• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
অভিযোগ যাচ্ছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে

আলেশা মার্টের ব্যাপারে উদাসীন দায়িত্বশীলরা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২২, ০৯:২০ পিএম

আলেশা মার্টের ব্যাপারে উদাসীন দায়িত্বশীলরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আহসান হাবিব, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগে কাজ করেন। সেই সুবাদে সব সময় তার কাছে বড় অংকের নগদ ক্যাশ থাকে। আলেশা মার্টের বিশাল ছাড়ের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে লোভে পরে যান। বিনিয়োগ করেন নিজের সঞ্চয়। প্রথম বিনিয়োগে ডেলিভারি পান একটি মোটরসাইকেল। লোভ আরও বেড়ে যায় তার।

আলেশা মার্টের পরবর্তী ক্যাম্পেইনে আরও বড় বিনিয়োগ করেন আহসান হাবিব। নিজের সঞ্চয়সহ অফিসের ক্যাশ থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা তুলে দেন আলেশা মার্টের হাতে। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি প্রথম ডেলিভারিটা একটা ফাঁদ ছিল! পরবর্তীতে তিনি আর পাননি কোনো পণ্য, পাননি বিনিয়োগকৃত টাকাও।

অফিসে চাকরি বাঁচাতে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে দেনা করেছেন আহসান। এখন পারছেন না তাদের দেনা পরিশোধ করতে। অনেকটা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আত্মীয়দের থেকে। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। আলেশা মার্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিয়েও হচ্ছে না কোনো কাজ।

এই গল্প শুধু একা আহসান হাবিবের নয়। এই গল্পটা আলেশা মার্টের হাজারো প্রতারিত গ্রাহকের। কারও গল্প হয়তো একটু সহজ, তবে সিংহভাগের গল্প খুবই বেদনাদায়ক! আলেশা মার্ট প্রধানের প্রতারণায় নিঃস্বপ্রায় গ্রাহকরা আত্মহননের মতো চরম সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিচ্ছেন!

কিন্তু তবুও টনক নড়ছে না সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের। অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত উইংগুলো যতটা সরব ছিল, আলেশা মার্টের ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই নিরব। তাদের এই উদাসীনতা অন্যরকম বার্তা দিচ্ছে প্রতারিত গ্রাহকদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে আলেশা মার্ট প্রধানের সখ্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার ফলে শতাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা আলেশা মার্ট প্রধানকে এখনও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না।

গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা মেরে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মঞ্জুর আলম শিকদার। আলেশা মার্টের ভিতরের কর্মকর্তারা দম্ভভরে বাইরে বলে বেড়াচ্ছেন তাদের কিছুই করতে পারবে না কেউ। তাহলে কী গোপন লেনদেনের কাছে আইনের হাত ছোট হয়ে যাচ্ছে? অবশ্যই নয়।

শুধু তাই নয়, গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা মেরে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মঞ্জুর আলম শিকদার। আলেশা মার্টের ভিতরের কর্মকর্তারা দম্ভভরে বাইরে বলে বেড়াচ্ছেন তাদের কিছুই করতে পারবে না কেউ। তাহলে কী গোপন লেনদেনের কাছে আইনের হাত ছোট হয়ে যাচ্ছে? অবশ্যই নয়।

আলেশা মার্টের বিষয়টি ছায়া তদন্ত করছে সরকারের একাধিক সংস্থা। তারা ইতোমধ্যেই আলেশা মার্ট চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদারকে শেল্টার দেয়া কতিপয় দায়িত্বশীল কর্মকর্তার নাম পেয়েছে। সিটি নিউজ ঢাকাকে একজন পদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব কর্মকর্তাদের নজরে রাখা হয়েছে। উপযুক্ত সময়ে বিষয়টি সামনে আনা হবে।

আলেশা মার্টের একাধিক গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংশ্লিষ্টদের এতো উদাসীনতা, এতো দায়িত্বহীনতার পরও তারা দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যে সমস্ত দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অবৈধ সুবিধা নিয়ে মঞ্জুর আলম শিকদারকে শেল্টার দিচ্ছে অতিদ্রুত তাদের মুখোশ উন্মোচন করে আইনের আওতায় আনার দাবি তাদের। একইসঙ্গে বরাবরের মতো আলেশা মার্টে পরিচালনা পর্ষদ বসিয়ে প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের দাবি তাদের।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এই ব্যক্তি ই-কমার্স ব্যবসার নামে লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তার বিরুদ্ধে শতাধিক ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। তবুও তাকে আইনের আওতায় না আনায় সংশ্লিষ্টদের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।’

 

এসএএস

আর্কাইভ