প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২৩, ০৪:৪২ পিএম
সারা দেশের মতো নীলফামারীতেও মরিচ, পেঁয়াজ, আদা হলুদ ও সবজির দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালি মুরগির দাম। গত এক মাসে ব্রয়লারের কেজিতে দাম বেড়েছে ১২০ টাকা।
শবেবরাতের দিন মঙ্গলবার (৭ মার্চ) নীলফামারী বিকালে জেলা শহরের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, এক মাস আগেও যে ব্রয়লার প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকায় তা এখন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়। একইভাবে পাইকারি বাজারে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০-৩৫০ টাকা। যা আগে ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
এদিকে, গত এক মাসে লেয়ার মুরগির দাম কেজিতে ১২০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। অপরদিকে, একইভাবে এক কেজি কাটা ব্রয়লার মাংসের দাম ছিল ২৪০ টাকা বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। একইভাবে ডিম ও সবজির দামও হু হু করে বেড়েই চলছে।
শহরের কিচেন মার্কেটে মুরগির মাংস কিনতে আসা জেলা সদরের লক্ষিচাপ ইউনিয়নের দুর্বাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম (৫৫) বলেন, ‘আইজ শবেবরাত, মাংস নিবার আসি দেখি দাম বেশি। ঘুরাঘুরি করে মুরগির পা নিবার চাইছি, সেটিরও দাম বেশি। আধা কেজি দাম চেয়েছে ৯০ টাকা। আমার কাছে মোটে আছে ৫০ টাকা। এই বাদে পা না নিয়া চলে যাচ্ছি। গোটা মুরগিতো দূরের কথা পা কেনারও পায়সা নাই। গরিব হওয়া কপালের দোষ।’ তিনি সিটি নিউজ ঢাকাকে এই কথা বলেন।
মুরগি কিনতে আসা একই উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের অটোচালক তাইজুল ইসলাম (৩৫) বলেন, ‘অল্প আয়ের মানুষের অবস্থা ভালো না। বাজারের যে অবস্থা ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালি মুরগির দাম গত এক মাস আগের তুলনা প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১২০-১৩০ টাকা। এক মাস আগে এক কেজি ব্রয়লার ১২০ টাকায় পাওয়া যেত। আর এখন কেজি ২৫০ টাকা আর কাটা ব্রয়লারের কেজি ৩০০ টাকা। আমাদের মতো লোকের মাংস না খেয়ে থাকা লাগবে। রোজার মাস যে কী হবে তা বলা যায় না।’
একই বাজারে জাহিদ (৪৫) নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আজ শবেবরাত, মা অসুস্থ তাই মায়ের গরুর মাংস খান না। এ জন্য আধা কেজি লেয়ারের মাংস ২২০ টাকা দিয়ে নিলাম। কী বলবেন ভাই, মুরগির পায়ের কেজি ১৬০ টাকা এবং ডানা পাখনার কেজি ১৪০ টাকা। বেঁচে থাকার উপায় নেই।’
জেলা শহরের ভাই ভাই পোল্ট্রি ফার্মের আড়তদার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মুরগির খাবারসহ বাচ্চার দাম বেশি। খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সরবরাহ কমেছে। আজকে শবেবরাত তাই চাহিদার চেয়ে সরবারহ কম থাকায় প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মুরগির প্রধান খাদ্য শামুক, ঝিনুক, লবণ ও ভুট্টার দাম বেড়ে যাওয়া খামারিরা মুরগি পালা বন্ধ করছে। এ কারণে বাজার গরম। এতে আমাদের বিক্রিও কমেছে।’
ওই মার্কেটের কাটা মাংসের দোকানদার মোখলেছার রহমান (৪৮) বলেন, ‘মুরগি কেজি প্রতি ১২০-১৩০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় কাটা মাংসের দামও কেজি প্রতি ৯০-১০০ টাকা বেড়েছে। এ জন্য ক্রেতার সংখ্যাও কমেছে। এক মাস আগে ১০০ থেকে ১৫০ কেজি মাংস বিক্রি হতো এখন সেখানে ১০০ কেজি মাংস বিক্রি হয় না। জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।’
দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে নীলফামারী বড় বাজারের আড়তদার মশিউর রহমান বলেন, ‘এক মাস আগে এক কেজি ফিডের (খাদ্য) দাম ছিল ৫৫ টাকা- আর এখন তা কিনতে হচ্ছে ৭৫ টাকায়। খামারিসহ দোকানদাররা খাদ্যের দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তাই চাহিদার চেয়ে সরবারহ কম থাকায় বাজারে লেয়ার, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির কেজিতে দাম বেড়েছে ১২০-১৩০ টাকা।’
এ বিষয়ে জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা এ টি এম এরশাদ আলম খান বলেন, ‘কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। জিনিসপত্রের দাম যাতে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে না যায়, সেদিকে আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। ইতিমধ্যে জেলার ডোমার ডিমলায় বাজার মনিটরিং করে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’