প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৩, ০২:৩০ এএম
ক’দিন আগেও দেশের রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামলে একধরনের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল। তবে বুধবার (১০ মে) রিজার্ভ বেড়ে আবারও ৩০ বিলিয়নের ওপরে অবস্থান করছে। এতে রিজার্ভে নেমে এসেছে স্বস্তির হাওয়া।
সম্প্রতি বাজেটের ঋণসহায়তা হিসেবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া ৫০৭ মিলিয়ন ডলার অর্থ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে যোগ হয়েছে। এতে বর্তমানে রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩৬ কোটি ডলার।
এর আগে সোমবার (৮ মে) এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মাসের আমদানি বিল বাবদ ১১৮ কোটি ডলার পরিশোধ করা হলে রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ২৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৯৭৭ কোটি ডলারে, যা বিগত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এতে রিজার্ভ নিয়ে একধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছিল।
বৈশ্বিক অস্থিরতায় দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশ যেখানে এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছে যে বিশ্ব দাতা সংস্থাগুলোও তাদের ঋণ দিতে নারাজ, সেখানে বাংলাদেশ তুলনামূলক সহজ শর্তে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক থেকে নানা মেয়াদে বড় বড় ঋণ হাসিল করতে পারছে। ব্যাপারটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের অর্থনীতি যথেষ্ট ভালো অবস্থায় রয়েছে। এসব দেশ এখন দাতা সংস্থা থেকেও ঋণ পাচ্ছে না। সেখানে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রশংসা করছে ও ঋণ দিচ্ছে।
সম্প্রতি ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিনকে দিন আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে পাকিস্তানের। এভাবে চলতে থাকলে অল্প দিনের মধ্যে পাকিস্তান খেলাপি ও দেউলিয়া হয়ে যাবে। বর্তমানে পাকিস্তানের যে রিজার্ভ, তাতে মাত্র এক মাস আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
এদিকে ইমরান খানকে গ্রেফতারের পর পাকিস্তানের রাজনীতির পরিবেশ আরও ঘোলাটে হয়েছে। এমন অস্থিতিশীল পরিবেশে পাকিস্তানের ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা দিনকে দিন আরও ক্ষীণ হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক পরিবেশ নিয়ে খোদ আইএমএফ জানিয়েছে, অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ থাকার পরও বাংলাদেশ সব উতরে এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। যদিও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, বিশ্ববাজারের অস্থিরতা, ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা, রিজার্ভ সংকট ও টাকার অবমূল্যায়নের মতো চ্যালেঞ্জ আছে। তবে এসব চ্যালেঞ্জ নিয়েই বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে আইএমএফের মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দ।
একইভাবে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্সি টেম্বন বলেন, বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে অন্যতম এক উন্নয়ন সাফল্যের গল্প। সম্প্রতি পাঁচটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে আড়াই বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে, দেশীয় মুদ্রায় যা ২৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এর আগে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক থেকে এত বড় অঙ্কের ঋণ পায়নি। মূলত প্রবহমান অর্থনৈতিক উন্নতির ফলে বিশ্বের দাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের ওপর ভরসা পাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবিদরা।
এ ব্যাপারে রুমানা হক বলেন, প্রথমত বাংলাদেশের অবিচ্ছিন্ন রেমিট্যান্সের প্রভাব ও দ্বিতীয়ত রফতানিখাত থেকে আসা অর্থ বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিচ্ছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। কিন্তু রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ ও প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী সিদ্ধান্তের সুবিধা হিসেবে এসব ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবেই যাতে ঋণের অর্থ অপচয় কিংবা তছরুপ না হয়।
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক থেকে ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে সম্পর্ক কিছুটা শীতল হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক বৈঠক ও পাঁচটি বৃহৎ প্রকল্পের ঋণ কার্যক্রম ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের পথচলার কথা উল্লেখ করে রুমানা হক বলেন, বাংলাদেশ সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করছে। এতে সামনের দিনগুলোতে বিপদের শঙ্কা কমে আসবে। তবে কোনোভাবেই যাতে দেশ ঋণনির্ভর হয়ে না পড়ে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সঠিক সময়ে ঋণ নেয়ায় শর্ত নিয়ে দরকষাকষির জায়গা পাচ্ছে বাংলাদেশ। দাতা সংস্থাগুলো চাইলেই বাংলাদেশের ওপর এমন কোনো শর্ত চাপিয়ে দিতে পারছে না, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।
জেকেএস/