• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

পরিচালনা পর্ষদ চান আলেশা মার্ট গ্রাহকরা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২২, ০১:২১ এএম

পরিচালনা পর্ষদ চান আলেশা মার্ট গ্রাহকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আর মঞ্জুর আলম শিকদার ও সাদিয়া চৌধুরীতে আস্থা নয়, এবার পরিচালনা পর্ষদ চান আলেশা মার্টের প্রতারণায় নিঃস্ব গ্রাহকরা। তারা বলেন, ‘আলেশা মার্ট প্রধান মঞ্জুর আলমের ওপর আমরা যথেষ্ট আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে প্রতারণার পর প্রতারণা করে গেছেন। সর্বশেষ তিনি পাওনা ফেরতের নামে যে তালিকা দিয়েছেন সেটাও একটা অভিনব প্রতারণা। এদিকে এখনো আড়ালে রয়েছেন আলেশা মার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিয়া চৌধুরী। এখন আমরা আর তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছি না। 

জানা যায়, অতি সম্প্রতি গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের নামে নতুন এক প্রতারণার অবতারণা করেন মঞ্জুর আলম শিকদার। কিছু ভুয়া অর্ডার আইডি ও তার নিজের লোকদের সমন্বয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করেন তিনি। সেখানে মানা হয়নি কোনো সিরিয়াল। যেখানে সাধারণ গ্রাহকদের লেশমাত্র ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

বিভিন্ন সময়ে তিনি গ্রাহকদের আন্দোলন করা থেকে বিরত রাখতে চেক দিয়েছেন কিন্তু সে চেকগুলো ডিজঅনার হয়েছে। সম্প্রতি যে তালিকা দিয়েছেন তা পুরোপুরি পরিকল্পনা মাফিক। - দাবি গ্রাহকদের

ভুক্তভোগীদের দাবি, তাদের কারো অর্ডার নম্বরই প্রকাশ করা হয়নি তালিকায়। এমনকি তালিকায় ছিল না সিরিয়াল মেনটেইন। মঞ্জুর আলম আবারো তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি গ্রাহকদের আন্দোলন করা থেকে বিরত রাখতে চেক দিয়েছেন কিন্তু সে চেকগুলো ডিজঅনার হয়েছে। সম্প্রতি যে তালিকা দিয়েছেন তা পুরোপুরি পরিকল্পনা মাফিক।

গত ১৪ অক্টোবর দিবাগত রাত ২টার দিকে আলেশা মার্টের ফেসবুক পেইজে পাওনাদারদের একটি তালিকা দেন মঞ্জুর আলম শিকদার। অসামঞ্জস্যপূর্ণ তালিকা দেখে তাৎক্ষণিক ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান প্রতারিত গ্রাহকরা। এরপর অবশ্য নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আবারো ফেসবুক লাইভে আসেন মঞ্জুর আলম শিকদার। লাইভে তিনি দাবি করেন এই তালিকার পেছনে ছোট অর্ডারগুলোকে প্রধান্য দেয়া হয়েছে। সে কারণে তালিকা থেকে অনেকের অর্ডার নম্বর বাদ গেছে। কিন্তু ছোট অর্ডার স্বত্বেও তালিকায় জায়গা হয়নি অসংখ্য গ্রাহকের। যেখানে তালিকায় তাদের অর্ডারের সিরিয়ালের আগে পরে থাকা কিছু অর্ডার রয়েছে। সেখানে তাদের অর্ডার নম্বর না থাকায় একে নতুন প্রতরণা বলছেন গ্রাহকরা।

গ্রাহকদের দাবি, এর আগেও মঞ্জুর আলম এ ধরণের অভিনব প্রতারণা করেছেন। সেখানে একই টাকার বান্ডিলের ছবি তুলে অনেককে দিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করিয়েছেন। এমনকি টাকা পেয়ে পোস্ট করাদের মাঝে আলেশা মার্টের এক কর্মীকেও পেয়েছেন তারা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, প্রতিযোগীতা কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ই-ক্যাব ও গ্রাহক প্রতিনিধিসহ ন্যূনতম একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হোক। আর এই পর্ষদকে আলেশা মার্টের সার্ভারে প্রবেশাধিকার দেয়া হোক।

মঞ্জুর আলমের এ ধরনের প্রতারণায় হতাশ গ্রাহকরা। আলেশা মার্টের প্রতি আস্থা হারিয়েছেন বলেও জানান তারা। তাদের দাবি, গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে একটি পরিচলানা পর্ষদ গঠন করা হোক।

ভুক্তভোগীরা চাচ্ছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, প্রতিযোগীতা কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ই-ক্যাব ও গ্রাহক প্রতিনিধিসহ ন্যূনতম একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হোক। আর এই পর্ষদকে আলেশা মার্টের সার্ভারে প্রবেশাধিকার দেয়া হোক। তাহলে তারা নিরপেক্ষভাবে গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দিতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন প্রতারিত গ্রাহকরা।

 পরিচালনা পর্ষদ গঠন নিয়ে প্রস্তাবটি আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। গ্রাহকদের এ প্রস্তাব যুক্তিসঙ্গত। প্রস্তাবটি আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিকট তুলে ধরবো।- শমী কায়সার

গ্রাহকদের এ দাবির বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পরিচালনা পর্ষদ গঠন নিয়ে প্রস্তাবটি আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। গ্রাহকদের এ প্রস্তাব যুক্তিসঙ্গত। প্রস্তাবটি আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিকট তুলে ধরবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আলেশা মার্ট তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে গ্রাহকদের এমন দাবিও আমাদের নজরে এসেছে। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আলেশা মার্টের তালিকা প্রণয়নে অভিনব প্রতারণা ও গ্রাহকদের দাবির বিষয়ে কথা হয় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যেহেতু অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পদে পদে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। সে ক্ষেত্রে গ্রাহকদের দাবি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। একটা বিষয় গ্রাহকরা বারবার প্রতারণার শিকার হয়েছে। আর এতে করে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতি ভুক্তভোগীরা আস্থা হারিয়েছেন। এখন তাদের একটা আস্থারস্থল প্রয়োজন। সুতরং আমি মনে করি, গ্রাহকদের এই দাবির বিষয়ে ভাববার সময় হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের।’

এই সকল বিষয়ে আলেশা মার্ট প্রধান মঞ্জুর আলম শিকদার ও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিয়া চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে সিটি নিউজ ঢাকা। কিন্তু তাদের কাউকেই ফোন কলে পাওয়া যায়নি। এমনকি তাদের নিকট এই সংক্রান্ত তথ্য জানতে এসএমএস বার্তা পাঠানো হলেও উত্তর মেলেনি।

 

এআরআই

অর্থ ও বাণিজ্য সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ