• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রতারক মঞ্জুর আলমের পাশেই প্রভাবশালীরা, গ্রাহকরা অসহায়

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২২, ০৮:৫৭ পিএম

প্রতারক মঞ্জুর আলমের পাশেই প্রভাবশালীরা, গ্রাহকরা অসহায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আলেশা মার্টের প্রতারিত গ্রাহকদের পাশে শক্তিশালী কোনো আশ্রয় দাতা নেই। যারা গ্রাহকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের হারানো পুঁজি ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারেন এমন কাউকেই পাশে পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। গ্রাহকরা বলছেন, তাদের শত শত কোটি টাকা লুট করে নিয়ে আলেশা মার্টপ্রধান মঞ্জুর আলম শিকদার তাদের সঙ্গে একের পর এক প্রতারণা করে আসছেন। বিনিয়োগ ফেরত দেয়ার বিষয়ে তিনি বার বার আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ করছেন না। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে টালবাহানা করছেন।

গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থেকে আলেশা মার্টপ্রধান নিজেকে গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হচ্ছেন। তারা জানান, একদিন রাস্তায় নেমে আন্দোলনের সময় সেই সব প্রভাবশালীদেরও মুখোশ খুলে দেয়া হবে।

মামলা করি নাই, জানি মামলা করলে কোনো লাভ হবে না। উল্টা আরও টাকা নষ্ট হবে। এতদিনে প্রায় ২০০ এর বেশি ওয়ারেন্ট হয়েছে মঞ্জুর আলম শিকদারের বিরুদ্ধে। কিন্তু গ্রেফতার হচ্ছেন না তিনি। জানা হয়ে গেছে, তার সঙ্গে প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ফলে আইনি ব্যবস্থা নিয়েও কিছু হবে না। - প্রতারিত গ্রাহক আরাফাত

কথা হয় ইয়াসিন আরাফাত নামক প্রতারিত এক গ্রাহকের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুইটা বাইকের অর্ডার দিয়েছিলাম ভিন্ন দুইটি অর্ডারে। বাইক তো পেলামই না। দিলো চেক। কিন্তু ব্যাংকে গেলে টাকা না পেয়ে চেক ডিজঅনার করি। মামলা করি নাই, জানি মামলা করলে কোনো লাভ হবে না। উল্টা আরও টাকা নষ্ট হবে। এতদিনে প্রায় ২০০ এর বেশি ওয়ারেন্ট হয়েছে মঞ্জুর আলম শিকদারের বিরুদ্ধে। কিন্তু গ্রেফতার হচ্ছেন না তিনি। জানা হয়ে গেছে, তার সঙ্গে প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ফলে আইনি ব্যবস্থা নিয়েও কিছু হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমাদের একটাই উপায়। তা হলো- রাস্তায় নামতে হবে। মানুষকে নিঃস্ব করা মঞ্জুর আলমকে গ্রেফতার না করা অবধি সেই আন্দোলন থামানো যাবে না। আর আমরা এটাও প্রকাশ করবো, যাদের ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যাচ্ছেন মঞ্জুর আলম। আর শিগগিরই আমরা আন্দোলনেও নামছি। এই ঠকবাজ লোককে আর ছাড় দেয়া যাবে না।’

গ্রাহকদের অভিযোগ, আলেশা মার্ট প্রধানের বিরুদ্ধে শক্তিশালী যেসব উইং ব্যবস্থা নিতে পারে বা যাদের ব্যবস্থা নেয়ার মতো শক্তিশালী অবস্থান আছে তারা সবাই ম্যানেজ হয়ে গেছেন। এ কারণে মঞ্জুর আলম শিকদারকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। তাকে একবারের জন্য হলেও আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।

তাদের অভিযোগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনও ম্যানেজ হয়ে গেছে। আলেশা মার্ট প্রধানের বিরুদ্ধে এতগুলো গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার পরও তাকে গ্রেফতার না করায় সেটাই মনে হচ্ছে।

মাত্র একটি ওয়ারেন্টেই ইভ্যালির রাসেল ও শামীমাকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব। রাসেল এখনো জেলে রয়েছেন। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খুব তৎপর দেখা গিয়েছিল। কিন্তু মঞ্জুর আলমের বিষয়ে তাদের পদক্ষেপ আমাদের হতাশ করেছে। আমাদের  বুঝার বাকি নাই। তারপরও আমরা আইনের ওপর ভরসা রাখি। আইন তাকে যথাযথ শাস্তি দিবে। - প্রতারিত গ্রাহক সালমান

সালমান হোসেন রনক নামক এক গ্রাহক বলেন, ‘এত ওয়ারেন্ট তারপরও শিকদার সাহেবকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। কেনো হচ্ছে না তা আমাদের মতো প্রতারিত গ্রাহকদের আর জানার বাকি নাই। তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের উচ্চপদস্থ সবাইকে ম্যানেজ করে নিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন মাত্র একটি ওয়ারেন্টেই ইভ্যালির রাসেল ও শামীমাকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব। রাসেল এখনো জেলে রয়েছেন। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খুব তৎপর দেখা গিয়েছিল। কিন্তু মঞ্জুর আলমের বিষয়ে তাদের পদক্ষেপ আমাদের হতাশ করেছে। আমাদের  বুঝার বাকি নাই। তারপরও আমরা আইনের ওপর ভরসা রাখি। আইন তাকে যথাযথ শাস্তি দিবে।’

গ্রাহকরা জানান, আলেশা মার্ট মানুষের বিনিয়োগ করা টাকা হাতে নিয়ে তাদেরকে পথে বসিয়েছেন। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাদের এখন। তাই রাস্তায় নেমে আন্দোলনের মাধ্যমে আলেশা মার্টপ্রধানকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

গ্রাহকদের আক্ষেপ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ভোক্তা অধিকার যে ধরনের ভূমিকা রাখার কথা তা তারা দেখতে পাচ্ছেন না। তাদের দাবি, শক্তিশালী এসব উইংকে আলেশা মার্ট প্রধান ম্যানেজ করছেন। এসব কারণে তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

একইসঙ্গে গ্রাহকরা মঞ্জুর আলম শিকদারকে গ্রেফতার করে তাদের বিনিয়োগ ফেরতের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

বাইকের বদলে চেক দেয় আলেশা মার্ট কিন্তু অ্যাকাউন্টে টাকা না রেখেই। চেক ব্যাংক থেকে ডিজঅনার করে। এরপর ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করি। কিন্তু আশানুরুপ এখনো কোনো ফল পাইনি। এ ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকারের যে ধরনের ভূমিকা রাখার কথা, তা তারা করছেন না। - প্রতারিত গ্রাহক সাকিব

সাকিব আহমেদ নামক এক গ্রাহক জানান, হোন্ডা হরনেট ১৫৫ সিসির বাইক ছিল আমার। তাদের বিজ্ঞাপনে এফজেড ভার্সন থ্রি বাইকে বিশাল ছাড় দেখতে পাই। তাই ব্যবহৃত বাইকটি বিক্রি করে সেই টাকা ও নিজের কিছু টাকা মিলিয়ে আলেশা মার্টে এফজেড এর অর্ডার দেই। বাইক তো পেলামই না। হারালাম নিজের ব্যবহৃত বাইকটাও।

সাকিব বলেন, বাইকের বদলে চেক দেয় আলেশা মার্ট কিন্তু অ্যাকাউন্টে টাকা না রেখেই। চেক ব্যাংক থেকে ডিজঅনার করে। এরপর ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করি। কিন্তু আশানুরুপ এখনো কোনো ফল পাইনি। এ ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকারের যে ধরনের ভূমিকা রাখার কথা, তা তারা করছেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন অপেক্ষা করছি, যদি ভাগ্যক্রমে টাকা ফেরত পাই। আমার দাবি মঞ্জুর আলমকে আইনরে আওতায় এনে আমাদের মতো প্রতারিতদের টাকা ফেরত দেয়া হোক।’

 

এআরআই

আর্কাইভ