• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

এফসিটিসি‍‍`র আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৩, ১০:৫৭ পিএম

এফসিটিসি‍‍`র আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে কোম্পানি মনিটরিং ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) আর্টিক্যাল ৫ দশমিক ৩ বাস্তবায়ন জরুরি বলে উঠে এসেছে সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল (বিএমজে) গ্রুপের টোব্যাকো কন্ট্রোল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) বিএমজে গ্রুপের টোব্যাকো কন্ট্রোল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বিষয়ক গবেষণাপত্রটি।

গবেষকদলের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের বাথ ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল রিসার্চ গ্রুপের পরিচালক অধ্যাপক অ্যানা বি. গিলমোর, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ড. ব্রিটা কে. ম্যাথুস, প্রগতির জন্য জ্ঞানের (প্রজ্ঞা) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের, হেড অব প্রোগ্রামস মো. হাসান শাহরিয়ার, হেড অব অ্যাডভোকেসি মো. শাহেদুল আলম ও মিডিয়া ম্যানেজার অব টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম মো. মেহেদি হাসান।
 
গবেষণায় তামাকজাত পণ্যের মোড়কের উপরিভাগের ৫০ শতাংশ জায়গা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণ সংক্রান্ত ২০১৩ সালের সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি গবেষণাপত্রে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক কোম্পানির কার্যক্রম নিয়মিতভাবে মনিটরিংয়ের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫ দশমিক ৩ সংক্রান্ত গাইডলাইন বাস্তবায়নকে সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়।

গবেষণাপত্রের ফলাফল অনুযায়ী, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণ বিষয়ে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য ছিল এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া যথাসম্ভব প্রলম্বিত করা এবং মোড়কের উপরিভাগের বদলে নিচের ৫০ শতাংশ জায়গায় মুদ্রণের মাধ্যমে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার কার্যকারিতা দুর্বল করে দেয়া। এ হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানির পক্ষে সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেছে সিগারেট উৎপাদকদের জোট বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ)-কে।

এছাড়া তামাক কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে সবচেয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগের সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় রাজস্ব বিভাগের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করতে সমর্থ হয় কোম্পানিটি।

এর আগে ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত খসড়া বিধিমালায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা বাস্তবায়নের জন্য তামাক কোম্পানিগুলোকে ৬ মাস সময়সীমা বেঁধে দেয়া হলেও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে তা প্রায় দুইবছর পিছিয়ে দিতে সক্ষম হয় কোম্পানিগুলো।

সবশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণ শুরু হয়। তবে কোম্পানির হস্তক্ষেপে তা মোড়কের উপরিভাগের বদলে নিচের ৫০ শতাংশে মুদ্রিত হয়।
 
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এমন সময়েই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হলো, যখন খসড়া সংশোধনীতে অন্যান্য বিষয়ের সাথে তামাকজাত পণ্যের মোড়কে ৯০ শতাংশ জায়গা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কতাবার্তা মুদ্রণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধনী প্রক্রিয়া নস্যাৎ করতে তামাক কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে নানাভাবে হস্তক্ষেপ শুরু করেছে।


প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের এই গবেষণার ফলাফলের আলোকে সরকারের প্রতি তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথমবার সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কতাবার্তা প্রচলনে ২০১৩ সালে আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সরকারকে তা বিবেচনায় রাখতে হবে। চলমান সংশোধনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে তামাক কোম্পানিগুলো প্রায় একই ধরনের হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখবে। তামাক কোম্পানির কূটকৌশলে বিভ্রান্ত না হয়ে নীতিনির্ধারকদেরকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সর্বো‍চ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।’

বাংলাদেশে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়নে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বিষয়ক গবেষণাটি ২০১৩ সালের ১ মার্চ থেকে ২০১৭ সালের ৩১ নভেম্বর পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, এবং তামাক কোম্পানি, সরকার এবং আদালতের মোট ১১টি নথির ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়েছে।


এডিএস/

অর্থ ও বাণিজ্য সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ