• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

আলেশা মার্টের সম্পত্তি ক্রোক করার দাবি গ্রাহকদের

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২২, ০২:৫৪ এএম

আলেশা মার্টের সম্পত্তি ক্রোক করার দাবি গ্রাহকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির মতো এবার আলেশা মার্ট প্রধান মঞ্জুর আলম শিকদারের সম্পত্তি ক্রোকের দাবি তুলেছেন প্রতারিত গ্রাহকরা। তাদের দাবি- মঞ্জুর আলমের সম্পত্তি ক্রোক করে প্রতিষ্ঠানটি কর্তৃক প্রতারিত গ্রাহকদের পাওনা দ্রুত পরিশোধ করা হোক।

জানা যায়, মেহেদী হাসান খান নামক এক গ্রাহকের করা চেক প্রতারণার মামলায় গত ২৭ অক্টোবর ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত। আগামী ১৬ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়।

২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি মেহেদী হাসান খান ইভ্যালি থেকে তিনটি মোটরসাইকেল, একটি মোবাইল ফোন ও কিছু গিফট কার্ড অর্ডার করেন এবং এ বাবদ আট লাখ ৫৪ হাজার টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। নির্দিষ্ট ৪৫ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহের কথা থাকলেও আসামিরা তা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হন। এরপর ৯ মার্চ ইভ্যালি পণ্যের সমমূল্যের একটা চেক প্রদান করে। ৫ জুলাই চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে তা ডিজঅনার হয়। তারপর ২৯ নভেম্বর মামলা করেন মেহেদী।

এ মামলায় আদালত আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন। তবে তারা উপস্থিত না হওয়ায় চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গ্রেফতারি পরোয়ানার পর তিন ধার্য তারিখে এ বিষয়ে প্রতিবেদন না আসায় আদালত তাদের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন।

আদালতে এই নির্দেশের পর মূলত দাবি তোলেন আলেশা মার্টের গ্রাহকরা। তারা বলছেন, গ্রাহকদের মামলায় ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ ও ধামাকার মালিকরা গ্রেফতার হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্ষদ করে দেয়া হয়েছে। তাদের সম্পত্তি ক্রোক করে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা হচ্ছে। আলেশা মার্টের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম দাবি তাদের। গ্রাহকদের অভিযোগ, পেছনে থেকে একটি মহল আলেশা মার্কটের সাপোর্ট দিচ্ছে।

‘আমরা ইভ্যালির ক্ষেত্রে দেখেছি, কত দ্রুত চেয়ারম্যান ও এমডিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ই-অরেঞ্জ, ধামাকা এবং কিউকমের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। কিন্তু শতাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও  আলেশা মার্ট প্রধানকে কেনো আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না- তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

এক্ষেত্রে নীতি-নির্ধারক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আলেশা মার্টের নিঃস্বপ্রায় গ্রাহকরা। তারা বলছেন, অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ নীতি-নির্ধারকদের যে পরিমাণ সোচ্চার থাকতে দেখা গেছে, আলেশা মার্টের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ঠিক ততটাই নির্বিকার!

ফজলুল কাদের জসি নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘আমরা ইভ্যালির ক্ষেত্রে দেখেছি, কত দ্রুত চেয়ারম্যান ও এমডিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ই-অরেঞ্জ, ধামাকা এবং কিউকমের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। কিন্তু শতাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও  আলেশা মার্ট প্রধানকে কেনো আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না- তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

আমরা আশঙ্কা করছি এখানে কোনো গোপন লেনদেনের ব্যাপার আছে। না হলে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা এই বিষয়টা নিয়ে এতো উদাসীন কেনো?

তিনি বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি এখানে কোনো গোপন লেনদেনের ব্যাপার আছে। না হলে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা এই বিষয়টা নিয়ে এতো উদাসীন কেনো? তারা ইচ্ছা করলেই মঞ্জুর আলম শিকদারকে আইনের আওতায় এনে গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। আমরা আশা করছি অতিদ্রুত দায়িত্বপ্রাপ্তদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।’

ফজলুল কাদের বলেন, ‘আমাদের দাবি ইভ্যালিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে আলেশা মার্ট প্রধানের সমস্ত সম্পত্তি ক্রোক করে আমাদের পাওনা ফিরিয়ে দেয়া হোক। অন্যথায়, সামনে যে কোনো পরিস্থিতির দায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিতে হবে।’

ছগীর হোসেন নামে অন্য এক গ্রাহক বলেন, ‘আমরা আলেশা মার্টের গ্রাহকরা কষ্টার্জিত পাওনা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমাদের আর্তনাদে আকাশ-বাতাশ ভারী হচ্ছে। আত্মীয়-স্বজন ও পাওনাদারদের কেউ কেউ আত্মহত্যা করারও সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে আমাদের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর অভিযান চালাচ্ছে ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের ডেরায়! আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের কোনো গরজ নেই!’ 

আলেশা মার্ট বিষয়ে ভোক্তার অধিকারের গতিবিধি খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে যতটা না তারা ভোক্তার প্রতিনিধি, তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত রয়েছে আলেশা মার্ট প্রধানের জন্য। এমন যদি হয় ভোক্তা অধিদফতরের কর্তাদের আচরণ, তাহলে তা দিয়ে গ্রাহকদের অধিকার কতটুকু রক্ষা হবে সে নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ আছে। 

তিনি বলেন, ‘আলেশা মার্ট বিষয়ে ভোক্তার অধিকারের গতিবিধি খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে যতটা না তারা ভোক্তার প্রতিনিধি, তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত রয়েছে আলেশা মার্ট প্রধানের জন্য। এমন যদি হয় ভোক্তা অধিদফতরের কর্তাদের আচরণ, তাহলে তা দিয়ে গ্রাহকদের অধিকার কতটুকু রক্ষা হবে সে নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ আছে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুমিকা শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ। এত পরোয়ানা থাকার পরও তারা মঞ্জুর আলমকে গ্রেফতার করছে না।’

ছগীর হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি সরকারের হোমরা-চোমরারা মঞ্জুর আলমের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে তাকে অনৈতিকভাবে সহযোগিতা করছেন। এখন আমাদের একটাই চাওয়া- আলেশা মার্ট প্রধানের সব সম্পত্তি ক্রোক করে প্রতারিত গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করা হোক।’

এআরআই

অর্থ ও বাণিজ্য সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ