প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৩, ০৮:১০ পিএম
রাজধানীর বঙ্গবাজারের আগুন ৭৫ ঘণ্টা পর সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণ সম্পন্ন করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা। এখন শুরু হয়েছে পোড়া স্তূপ সরানোর কাজ।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মালামাল সরানোর কাজ শুরু হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে কাজ শুরু করে দোকান মালিক সমিতি।
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতি জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অনুমতিক্রমে মেসার্স বুশরা ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে পোড়া স্তূপ সরানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দরপত্রের মাধ্যমে ৪০ লাখ টাকায় এসব পোড়া স্তূপ কিনে নিয়েছে। তারা পোড়া স্তূপ নিয়ে যাওয়ার পর ডিএসসিসি জায়গাটি পরিষ্কার করে দেবে। তারপর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে বসার ব্যবস্থা করা হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আগুন নির্বাপণের কাজ শেষ করে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা চলে যাওয়ার পর শ্রমিকরা পোড়া স্তূপ সরানোর কাজ শুরু করেন। প্রথমে পুড়ে যাওয়া দোকানের অবকাঠামো (টিন, লোহা) সরানোর কাজ শুরু হয়। তাছাড়া গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে নেওয়া হচ্ছে লোহা-লক্কড় ও টিন। সেগুলো ট্রাকে ভরে বুশরা ট্রেডার্সে নিয়ে যাওয়া হবে।
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. নাজমুল হুদা বলেন, আগুন যখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে তখন অনেকে বিচ্ছিন্নভাবে এখান থেকে মালামাল (পোশাক ও লোহা লক্কড়) চুরি করে নিয়ে গেছে। আমরা বা প্রশাসন সেই নিরাপত্তা দিতে পারিনি। পরবর্তীতে আমরা দেখলাম কিছু মালামাল (লোহা লক্কড়) রয়ে গেছে। এগুলো আমরা যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে দরপত্রের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সর্বোচ্চ দরে বিক্রি করে দিয়েছি। তারা এসব মালামাল নিয়ে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশন জায়গাটি পরিষ্কার করে দেবে।
তিনি বলেন, মালামাল বিক্রির টাকাটা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির কাছে থাকবে। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দেওয়া হবে। আমরা সম্পূর্ণ মালামাল বিক্রি করতে পারলে আরও ভালো টাকা পেতাম। কিন্তু আমরা সেটা করতে পারিনি।
জায়গাটি পরিষ্কার করতে কতোদিন লাগবে জানতে চাইলে মো. নাজমুল হুদা বলেন, আমরা এখনই নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না, কতোদিন লাগবে। বা কতোদিনের মধ্যে ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে বসার সুযোগ করে দিতে পারবো। আজকে আমরা পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছি। জায়গাটি পরিষ্কারের কাজ শেষ হলে, নিরাপদ হলে, আমরা ব্যবসায়ীদের বসার ব্যবস্থা করে দেব। আশা করছি রোববারের মধ্যে আমরা জায়গাটি পরিষ্কার করে ফেলতে পারবো। তারপর মঙ্গলবার বা বুধবারের মধ্যে ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে বসার সুযোগ করে দিতে পারব।
সব ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে বসার সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুড়ে যাওয়া মার্কেটটি দুই তলা, তিন তলা ছিলো। এখন খোলা জায়গায় সব ব্যবসায়ীকে তো বসার সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব না। তারপরও আমরা একটি দোকানে দুজন করে বসার সুযোগ দিতে চেষ্টা করবো। এখানে তারা তো অনেক বেশি ব্যবসা করার জন্য বসবেন না। ঈদের আগে তারা যদি এখানে একটু বসতে পারে, তাহলে দেনাদার ও পাওনাদারের কিছুটা সহানুভূতি পাবে। পাশাপাশি কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও মালিকদের তালিকার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, কাজ চলছে। আগামী রোববার ব্যবসায়ীদের বৈঠক আছে। সেখানে আমরা চূড়ান্ত তালিকাটি উপস্থাপন করবো।
এর আগে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনা ঘটে। সকাল ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ৪১ ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। পরে আরো সাতটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টায় বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নেভে। কিন্তু গত তিনদিন পুরোপুরি আগুন নির্বাপণ হয়নি।