• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মঞ্জুর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি গ্রাহকদের

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২২, ০৮:২৭ পিএম

মঞ্জুর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি গ্রাহকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদার। ইতোমধ্যেই নিজেকে দেশের অন্যতম প্রতারক হিসেবে প্রমাণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে হাজারো গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ, মানিলন্ডারিংয়ের তথ্য ও শতাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা। এরপরও তাকে আইনের আওতায় আনছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থা দিচ্ছে আলাদা আলাদা তথ্য।

কেউ কেউ বলছে মঞ্জুর আলমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু তিনি ঘুরছেন ফিরছেন, ব্যাংকে যাচ্ছেন এমনকি যাচ্ছেন মন্ত্রণালয়েও। পূর্ব ঘোষণা দিয়ে আসছেন ফেসবুক লাইভে। তবুও নাকি তাকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। যেটাকে রীতিমতো হাস্যকর বলে মনে করছেন আলেশা মার্টের প্রতারিত গ্রাহকরা। তারা বলছেন, কতিপয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্যতা এবং গোপন লেনদেনের কারণেই এমনটা হচ্ছে।

আবার কোনো কোনো সংস্থা বলছে মঞ্জুর আলমকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের বক্তব্য হচ্ছে- নজরদারি আর কতদিন। মঞ্জুর আলম দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে গ্রাহকদের সঙ্গে ‘ইদুর-বিড়াল’ খেলে যাচ্ছেন। তার প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে কিন্তু নজরদারি আর শেষ হচ্ছে না। এই নজরদারির সমাপ্তি কোথায়?

আবিদ হাসান নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া গ্রাহক বলেন, ‘বাবা-মা ও স্বজনদের কাছে টাকা নিয়ে আলেশা মার্টে বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন বাড়িতে যেতে পারছি না। স্বজনদের ফোনের জ্বালায় মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করেছি। বাবা রাগে-ক্ষোভে বাড়ি থেকে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন খেয়ে-না খেয়ে দিনাতিপাত করছি।’

আবিদ হাসান বলেন, ‘আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আলেশা মার্ট পরিস্থিতি সেই শ্রদ্ধায় ফাটল ধরাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আলেশা মার্ট নিয়ে কাজ করেছে বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে- মঞ্জুর আলম সব জায়গায় টাকা দিয়ে ম্যানেজ করছে। আমি বিশ্বাস করি, টাকা এবং ক্ষমতা কখনো আইনের ঊর্ধ্বে হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘অতিসম্প্রতি সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ায় আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। আমাদের প্রতারিত গ্রাহকদের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আবেদন থাকবে- অতিদ্রুত মঞ্জুর আলমকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। তাহলেই বেরিয়ে আসবে থলের বিড়াল। জিজ্ঞাসাবাদেই বেড়িয়ে আসবে দুই হাজার কোটি টাকা তিনি কোথায় পাচার করেছেন।’

বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, আলেশা মার্টের ব্যাংক হিসাবে দুই হাজার এক কোটি ২৮ লাখ টাকা ছিল। কিন্তু সেখান থেকে এক হাজার ৯৯৯ কোটি ২০ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। এখন উত্তোলনকৃত এই টাকার কোনো হদিস মিলছে না।

ইতোমধ্যে একাধিক সরকারি সংস্থার তদন্তে উঠে এসছে যে, মঞ্জুর আলম এতদিন গোপন লেনদেনের মাধ্যমে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। সেই সম্পর্কের কারণে এই কর্মকর্তারা তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। তাদের যোগসাজশেই এখনো আইনের আওতায় আনা হয়নি মঞ্জুর আলম শিকদারকে। এই সব কর্মকর্তার ওপর এখন নজরদারি চলছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র।

একজন পদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি এতদিন পর্যবেক্ষণ করেছি। মঞ্জুর আলমের সঙ্গে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা মঞ্জুর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। একইসঙ্গে এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

/এএল

আর্কাইভ