প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩, ০৮:৩৭ পিএম
বাজারে আরেক দফা বেড়েছে রডের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে টন প্রতি রডের দাম বেড়েছে চার থেকে ৬ হাজার টাকা। রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম বৃদ্ধি, ডলার সংকট, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ায় ও সরবরাহে ঘাটতিসহ নানা কারণেই বাড়ছে রডের দাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে ৪ ধরনের এমএস রড বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বা অটো কারখানাগুলোতে তৈরি রড যা ৬৫ গ্রেড বা তার বেশি, সেমি অটো কারখানাগুলোতে তৈরি ৬০ গ্রেড, সাধারণ কারখানায় তৈরি ৪০ গ্রেডের রড রয়েছে। এর বাইরে কোনো সিল বা গ্রেড ছাড়া এক ধরনের রড বাজারে বিক্রি হয়। যে রডগুলো বাংলা রড নামে পরিচিত। তবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি ৬৫ গ্রেডের উপরের রডগুলোর চাহিদা বেশি রয়েছে।
হঠাৎ রডের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমানে খুচরা ব্যবসায়ীরা বিএসআরএম ৯৬ হাজার, কেএসআরএম ৯৫ হাজার, বায়েজিদ স্টিল ৯৩ থেকে ৯৪ হাজার, একেএস স্টিল ৯৪ হাজার, জিপিএইচ ৯৫ হাজার ও অন্যান্য কোম্পানির রডের টন প্রায় এক থেকে দুই হাজার টাকা কম-বেশিতে বিক্রি করছেন। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা নিজ খরচে পরিবহন করে নিয়ে যান। সেক্ষেত্রে প্রতি টনে দাম ৫০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করেন।
এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘নির্মাণসামগ্রীর দাম দীর্ঘদিন ধরেই ঊর্ধ্বগতি। বিশেষ করেই রডের দাম আজ একরকম তো কাল অন্যরকম। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর সময় বিশ্ব বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিয়ে থাকেন। আবার কখনো ডলার সংকটের অজুহাত দেখান। ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ সংকটের কথা বলেন বাস্তবে সংকট এরকম নয়। ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের উন্নয়ণ কর্মকাণ্ডসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন নির্মাণে মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবে বিষয়টি সরকারের কর্তাব্যক্তিদের নজরে আনা প্রয়োজন। দেখা প্রয়োজন বিশ্ব বাজারের সঙ্গে দেশে বিক্রির পার্থক্য কেমন।’
নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে ফ্ল্যাটের দামও। এ প্রসঙ্গে রিহ্যাব চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি আবদুল কৈয়ূম বলেন, ‘পাগলা ঘোড়ার মতো নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে আমরা আতঙ্কে আছি। এক বছরের ব্যবধানে রডের দাম দ্বিগুণ। সিমেন্টে বস্তা প্রতি বেড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। দাম বৃদ্ধির লাগাম টানা প্রয়োজন। এর ফলে ফ্ল্যাটের দামও বাড়ছে। নির্মাণ খাতে নিয়োজিত ব্যবসায়ীরাই এর বড় ভুক্তভোগী।’ এখানে সরকারকে নজর দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, দেশে স্বয়ংক্রিয় ইস্পাত কারখানা আছে ৩০টি। সনাতন পদ্ধতির কারখানা আছে ১০০টির মতো। বছরে দেশে রডের চাহিদা আছে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টন। এ হিসেবে মাসে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টন রড দরকার হয়। রড তৈরির কাঁচামাল হলো পুরনো লোহার টুকরো। এই কাঁচামাল সরাসরি আমদানি করে প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করেন উৎপাদকরা। বাকি প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ আসে জাহাজ ভাঙা শিল্প এবং লোকাল ভাঙারি বর্জ্য থেকে।