প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২২, ০৮:৩৭ পিএম
আলেশা মার্টের অর্থপাচারের ঘটনায় তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ ছাদেক আলীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তার স্থলে এএসপি মর্যাদার এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রোববার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে সিআইডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মোহাম্মদ ছাদেক আলীর তদন্তকালীন সময়ে বেশ কিছু অসঙ্গতি সিআইডির উর্ধ্বতন মহলের নজরে এসেছে। তার মধ্যে- অভিযুক্তের সঙ্গে গোপন যোগসাজশ, লেনদেন ও অর্থপাচারের প্রাথমিক তথ্য থাকার পরও মামলা না করার বিষয়গুলি অন্যতম। বিষয়গুলো নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিটি নিউজ ঢাকা। এই প্রতিবেদনগুলো সিআইডির উর্ধ্বতন মহলের নজরে এলে, এগুলোর সত্যতা যাচাই করে মোহাম্মদ ছাদেক আলীকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় বলে জানিয়েছে সিআইডি সূত্র।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‘নতুন অনুসন্ধান কর্মকর্তা একজন এএসপি মর্যাদার।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে অনুসন্ধান চলমান আছে, অনুসন্ধান শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাদেক আলীর সঙ্গে আলেশা মার্ট প্রধানের সম্পর্ক নিয়ে সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন। সিআইডি মনে করে, হাজার হাজার গ্রাহকের বিনিয়োগ লুটে নেয়া আলেশা মার্টের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি গ্রাহকদের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিতের বিষয়টিও তাদের মাথায় আছে।
জানা গেছে, তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাদেক আলীর সঙ্গে আলেশা মার্ট প্রধানের সম্পর্ক নিয়ে সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন। সিআইডি মনে করে, হাজার হাজার গ্রাহকের বিনিয়োগ লুটে নেয়া আলেশা মার্টের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি গ্রাহকদের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিতের বিষয়টিও তাদের মাথায় আছে।
জানা যায়, প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পাচার করেছেন আলেশা মার্ট চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদার। এই বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে এমন তথ্যই পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সেই তথ্যের ভিত্তিতে চলতি বছরের মে মাসে আলেশা মার্ট প্রধান মঞ্জুর আলম শিকদার এবং তার স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরীর সম্পদের হিসাব তলব করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই সংস্থাটি। চিঠিতে বলা হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পণ্য বিক্রয়ের নামে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০১২ এর সম্পৃক্ত অপরাধের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। অনুসন্ধানটির সুষ্ঠ তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের স্বার্থে অভিযুক্ত আলেশা মার্টের প্রধান মঞ্জুর আলম শিকদার, সাদিয়া চৌধুরী, আলেশা হোল্ডিংস লিমিটেড, আলেশা কার্ড ও আলেশা মার্ট -এর নিবন্ধিত সকল প্রকার সম্পত্তি ও মোটরযানের তথ্য প্রয়োজন।
অনুসন্ধানের তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ ছাদেক আলী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসব তথ্য চাওয়া হয়। তবে মানি লন্ডারিংয়ে সম্পৃক্ততার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেলেও অদ্যাবধি অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার মানি লন্ডারিং মামলা করা হয়নি।
অনুসন্ধানের তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ ছাদেক আলী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসব তথ্য চাওয়া হয়। তবে মানি লন্ডারিংয়ে সম্পৃক্ততার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেলেও অদ্যাবধি অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার মানি লন্ডারিং মামলা করা হয়নি। ফলে মামলা না হওয়ার পিছনে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলা নাকি আঁতাত রয়েছে - জন্ম দেয় সেই প্রশ্নের। ফলে তদন্ত কর্মকর্তার উপর থেকে আস্থা হারান আলেশা মার্টের প্রতারিত গ্রাহকরা।
এ বিষয়ে পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ ছাদেক আলীর সঙ্গে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করে সিটি নিউজ ঢাকা। মুঠোফোনে যোগাযোগ হলে আলেশা মার্ট বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি তিনি। উল্টো এই প্রতিবেদককে সিআইডি অফিসে গিয়ে দেখা করতে বলেন।
দেশের অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠার পর তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করা হয়েছিল। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছিল অভিযুক্তদের। কিন্তু আলেশা মার্ট প্রধান মঞ্জুর আলম শিকদারের ক্ষেত্রে এই নিয়মের ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।
কোনো অপরাধী ব্যক্তির চেয়ে আইনের হাত অনেক বেশি শক্তিশালী। দু-একজন অসৎ কর্মকর্তার কারণে আইন প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। তাই এখন সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ায় আশার আলো দেখছেন তারা।
কোনো অপরাধী ব্যক্তির চেয়ে আইনের হাত অনেক বেশি শক্তিশালী। দু-একজন অসৎ কর্মকর্তার কারণে আইন প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। তাই এখন সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ায় আশার আলো দেখছেন তারা।
যেখানে মাত্র ৫ লাখ টাকা প্রতারণার অভিযোগে ই-ক্যাব নেত্রী মাহফুজা আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেখানে শত শত কোটি টাকা প্রতারণা করে এবং শতাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে মঞ্জুর আলম রয়েছেন বহাল তবিয়তে। অদৃশ্য কোনো এক শক্তির বলে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি। এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে ভুক্তভোগীসহ দেশবাসীর মনে। তিনি কী তাহলে দেশের প্রচলিত আইনের ঊর্ধ্বে?
সিআইডির একটি সূত্র জানায়, মঞ্জুর আলম শিকদারকে উপযুক্ত সময়ে আইনের আওতায় আনা হবে।
আলেশা মার্টের প্রতারিত গ্রাহকরা বলছেন, কোনো অপরাধী ব্যক্তির চেয়ে আইনের হাত অনেক বেশি শক্তিশালী। দু-একজন অসৎ কর্মকর্তার কারণে আইন প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। তাই এখন সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ায় আশার আলো দেখছেন তারা।
সিআইডির একটি সূত্র জানায়, মঞ্জুর আলম শিকদারকে উপযুক্ত সময়ে আইনের আওতায় আনা হবে।
মঞ্জুর আলম শিকদারের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের যে অভিযোগ ছিল, সে বিষয়ে মামলা না হওয়ার বিষয়ে কর্মকর্তারা এখনই কিছু বলছেন না। তবে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, মঞ্জুর আলম শিকদারের বিষয়ে এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগের চেয়ে অনেক বেশি সিরিয়াস। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এআরআই