প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২২, ০২:২৩ এএম
এবার দেশের সব গণমাধ্যমকে পাশে দাঁড়ানোর আকুতি জানিয়েছেন আলেশা মার্টের নিঃস্ব গ্রাহকরা। মঞ্জুর আলম শিকদারের প্রতারণা থেকে রেহাই পেতে এই অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। আলেশা মার্টের গ্রাহকরা লোভের ফাঁদে পড়ে এখন অসহায়। তারা আইনি আশ্রয় নিলেও প্রতারণার অভিযোগে আলেশা মার্ট প্রধানকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। গ্রাহকরা বলছেন, মঞ্জুর আলম শিকদার ও তার স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরীকে গ্রেফতারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নীরবতাও তাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে। তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও তাদের গ্রেফতার না করার বিষয়টি রহস্যের সৃষ্টি করেছে। তাই গ্রাহকরা এই মুহূর্তে সব গণমাধ্যমকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানান।
প্রতারিত নিঃস্ব গ্রাহকরা মনে করেন, গণমাধ্যম একটি শক্তিশালী মাধ্যম। গণমাধ্যম তাদের পাশে দাঁড়ালে এই প্রতারক দম্পতিকে আইনের আওতায় আনতে সহজ হবে। তারা দাবি করেন, তাদের গ্রাহক হয়রানির ব্যাপারগুলো নিয়ে একযোগে গণমাধ্যমগুলো প্রতিবেদন করলে সংশ্লিষ্টদের টনক নড়বে। এতে করে মঞ্জুর-সাদিয়া দম্পতির গ্রেফতার ত্বরান্বিত হতে পারে। প্রতারিত গ্রাহকরা বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমেই অবশ্য আলেশা মার্টের অসঙ্গতি তুলে ধরে তাদের চোখ খুলে দিয়েছে। গণমাধ্যমের বদৌলতে তারা আলেশা মার্টের প্রতারণা-চতুরতার বাণিজ্যের বিষয়টি জানতে পারে। কিন্তু ততদিনে তারা বিনিয়োগ করে ফতুর হয়েছেন।
গ্রাহকরা বলছেন, তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এ অবস্থায় অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেও আত্মহুতির হুমকি দিচ্ছেন। আলেশা মার্টের লোভনীয় অফারের ফাঁদে পড়ে ঋণ করে মোটর সাইকেল কেনার জন্য বিনিয়োগ করেছেন। মোটরসাইকেল তো পাননি- এখন বিনিয়োগ করা টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকারসহ আইনি আশ্রয় নিলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। আলেশা মার্ট প্রধান একের পর এক তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিবেন বলে টালবাহানা করে আসছেন।
গ্রাহকদের দাবি, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাদের অনেকের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত নিলেও সেখান থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। কয়েকজন গ্রাহক সিআইডির একজন কর্মকর্তার নাম বলেছেন। তারা ওই কর্মকর্তাকে অনেক তথ্য সরবরাহ করেছেন। যার নামের অ্যাদ্যক্ষর ‘স’। সিআইডির পক্ষ থেকে যে ধরনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ আশা করেছিলেন গ্রাহকরা সেক্ষেত্রেও তারা হতাশ হয়েছেন।
এদিকে গণমাধ্যগুলোকে পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে সুমন শিকদার নামে ভুক্তভোগী এক গ্রাহক বলেন, ‘আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। মঞ্জুর আলম একের পর এক প্রতারণা করেছেন। কিছুতেই তার প্রতারণা থেকে মুক্তি পাচ্ছি না। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকটও গেছি। কিন্তু আশানুরূপ ফল পাইনি। তার বিরুদ্ধে এত গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। এর পেছনে তো অবশ্যই অন্য কিছু রয়েছে। এই প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমাদের আর অন্য কোনো পন্থা নেই। একটা পন্থাই বাকি আছে সেটা হলো গণমাধ্যমগুলো যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায়।’
তিনি বলেন, ‘দেশে ই-কমার্সের নামে প্রতারণার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠানই সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু গণমাধ্যম সে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণার মুখোঁশ উন্মোচন করে দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে। এবার আমাদের অনুরোধ যেন গণমাধ্যমগুলো আমাদের অভিযোগ আর আলেশা মার্টের প্রতারণা নিয়ে প্রতিবেদন করে। আমাদের বিশ্বাস গণমাধ্যম আমাদের পাশে থাকলে আমরা ন্যায্য বিচার পাবো।’
একইভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন আরেক ভুক্তভোগী গ্রাহক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরুপায় হয়ে গেছি। গণমাধ্যমকে আমাদের পাশে প্রয়োজন। গণমাধ্যম আমাদের পাশে থাকলে আমরা আলেশা মার্ট থেকে রেহাই পাবো। আমরা চাচ্ছি আমাদের সঙ্গে আলেশা মার্ট যেভাবে প্রতারণা করেছে তা গণমাধ্যমগুলোতে উঠে আসা প্রয়োজন। গণমাধ্যমে উঠে আসলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টনক নড়বে। কেননা মঞ্জুর আলম ও তার স্ত্রী সাদিয়ার বিরুদ্ধে অসংখ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে তবু তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। এসব গণমাধ্যমে উঠে আসলে তাদের গ্রেফতার করতে উপর মহল থেকে চাপ আসবে। ফলে আমরা আমাদের ন্যায় বিচার পাবো।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুরোধ, অসংখ্য গ্রাহক আলেশা মার্টের প্রতারণায় নিঃস্ব হয়েছেন। আমরা আমাদের বিনিয়োগের টাকা পাচ্ছি না। ওদিকে মঞ্জুর আলমরাও শাস্তি পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় আমাদের একমাত্র ভরসা গণমাধ্যম। আমাদের অনুরোধ গণমাধ্যমগুলো যেনো আমাদের পাশে দাঁড়ায়।’
গ্রাহকদের এই দাবির বিষয়ে কথা হয় বার্তা সংস্থা রয়টার্সে কর্মরত বাংলাদেশি এক সাংবাদিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম যে প্রতারিত গ্রাহকদের পক্ষে কথা বলেন না, তা কিন্তু না। প্রতিনিয়তই এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রচার হতে দেখি। কিন্তু এখানে বলতে হবে, সে সংবাদগুলোর প্রভাব নিয়ে। সংবাদ প্রচারের পরও কেনো তার প্রভাব পড়ছে না, সে বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। এখানে হয়তো পলিসি মেকারদের কোনো প্রভাব রয়েছে তাই কার্যকরি পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।’
গ্রাহকদের দাবির সঙ্গে তিনি একাত্মতা জানিয়ে বলেন, ‘গ্রাহকদের পাশে আরও দৃঢ়ভাবে গণমাধ্যমের দাঁড়ানো প্রয়োজন। কেননা গণমাধ্যম রাষ্ট্রের খুঁটিগুলোর মধ্যে একটি। এক্ষেত্রে আমি মনে করি, বিষয়টি নিয়ে কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করা দরকার। একইসঙ্গে গ্রাহকদের অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই করে তার উপর নির্ভর করে প্রতিবেদন করলে হয়তো তা ইমফ্যাক্টফুল হবে।’
এআরআই