• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জিজ্ঞাসাবাদের পর মঞ্জুর আলমকে ছেড়ে দেওয়ার কারণ কী

প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৩, ০৩:৩১ এএম

জিজ্ঞাসাবাদের পর মঞ্জুর আলমকে ছেড়ে দেওয়ার কারণ কী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ই-কমার্সের নামে তিনি বড় দাগে একের পর এক প্রতারণা করেছেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা। তবুও বহাল তবিয়তেই আছেন আলেশা মার্ট প্রধান মঞ্জুর আলম সিকদার। সম্প্রতি জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও ডাকা হয়েছিল তাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ডাকে সাড়াও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে  শতাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার পরও মঞ্জুরকে ছেড়ে দেয়ায় দেখা দিয়েছে নানা রহস্য। গ্রাহকদের অভিযোগ লেনদেনের মাধ্যমেই এই ব্যক্তি পার পেয়ে যাচ্ছেন। এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় লোকজন জড়িত থাকতে পারে।

দুজন মন্ত্রী ও ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে প্রতারক মঞ্জুরের। একইসঙ্গে একজন মন্ত্রীর পিএস তাকে তাৎক্ষনিক সব ধরনের সাহায্য করে যাচ্ছন। 

জানা গেছে, গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং এর অভিযোগে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল আলেশা মার্ট প্রধান মঞ্জুর আলম সিকদারকে। কিন্তু তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বরাবরই। প্রতারিত গ্রাহকদের তথ্য ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুজন মন্ত্রী ও ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে প্রতারক মঞ্জুরের। একইসঙ্গে একজন মন্ত্রীর পিএস তাকে তাৎক্ষনিক সব ধরনের সাহায্য করে যাচ্ছন। সেই যোগসুত্রতা কাজে লাগিয়ে মঞ্জুর আলম সিকদার বারবার জিজ্ঞাসাবাদের পর মুক্তি পাচ্ছেন। এ কারণেই মন্জুর আলমের লোকজন বাইরে দম্ভ করে প্রতারিত গ্রাহকদের বলছেন, ‘তাদের কিছুই হবে না’।

এ ঘটনা প্রসঙ্গে দায়িত্বশীলদের অনেকে মুখ খুলতেও চান না। মঞ্জুর আলমকে কেনো জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হচ্ছে তা জানতে চাওয়া হলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে কোনো কিছু  খোলসা করেননি। 
এমনকি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় থানাগুলোর কর্মকর্তাদের কাছে গ্রেফতার না হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু নানাভাবেই বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন তারা। গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন সব জায়গা ম্যানেজ করে রেখেছেন মঞ্জুর।

মঞ্জুরকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়ার পর তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে। এসব তাদের হাতে আছে। 

তবে আশার কথা হচ্ছে, সকল কর্মকান্ডকে নজর করছে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। তারা সবকিছুই পর্যবেক্ষন করছেন। সংস্থাটি সিটি নিউজ ঢাকাকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। যেখানে  মঞ্জুরের সঙ্গে কয়েকজনের সন্দেহজনক যোগসুত্র পাওয়া গেছে। যা উপযুক্ত সময়ে গলার কাটা হয়ে যেতে পারে।

ওই গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে, এক সময়  মঞ্জুরকে ধরা খেতেই হবে। গোয়েন্দা সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন,  মঞ্জুরকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়ার পর তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে। এসব তাদের হাতে আছে। পাশাপাশি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাদের প্রথম তদন্ত অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেয়ার কারনও জানা গেছে। ওই কর্মকর্তা অভিযুক্ত আলেশা মার্ট প্রধানের সঙ্গে বাইরে দেখাও করেছিলেন।

গ্রাহকদের পক্ষে বলা হচ্ছে- অদৃশ্য শক্তি এবং লেনদেনের একটা বিষয় এখানে কাজ করছে। সে জন্যই  মঞ্জুরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একাধিকবার ছেড়ে দিয়েছেন তদন্তের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।

আইনশৃঙ্খলাবাহিনী চাইলে তাকে গ্রেফতার করতে পারে। কিন্তু তাকে  গ্রেফতারের নামে ভয় দেখানো বা গ্রেফতার করা হতে পারে এমন আকার-ইঙ্গিতের পর আর কোনো কূল-কিনারা হচ্ছে না।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কেউ কেউ তার কাছ থেকে লাভবান হয়ে তাকে গ্রেফতার করছেন না। তারা বলেছেন, আলেশা মার্টপ্রধান মঞ্জুর আলম সিকদারের বিরুদ্ধে শত শত গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী চাইলে তাকে গ্রেফতার করতে পারে। কিন্তু তাকে  গ্রেফতারের নামে ভয় দেখানো বা গ্রেফতার করা হতে পারে এমন আকার-ইঙ্গিতের পর আর কোনো কূল-কিনারা হচ্ছে না।

গ্রাহকদের অভিযোগ, মঞ্জুর আলম সিকদারকে গ্রেফতার বা আটক বা জিজ্ঞাসাবাদের নামে কোনো কোনো পক্ষ সুবিধা নিচ্ছে। অভিযোগগুলোকে পুঁজি করে কোনো কোনো সুবিধাবাদি ফায়দা নিয়ে সবকিছু ধামাচাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

তাদের মতে, বিশাল অংকের অর্থ লুট করে এই ব্যক্তি গুলশানে বহাল তবিয়েতে বসবাস করছেন, ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাকে আইনের আওতায় না আনার পেছনের কারণ- একটাই আটক বা গ্রেফতারের প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তাদের তিনি ম্যানেজ করে রেখেছেন। এ কারণে গ্রাহকরা যত অভিযোগ করুক না কেন, তা কাজে দিচ্ছে না। এসবকে ফায়দা হিসেবে গ্রহণ করছেন কেউ কেউ।

 ‍‍`বিষয়টি নিয়ে আমরা সরকারের উচ্চপর্যায়ে অভিযোগ করবো। আমাদের আশা, তিনি শিগগিরই গ্রেফতার হবেন।‍‍`

গ্রাহকরা বলছেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঞ্জুর আলমকে ছেড়ে দিয়ে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কী বোঝাতে চাচ্ছেন তা তাদের বোধগম্য নয়। বিষয়টি নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করবেন গ্রাহকরা।

মনিরুল ইসলাম নামে এক গ্রাহক বলেছেন, ‍‍`প্রতরণা করা অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ইভ্যালির রাসেলও এখন পযর্ন্ত কারাগারে রয়েছেন। কিন্তু আলেশা মার্ট প্রধানকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।‍‍`

তিনি বলেন, ‍‍`বিষয়টি নিয়ে আমরা সরকারের উচ্চপর্যায়ে অভিযোগ করবো। আমাদের আশা, তিনি শিগগিরই গ্রেফতার হবেন।‍‍`

কোনো অপরাধীর বিরুদ্ধে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য-উপাত্ত থাকার পরও আইনি পদক্ষেপ না নেয়া এক ধরনের অপরাধ।

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতা না থাকার বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যপাক মো. আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, ‘কোনো অপরাধীর বিরুদ্ধে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য-উপাত্ত থাকার পরও আইনি পদক্ষেপ না নেয়া এক ধরনের অপরাধ। যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে তাহলে অভিযুক্ত বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশের বিষয়টি সহজেই অনুমান করা যায়।’

আর্কাইভ