• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নতুন মাত্রা যোগ করবে শেখ হাসিনার জাপান সফর

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৩, ০৬:২৮ পিএম

নতুন মাত্রা যোগ করবে শেখ হাসিনার জাপান সফর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু রাষ্ট্র জাপান তখন কূটনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকলেও যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পরই ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে জাপান বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সেই থেকে শুরু, চলছে পঞ্চাশ বছর ধরে এখন পর্যন্ত।

মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের জাপান সফরের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার এটি ষষ্ঠবারের মতো জাপান সফর। অন্যান্য সফরের মতো এবারের সফরও জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্কে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানান, জাপান সফরে মেট্রোরেলের সমীক্ষা, জাহাজভাঙা শিল্পের আধুনিকায়ন, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ আধুনিকায়ন, শিল্পের মানোন্নয়নের অংশীদারিত্ব এবং শুল্ক খাতের সমন্বয়সহ ৮টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে। 

মূলত জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে শেখ হাসিনার এ জাপান সফর। এবারের সফরে কৃষি, মেট্রোরেল, আইসিটিসহ কয়েকটা খাত নিয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা সমঝোতা সই হবে। বাংলাদেশ-জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। 

এর আগে জাপান বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংবাদমাধ্যম ডিপ্লোম্যাটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সুন্দর মডেল বলে যদি কিছু থাকে সেটি জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক। বাংলাদেশকে জাপান তার অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসিট্যান্টের (ওডিএ) আওতায় এখন পর্যন্ত যা সহযোগিতা করেছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জায়গা থেকে তা সর্বোচ্চ। 

বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের বিভিন্নখাতে ২ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন অর্থ সহায়তা করে জাপান, যা একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে জাপানের মোট অর্থসহয়তার পরিমাণ ২৪ দশমিক ৭২ বিলিয়ন, যা একটি বড় রকমের মাইলফলক। 

বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে জাপানের বিনিয়োগ বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় বাজার জাপান। বিগত এক দশকে জাপানে বাংলাদেশের রফতানি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ মূলত তৈরি পোশাক ও চামড়াজাতপণ্য জাপানে রফতানি করে থাকে। তবে এর বাইরেও জাপানের বাজারে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান নেয়ার সক্ষমতা আছে বলে মনে করে জাপান। 

এর আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি তার এক বক্তব্যে বলেছিলেন, বাংলাদেশ চাইলেই জাপানে ওষুধ, প্রাণীজ আমিষ ও কৃষিজাত পণ্য রফতানি করতে পারে। জাপানের বাজারে বাংলাদেশের সমূহ সম্ভাবনা আছে বলে জানান নাওকি। রফতানির পাশাপাশি বাংলাদেশ জাপান থেকে লোহা ও স্টিল আমদানি করে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের মোটরগাড়ি, পার্টস ও যন্ত্রপাতির বড় একটি অংশ জাপান থেকে আমদানি করে বাংলাদেশ। আশা করা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর এবারের জাপান সফরে দেশ দুটির আমদানি-রফতানির বাজার আরও প্রসারিত ও সমৃদ্ধ হবে। 

সংবাদমাধ্যম ডিপ্লোম্যাটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাণিজ্যের পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নানাবিধ প্রশিক্ষণ ও সাহায্য সহযোগিতায় জাপান ও বাংলাদেশ একে অন্যের পরিপূরক হতে পারে। দুটি দেশই দুর্যোগপ্রবণ হওয়ায় নিজেদের সম্মিলিত স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে পারে জাপান-বাংলাদেশ। বিশেষ করে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় জাপান সিদ্ধহস্ত। অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য শহর ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকায় এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সাহায্য করে ঝুঁকি প্রশমনে সাহায্য করতে পারে জাপান। 

২০১৪ সালের পিউ রিসার্চ সার্ভের এক জরিপে দেখা যায়, ৭১ ভাগ বাংলাদেশি জাপানকে নিজেদের বন্ধু রাষ্ট্র মনে করে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশ দুটি যেভাবে একে অন্যকে সহযোগিতা করে তাতে করে সামনের দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হতে পারে। বিশেষ করে জাপানকে পাশে পেলে আন্তর্জাতিকভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ আরও বেশি করে মিয়ানমারের ওপরে চাপ সৃষ্টি ও জনমত তৈরি করতে পারবে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

এ ছাড়া ব্যবসায়িক দিক থেকে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে দেখা যায়, ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ এমন একটি মুক্তবাজার অর্থনীতির পরিবেশ ও ভোক্তাবাজার সৃষ্টি করেছে যেখানে বিনিয়োগ করলে মুনাফা তুলে নেয়ার সম্ভাবনা অনেক। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে ১৬৪ মিলিয়ন ভোক্তাবাজারে নিজেদের অবস্থা জোরালো করার ব্যাপারেও দৃষ্টি থাকবে জাপানের। 

কূটনৈতিক দিক থেকে পর্যালোচনা করলে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে দিল্লির বাইরেও দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের হাত ধরে নিজেদের একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারবে জাপান। অন্যদিকে জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চীনা ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো থেকে শুরু করে ২০২৬ সালে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের আগেই নিজেদের কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ।

 

বিএস/

আর্কাইভ