিএস/

অর্থ ও বাণিজ্য সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ