প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩, ১২:৩৮ এএম
`আমি বাড়ি যেতে পারছি না। ১৩ মাস হয়ে গেছে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ঋণের চাপে পরিবারের কারো মুখ দেখতে পাচ্ছি না। আজ এখানে, কাল সেখানে এভাবেই কাটছে আমার দিন। এমনও দিন গেছে, না খেয়ে থেকেছি। আমার একটাই অনুরোধ আমি যেনো বাড়ি ফিরতে পারি, সেই ব্যবস্থা করে দিন। আমাকে বাড়ি ফিরতে দিন।` ভাঙ্গা কণ্ঠে এই প্রতিবেদকের নিকট এভাবেই অনুরোধ করেছেন লক্ষীপুরের বাসিন্দা মাহতাব হোসেন।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের লোভনীয় অফারে তিনটি মোটরসাইকেল অর্ডার করেছিলেন। প্রতিবেশিদের কাছে ঋণ নিয়ে ৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। মূলত, অল্প টাকায় মোটরসাইকেল কিনে বেশি টাকা বিক্রি করে লাভবান হওয়ার এই বিনিয়োগ তার।
টাকা পেমেন্টের এক মাসের মধ্যে মোটরসাইকেল তিনটি হাতে পাবার কথা থাকলেও পেরিয়েছে বহুমাস। তবে চেক পেয়েছেন তিনি। আলেশা মার্টের দেয়া চেকে ব্যাংক থেকে টাকা না পাওয়ার পর থেকেই বাড়ি ছেড়েছেন মাহতাব।
বর্তমানে রাজধানী ঢাকার রাজাবাজার এলাকায় একটি মুদি দোকানে কাজ করেন তিনি। পেটের দায় মেটাে চার মাস যাবৎ সেখানে কাজ করছেন তিনি। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে মাহতাব এসব জানান।
মাহতাব বলেন, মঞ্জুর আলম শিকদারকে বিশ্বাস করেছিলাম। মানুষের কাছ ঋণ করে টাকা তিনটি মোটর সাইকেলের টাকা দেই। লোভ করেছিলাম বাইকগুলো বিক্রি করে লাভবান হবো। কিন্তু এই লোভ আমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, আলেশা মার্ট থেকে চেক পেয়েছি। কিন্তু ব্যাংকে গেলে একাউন্ট খালি দেখায়। ওদিকে পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। বাধ্য হয়ে বাড়ি ছেড়েছি।
তিনি বলেন, দুই ঈদ কেটে গেলো। বাড়ি যেতে পারি নাই। টাকা পাচ্ছি না। ওদিকে পরিবারের লোকজনকে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে পাওনাদাররা। কী করবো আমি? এত টাকা কই পাবো?
মাহতাব বলেন, আলেশা মার্টের লোকজনের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করেছি কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তারা কোনো সমাধান দেয়নি। এখন বাধ্য হয়ে একটি মুদি দোকানে চাকুরি করছি।
তিনি বলেন, মঞ্জুর আলম লাইভে কয়েকবার টাকা দিবে বলে আমার মত অনেককে মিথ্য আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু কাউকেই টাকা দিচ্ছে না। তার হাত অনেক বড়, তাই মামলাও করছি না। জানি, মামলা করলেও লাভ হবে না। কেননা ওয়ারেন্ট থাকার পরেও তাকে গ্রেফতার করছে না। তাই মামলা করলে যা খরচ যাবে, তাই লস হবে।
মাহতাব আরও বলেন, আমার একটাই অনুরোধ আমার টাকা ফেরত দেয়া হোক। আমি যেনো বাড়ি ফিরতে পারি। ঋণ শোধ করতে পারি।
উল্লেখ্য, প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নিজেদের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে আলেশা মার্ট। এরপর চেক দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে করা হয় আরেক প্রতারণা। প্রতিষ্ঠানটির এমন প্রতারণার শিকার হয়ে ঘরছাড়া হয়েছেন অসংখ্য গ্রাহক।
এআরআই