• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ই-কমার্সের আড়ালে প্রতারণা

মঞ্জুর-সাদিয়া দম্পতিকে গ্রেফতারের দাবি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২২, ০৩:৪১ এএম

মঞ্জুর-সাদিয়া দম্পতিকে গ্রেফতারের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ব্যক্তি বিশেষে অনেকেই আলোচিত সমালোচিত হতেই পারেন। কিন্ত ঘরে বাইরে অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী দুজনই যখন আলোচনা সমালোচনায় আসে তখনই সবার দৃষ্টি যায় সেই দিকে। এই হিসেবে এখন দেশের আলোচিত দম্পতি মঞ্জুর আলম শিকদার ও তার স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরী।

তারা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন মানুষের শত শত কোটি টাকা। এতেও দোষের কিছু ছিলনা- যদি তারা আমানতকারীদের নিঃস্ব করে না দিতেন। তাদের বাকপটুতার বটিকায় মুগ্ধ হয়ে হাজার হাজার মানুষের জীবন এখন বিপন্ন।

এখানেই শেষ নয় চাপের মুখে পড়ে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে গিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে করেছেন চেক প্রতারণা। অনেক গ্রাহকই প্রতারিত হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকেই করেছেন মামলা। অনেকেই গিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের নামে জারি হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা।

মঞ্জুর আলম শিকদার। চেয়ারম্যান, আলেশা মার্ট। 

অভিযোগ রয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যোগসাজশে তারা লোক দেখানো আত্মগোপনে আছেন। আবার তারা মাঝে মাঝে ফেসবুকে লাইভ করে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টারও কমতি করছেন না। পুলিশ বলছে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা যখন ঘোষণা দিয়ে লাইভে আসছেন। তখন কি তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাইবার ইউনিট প্রুফ জ্যাকেট পরে আসছেন?

রহস্য আরো একটি জায়গায়, সেটা হলো এই যে, মঞ্জুর আলম লাইভে আসলেও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিয়া চৌধুরী কিন্তু অন্তপুরবাসিনী হয়ে বসে আছেন।

আমার ক্যারিয়ারের এত বড় ক্ষতি করে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন মঞ্জুর আলম ও তার স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরী। আমার মত আরো অনেকের জীবন ধ্বংসের খলনায়ক তারা। বিভিন্ন গ্রুপে দেখেছি- তাদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। কিন্তু গ্রেফতার হচ্ছেন না তারা।- ভুক্তভোগী গ্রাহক

এসব কারনে গ্রাহকদের বাড়ছে শঙ্কা। অনেকেই বলছেন তারা গ্রেফতার হবেন তো? তবে গ্রাহকদের দাবি, এই দম্পতিকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হোক।

আশিক আদনান নামের এক গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় সিটি নিউজ ঢাকার। তিনি জানান, ওয়ার্ল্ড ভিশন নামক এক সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে আলেশা মার্টে ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন। একটি মোটরসাইকেলের স্বপ্ন পূরণের জন্য এ বিনিয়োগ করেন তিনি। 

আদনান বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থী। আলেশা মার্টে ছাড় দেখে গত জুনে মোটরসাইকেল কেনার জন্য বিনিয়োগ করি। ওয়ার্ল্ড ভিশন থেকে ঋণ নেই। ভেবেছিলাম মোটরসাইকেল হাতে পেলে পড়াশোনার ফাঁকে রাইড শেয়ার করে ঋণের টাকা শোধ করবো। টাকা পেমেন্টের ৪৫ দিন পর ডেলিভারি দেয়ার কথা ছিল। তাই প্রথম মাসে টিউশন ফির টাকা দিয়ে কিস্তি দেই। কিন্তু ১৬ মাস পার হলেও এখনো পাইনি মোটরসাইকেল কিংবা বিনিয়োগের টাকা। বেশ কয়েকবার আলেশা মার্ট অফিসে গেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। চেক ও পাইনি। বর্তমানে টিউশন ফির টাকা দিয়ে ঋণের টাকা শোধ করছি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশনও করতে পারছি না। আমার পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে। ইতোমধ্যেই কয়েকটা সেমিস্টার পিছিয়ে গেছি।’

আক্ষেপ জানিয়ে আদনান বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারের এত বড় ক্ষতি করে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন মঞ্জুর আলম ও তার স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরী। আমার মত আরো অনেকের জীবন ধ্বংসের খলনায়ক তারা। বিভিন্ন গ্রুপে দেখেছি- তাদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। কিন্তু গ্রেফতার হচ্ছেন না তারা। কেনো হচ্ছেন না, তা আমার জানা নেই। আমার দাবি, তাদের মত প্রতারকদের গ্রেফতার আইনের আওতায় আনা হোক। একইসঙ্গে গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দেয়া হোক।’

সাদিয়া চৌধুরী। ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আলেশা মার্ট। প্রতারণার অভিযোগে তার বিরুদ্ধেও একাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। 

ওয়ালি উল্লাহ ওয়ালি নামক আরেক গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় সিটি নিউজ ঢাকার। তিনি জানান, দুইটি মোটরসাইকেল কেনার জন্য ২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। পণ্য ডেলিভারি না পেলেও চেক পেয়েছেন। তবে সেই চেক ব্যাংকে গেলে ডিজঅনার হয়।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণার দায়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু মঞ্জুর আলম ও সাদিয়া চৌধুরী দম্পতি কেনো গ্রেফতার হচ্ছেন না তা জানা নেই। আমি চাই তাদের দ্রুত গ্রেফতার করা হোক। না হলে সাধারণ মানুষ আইনের উপর আস্থা হারাবে। - ভুক্তভোগী গ্রাহক

ওয়ালি বলেন, ‘আমি বেসরকারি চাকুরি করি। বিয়ের জন্য টাকা জমাচ্ছিলাম। আলেশা মার্টে অফার দেখে দুইটি বাইকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন অর্ডারে টাকাগুলো বিনিয়োগ করি। পণ্য তো আর পেলাম না। পরে দুটি চেক দিয়েছিল আলেশা মার্ট। কিন্তু অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকার কারণে চেক দুটি ডিজঅনার হয়। পরে বেশ কয়েকবার আলেশা মার্টের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণার দায়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু মঞ্জুর আলম ও সাদিয়া চৌধুরী দম্পতি কেনো গ্রেফতার হচ্ছেন না তা জানা নেই। আমি চাই তাদের দ্রুত গ্রেফতার করা হোক। না হলে সাধারণ মানুষ আইনের উপর আস্থা হারাবে।’

মঞ্জুরুল আলম শিকদার ও তার স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরীর নামে বেশ কয়েকটি গ্রেফতারি পরোয়ানার কপি রয়েছে সিটি নিউজ ঢাকার হাতে। সেই সুত্র ধরে তেঁজগাও শিল্পাঞ্চল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী আবুল কালামের সঙ্গে কথা হয় সিটি নিউজ ঢাকার। মঞ্জুর আলম ও সাদিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও কেনো তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না বলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মঞ্জুর আলম শিকদার ও সাদিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনেকগুলো ওয়ারেন্ট রয়েছে। তারা আমাদের থানার সীমানাতে নেই। তাদের সন্ধানও জানি না।’

এ সব বিষয়ে কথা বলার জন্য মঞ্জুর আলম শিকদার ও সাদিয়া চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিনিয়তই যোগাযোগের চেষ্টা করছে সিটি নিউজ ঢাকা। তবে তারা কেউই কল রিসিভ করছেন না। এমনকি এসএমএস বার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি এই দম্পতি। 

এআরআই

আর্কাইভ