• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

দাম বাড়াতে উধাও হচ্ছে চিনি, ভোজ্যতেলেও পাঁয়তারা

প্রকাশিত: মে ১০, ২০২৩, ০৭:৩২ পিএম

দাম বাড়াতে উধাও হচ্ছে চিনি, ভোজ্যতেলেও পাঁয়তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অস্থির নিত্যপণ্যের বাজারে মিলছে না তেল ও চিনি। সেই সঙ্গে বাড়ছে শাকসবজি, মাছ-মাংসসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম। এতে দিশেহারা ভোক্তারা। তাদের দাবি, দাম বাড়াতে ইচ্ছে করে পণ্যের সংকট তৈরি করছে বিক্রেতারা।

বুধবার (১০ মে) সরেজমিনে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, আগানগর, পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার ও বংশাল কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, দাম বেড়েছে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের।

গত কয়েক মাস ধরেই অস্থির দেশের চিনি ও মুরগির বাজার। চিনি অচেনা হয়েছে বেশ আগেই। দোকানগুলোতে দেখা মিলছে না চিনির৷ আর মুরগির দাম ওঠানামা করছে প্রতি সপ্তাহেই।

বিক্রেতারা জানান, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে চিনির দাম বাড়িয়েছে মিল মালিকরা। পাশাপাশি সরবরাহ করছে না ঠিকমতো। এতে দোকানে চিনি রাখছেন না তারা।
 
আর ক্রেতারা জানান, সুযোগ বুঝে অধিক দামে বিক্রির আশায় চিনি লুকিয়ে রাখছেন দোকানিরা। উজ্জ্বল সিকদার নামে এক ক্রেতা জানান, ‘গত কয়েকদিন ধরেই বাজারে চিনি পাচ্ছি না। জিজ্ঞেস করলেই বলছে চিনি নেই। তবে ক্রেতা বুঝে চিনি বের করে দিচ্ছেন দোকানদাররা।’

এবার নিত্যপণ্যের অস্থির বাজারে যুক্ত হয়েছে ভোজ্যতেলও। গত বৃহস্পতিবার (০৪ মে) বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ১২ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করে ভোজ্যতেল উৎপাদক সমিতি। এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৯ টাকা বাড়িয়ে ১৭৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর প্রতি লিটার খোলা পাম সুপার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৫ টাকা।

এরপর থেকেই মূলত বাড়তে শুরু করেছে তেলের সংকট। ক্রেতাদের অভিযোগ বেঁধে দেয়া দামকে উপেক্ষা করে বিক্রেতারা তেল বিক্রি করছেন বাড়তি দামে। তাও মিলছে না সব দোকানে। 

আর বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে তেলের সরবরাহ কম। মিল মালিকরা ঠিকমতো তেল সরবরাহ করছেন না। তবে এখনও ঘাটতি নেই তেলের। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফা লাভের আশায় তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন।
 
এ ছাড়া নতুন রেটের বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজারে এলে সংকট কেটে যাবে বলে জানান কেরানীগঞ্জের জিনজিরা বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. আনিস। তিনি বলেন, বাজারে খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায়। তবে এখনও আসেনি নতুন রেটের বোতলজাত সয়াবিন তেল।

এদিকে গত কয়েক মাস ধরে অস্থির মুরগির বাজারও চড়া। বেশির ভাগ দোকানে মূল্যতালিকায় প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম ২০০ টাকা লেখা থাকলেও সেটি মানছেন না বিক্রেতারা। সরেজমিনে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায় টাকায়। আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়।

আর প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পর এখনও বাড়েনি গরু ও খাসির দাম। এ  ছাড়া প্রতি ডজন সাদা ডিম ১২৬ টাকা ও লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৮ টাকায়।

অস্থির শাকসবজির বাজারও। বাড়তে শুরু করেছে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, মরিচ ১৪০ টাকা, আদা ২৫০ টাকা, রসুন ১৫০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, আলু ৩৫ টাকা, পটোল ৭০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ও বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। এ ছাড়া প্রকারভেদে লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।

দাম বেড়েছে মাছের বাজারেও। প্রতিকেজি রুই মাছ ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, টেংরা ৭০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, তেলপিয়া ৩০০ টাকা, আইড় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আকারভেদে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়।
 
ক্রেতারা জানান, যেভাবে সব কিছুর দাম বাড়ছে, কিনে খাওয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। কেরানীগঞ্জের জিনজিরা কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা তাপস নামে এক ক্রেতা জানান, গত সপ্তাহে পেঁয়াজ কিনেছিলাম ৫০ টাকায়। সেটি এখন কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকায়৷ পাশাপাশি বেড়েছে আদা, পটোল ও মরিচের দাম।


বিক্রেতারা বলছেন, গরমের কারণে ফলন তেমন না হওয়ায় সরবরাহ কমতির দিকে। তাই দাম বাড়ছে। তবে বৃষ্টি শুরু হয়ে গরম কমলে দামও কমবে।

এদিকে নিত্যপণ্যের এই অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষেরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়। আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।


এডিএস/

অর্থ ও বাণিজ্য সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ