প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২২, ০৩:৪৮ এএম
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে কোড জালিয়াতীর মাধ্যমে ২১১ কোটি টাকার রাজস্ব লোপাট নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন কয়েক বছর ধরে আলেচিত হচ্ছে। এ নিয়ে ২১ টি মামলা হয়েছে। কোন মামলাই এখনো চুড়ান্ত পর্যায়ে যায়নি। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই অনেকেই ঘোলা পানি গলাধ:করণের পর যা হয় সেই মনোভাবে কয়েকজন উদ্ধতন কর্মকর্তাকে নিয়ে লিখেছেন “গরুর রচনা”র মতো নানা প্রতিবেদন। এতে সামাজিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছেন অবসরে যাওয়া কয়েকজন কাস্টমস কর্মকর্তা। আর নেতিবাচক প্রভাবে ম্লান হচ্ছে কাস্টমস অধিদফতর।
আইনের বানি চিরন্তন “হাজারটা অপরাধী ছাড়া পেয়ে যাক, তারপরও একটি নিরপরাধ লোকও যেন সাজা না পাই”। এই বানিকে প্রধান্য দিয়ে সিটি নিউজ ঢাকার এই অনুসন্ধানী অবতারণা।
কাস্টমস একটি অতিব গুরুত্বপূর্ণ সরকারী অধিদপ্তর। এই দপ্তর পরিচালনার জন্য রয়েছে সুনির্দষ্ট নিয়মকানুন। সফটওয়্যার, সিকিউরিটি সিসটেম কর্মকর্তাদের রুলস অব বিজনেস। এসব না জেনে এব্যাপারে প্রতিবেদন করা অনুচিত। আবার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করাও দুরহ।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আগে জানবো অভিযোগ কি ছিল। সেই অভিযোগে কার কি দায়িত্ব লঙ্ঘন হয়েছে। এর জন্য কার বিরুদ্ধে কি ধরনের শাস্তি বিধান করা হয়েছে।
আগে জেনে নি কি ছিল অভিযোগ:
অভিযোগ হলো এই যে, ২০১৮ সালে কাস্টমসের ব্যবহৃত বিশেষ কম্পিউটার সফটওয়্যারের (অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড) পাসওয়ার্ড চুরি করে পণ্যভর্তি ২২টি কনটেইনার পাচার করা হয়। এতে কয়েকশ’ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় সরকার। এর সঙ্গে কাস্টমসের কতিপয় কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা আছে।
নানা প্রতিবেদনে কাস্টমসের ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্তত ৭০ জনের নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তাদেরই একজন তৎকালীন কাস্টমস কমিশনার নুরুজ্জামান। আলোচিত বিষয় নিয়ে তিনি এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর কি বলেছেন তা বিশ্লেষণ করলে কি মেলে।
সাবেক কাস্টমস কমিশনার নুরুজ্জামান বলেছেন-আলোচিত বিষয় নিয়ে ঘটনার ব্যাখা দিয়েছে ঢাকার শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এ ব্যাপারে ১৯ সালের ১৫ জানুয়ারী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে তারা একটি চিঠিও দেয়। সেই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়-৩,৭৭৭ টি কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে উধাও/মিসিং হয়ে গিয়েছে। এর সঙ্গে একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র জড়িত। ১৬জানুযারী শেয়ার বীজ ও দৈনিক বণিক বার্তা এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন করে। তাতে লেখা হয় রাজস্ব কর্মকর্তার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড অপব্যবহার করে পণ্য ভর্তি কন্টেইনার খালাসে অনিয়ম করা হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দার মতে একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র ৫ বছরে ৯০০ কোটি টাকা মূল্যের অন্তত ৪,০০০ পণ্য চালান/কন্টেইনার খালাস করেছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মধ্যে ৩টি বিষয় রয়েছে। এর একটি হলো এই যে, রাজস্ব কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম ২০১৩ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ছিলেন। সে সময়ে Asycuda World System ব্যবহারের জন্য তাকে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়া হয়। তিনি যশোর ভ্যাট কমিশনারেটে বদলী হয়ে চলে যান ১৪ সালের ১১ সেপ্টম্বর। বদলির পর তার আইডি ও পাসওয়ার্ড বন্ধ করা হয়েছিল। ২০১৬ সনে তার আইডিটি আবার চালু হয়। সেটি ২০১৮ সন পর্যন্ত সচল ছিল। তার সেই আইডি দিয়ে Asycuda World System এ ১১৬ বার লগ ইন হয়েছে। তিনি ২০১৫ সালে ভ্যাট কমিশনারেট, যশোর থেকে অবসরে যান।
ফজলুল হক নামের অন্য একজন রাজস্ব কর্মকর্তা ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সন পর্যন্ত ৬ বছর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কর্মরত ছিলেন। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে তিনি কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট ও পরবর্তীতে ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটে বদলী হন। এরপরও তার নামে ইস্যুকৃত আইডি ও পাসওয়ার্ড ২০১৫ হতে ২০১৯ সনের ১৯ জানুয়ারী পর্যন্ত সচল ছিল। অক্টোবর ২০১৬ সন থেকে অক্টোবর ২০১৮ সন পর্যন্ত ২ বছর তার আইডির মাধ্যমে ৩,৬৬১ বার লগ ইন করা হয়েছে।
যিনি দায়িত্বে নেই তার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড কেন এবং কিভাবে চালু ছিল তার কোন উল্লেখ নেই।
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী এই সময়ে ASYCUDA WORLD SYSTEM ব্যবহার করে ৩,৭৭৭ টি পণ্য চালান খালাস নেয়া হয়েছে। এটা শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। রাজস্ব কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম ও ফজলুল হক বদলী হয়ে যাওয়ার পরও তাদের আইডি বন্ধ করা হয়নি। মহিবুল ইসলামের আইডি থেকে ১১৬ এবং ফজলুল হকের আইডি থেকে ৩,৬৬১ বার সহ (১১৬+৩,৬৬১)= ৩,৭৭৭ বার লগ ইন করা হয়েছে। এটাকে কন্টেইনার খালাস বলা হয়েছে। বর্তমানে ফজলুল হক, রাজস্ব কর্মকর্তা ঢাকা কাস্টম হাউসে কর্মরত রয়েছেন। তিনি অন্য দফতরে বদলী হওয়ার পরও তার ইউজার আইডিও সচল ছিল।
এই ঘটনার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এবং শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারী ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ০২১৯ সালের ২০ জানুয়ারী ঢাকায় কর্মরত একজন কমিশনারের (যিনি বর্তমানে কমিশনার, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কর্মরত) নেতৃত্বে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি ওই সনের ৯ মে প্রতিবেদন দাখিল করে।
ওই ঘটনায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস তাৎক্ষনিকভাবে যা কছিল তা হলো এই যে, তদন্ত কমিটির সদস্য সংখ্যা ৬ থেকে বাড়িয়ে ১৪ করে। ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারীর ওই তদন্ত কমিটি ২০ সালের ০৯ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ৭জন সি এন্ড এফ এজেন্টের লাইসেন্স সাসপেন্ড করে। সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। দায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারী, সি এন্ড এফ এজেন্ট, আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার সুপারিশ করে।
১৯ সালের ২৮ জানুয়ারী চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে বদলী হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারী কাস্টমস মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেট, ঢাকায় যোগদান করি। যার ফলে ওই ঘটনার আইনানুগ কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে আমি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলাম তার সবই ২৮ জানুয়ারী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে অবহিত করেছিলাম।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, ঢাকা ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি ১৯ সালের ২৯ মে প্রতিবেদন দাখিল করে। ২২টি বি/ই ভুক্ত চালানের অনিয়ম ও অন্যান্য অপরাধ উল্লেখ করে প্রথমে ঢাকার রমনা থানায় ১টি মামলা করে। যার নং ২৭, তারিখ ১৬/০১/২০১৯। পরবর্তীতে ২১টি চালানের বিপরীতে ২১টি মামলা করে। এই সব মামলা সূচনা থেকেই সিআইডি, ঢাকা তদন্ত করছে।
৩টি দপ্তরের ৩টি তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩,৭৭৭টি কন্টেইনার বন্দর থেকে উধাও/মিসিং এর বিষয়টি তদন্ত করা হয়। তবে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী কন্টেইনার উধাও/মিসিং এর তথ্য পাওয়া যায়নি। ২২টি বি/ই ভুক্ত চালান কম্পিউটারে কায়িক পরীক্ষা না করে ঘোষনা মোতাবেক শুল্ক কর পরিশোধিত করা হয়। রাজস্ব কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম ও ফজলুল হক এর ইউজার আইডি ব্যবহার করে এই অনিয়ম করা হয়।
Asycuda World System থেকে ২২টি চালানের মধ্যে ২০টি চালান রাজস্ব কর্মকর্তা এবং ২টি চালান সহকারী কমিশনার কর্তৃক শুল্কায়ন ও ডেলিভারী হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়ম সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক সি এন্ড এফ এজেন্ড/প্রতিনিধি কাস্টম হাউসের সংশ্লিষ্ট কম্পিউটার অপারেটর/শাখা সহকারী সংশ্লিষ্ট সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, রাজস্ব কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার/ডেপুটি কমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সুপারিশ করা হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে ১৮ সালের ০৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়। এই চিঠির প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ১২০, তারিখ- ২৩/০১/২০১৯ এবং ৬৮৩, তারিখ- ০১/০৪/২০১৯ স্মারকে কন্টেইনারের অবস্থান ও নিষ্পত্তির তথ্য দিয়ে কমিশনার, কাস্টম হাউস, চট্টগ্রামকে চিঠি দেয়।
পত্রে উল্লেখ করা হয়, এর আগে বিগত ১/১১ সরকারের সময়ে কাস্টমস প্রায় ২,০০০ টি কন্টেইনারের হদিছ পাচ্ছে না। সেই মর্মে তৎকালীন টাস্ক ফোর্সের নিকট চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায় ১ বছর পর সেগুলোর হদিছ বের করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অব টাস্ক ফোর্সকে অবহিত করে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পত্রে এ ধরনের কন্টেইনারের সংখ্যা ৩,৭৭৭টির পরিবর্তে ২৯৫টি হবে এবং ২৯৫টি কন্টেইনারের নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ার একটি যৌক্তিক ব্যাখ্যাও উল্লেখ রয়েছে ।
অভিযুক্ত ২২টি বি/ই ভুক্ত চালানের বিবরণ : ২২টি বি/ই ভুক্ত পণ্য চালান কায়িক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত না হওয়ায় এই ২২টি বি/ই ভুক্ত পণ্য চালান আমদানিকারক/তার মনোনীত প্রতিনিধি সি এন্ড এফ কর্তৃক দাখিলকৃত ডিক্লারেশন/বিই অনুযায়ী শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। চালানগুলো খালাসকালে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃক ৬টি চালান এবং শুল্ক গোয়েন্দা, সিআইসি ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃক যৌথভাবে ১৬টি চালান খালাস স্থগিত/লক করা হয়।
আমি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার পদে যোগদানের পর, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম এর আহরণকৃত রাজস্ব বিগত অর্থবছর ২০১৬-১৭ এর চেয়ে ১৬% বেশি ছিল। ডিসেম্বর ২০১৮ সনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্বের প্রবৃদ্ধি কম হওয়াটাই স্বাভাবিক। তথাপি কাস্টম হাউস, চট্টগ্রামে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমার শেষ কর্মদিবস ২৮/০১/২০১৯ তারিখ পর্যন্ত রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ছিল ৮%। কিন্তু বছর শেষে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩% ।
এছাড়াও কাস্টমস কমিশনার ড. এ কে এম নুরুজ্জামান বলেছেন আমি কমিশনার পদে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ১ বছর ৩ মাস কর্মরত ছিলাম (০২/১১/২০১৭ হতে ২৮/০১/২০১৯ তারিখ পর্যন্ত)। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী কমিশনার ১জন অতিরিক্ত কমিশনার ৩জন যুগ্ম কমিশনার ৩ জন সহকারী/ডেপুটি কমিশনার ৩৫ জন রাজস্ব কর্মকর্তা ১৭০জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ৪৮০ জন এবং ৩য়/৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী ৪২০জন ছিল লোকবল।
একটি বন্দরে SYSTEM SOFTWARE ম্যানেজমেন্ট ও বাস্তবতার মধ্যে কিছু পার্থক্য এসেই যায়। কিভাবে আসে তার বর্ণনা তুলে ধরছি।
বন্দর ও কাস্টমসের হিসাবে কন্টেইনার সংখ্যার বড় গ্যাপ কেন: একটি মেয়াদকে বিবেচনা করে ASYCUDA WORLD SYSTEM এর আওতায় আমদানি চালানের বিপরীতে যত সংখ্যক IGR অনলাইনে দাখিল করা হয় তার একটি বড় সংখ্যক IGR সংশ্লিষ্ট চালান বি/ই দাখিলের মাধ্যমে Duty tax পরিশোধ সাপেক্ষে খালাস হয়।
কিন্তু নানাবিধ কারণে অবশিষ্ট সংখ্যক IGM সংশ্লিষ্ট চালানের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পণ্য খালাসের জন্য বি/ই দাখিল করা হয় না। এই সকল IGM সংশ্লিষ্ট চালান বিভিন্নভাবে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। যেমন: নিলামের মাধ্যমে, ধ্বংস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, রি-শীপমেন্টের মাধ্যমে, যেকোন ভুলের কারণে বন্দরে অবতরণ হয়নি এমন চালান এবং বিভিন্ন প্রাইভেট আইসিডি/অপডকে প্রেরণ ইত্যাদির মাধ্যমে চালানসমূহ নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।
বর্তমানে ব্যবহৃত Asycuda World System এ শুধুমাত্র যে সমস্ত IGM সংশ্লিষ্ট চালান ডিক্লারেশন/BE দাখিলপূর্বক Duty tax pay করে খালাস হয় শুধুমাত্র সেই সকল চালানের কন্টেইনার মোট IGM সংশ্লিষ্ট চালান/কন্টেইনারের হিসাব থেকে বাদ দেয়া হয়। কিন্তু উপরের বর্ণনা মোতাবেক অন্যান্য প্রক্রিয়ায় যে সকল চালান খালাস হয়, সেই সকল চালানসমূহ অনলাইনে মোট Submitted IGM এর সংখ্যা থেকে বাদ দেয়া হয়না। যার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে রক্ষিত হিসাব অনুযায়ী চালান/কন্টেইনারের সংখ্যার সাথে ASYCUDA WORLD SYSTEM এ রক্ষিত চালান/কন্টেইনারের পরিমাণ বেশী দেখা যায়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কন্টেইনার হিসাবের সাথে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কন্টেইনার হিসাবের একটি বড় পার্থক্য দেখা যায়।
যেভাবে পণ্য পরীক্ষার করা হয় তাতে পার্থক্য থেকেই যায়। যেমন প্রতিদিন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে যত ডিক্লারেশন/BE দাখিল করা হয় তার প্রায় ১৫% চালান ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায় পড়ে। ASYCUDA WORLD SYSTEM এ সয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটার রেডভুক্ত/পণ্য চালান কায়িক পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করে থাকে। অবশিষ্ট ৮৫% চালান আমদানিকারক/তার প্রতিনিধি সি এন্ড এফ কর্তৃক দাখিলকৃত ডিক্লারেশন/BE এর সাথে সংযুক্ত আমদানি দলিলাদির (যেমন, ইনভয়েস, প্যাকিং লিস্ট, আইজিএম/বিএল, এলসি/এলসিএ ইত্যাদি) ভিত্তিতে শুল্কায়নপূর্বক শুল্ক কর আদায় করে খালাস দেয়া হয়।
কম্পিউটার ও শুল্কায়ন পদ্ধতি: চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কর্মরত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, রাজস্ব কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার/ডেপুটি কমিশনার, যুগ্ম কমিশনার ইত্যাদি সকল স্তরের প্রত্যেক কর্মকর্তাকে ASYCUDA WORLD SYSTEM SOFTWARE এর আওতায় শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। এ জন্য তাদেরকে পৃথক ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দেয়া হয়। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নিজস্ব আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ASYCUDA WORLD SYSTEM এ লগ ইন করেন। তারপর তিনি দায়িত্বের আওতাভুক্ত চালানের শুল্কায়ন প্রস্তাবসহ ফাইলটি রাজস্ব কর্মকর্তার নিকট পাঠান। রাজস্ব কর্মকর্তা আইডি এবং পাসওয়ার্ড এর মাধ্যমে ASYCUDA WORLD SYSTEM এ লগ ইন করেন। সংশ্লিষ্ট চালানের কাস্টম ডিউটি ও ট্যাক্স এর পরিমাণ নির্ধারণ ও তা আদায় করেন। রাজস্ব কর্মকর্তা রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে চালান/কন্টেইনার কম্পিউটার থেকে খালাসের আদেশ দেন। পাশাপাশি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা/রাজস্ব কর্মকর্তা/সহকারী কমিশনার/ডেপুটি কমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তা কম্পিউটার থেকে ইতোমধ্যেই খালাসকৃত পণ্য চালানের তথ্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে পত্রের মাধ্যমে অবহিত করেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কম্পিউটার SYSTEM SOFTWARE থেকে পণ্য খালাসের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এবং কাস্টম কর্তৃপক্ষ থেকে প্রাপ্ত পত্র অর্থাৎ এই দুইটি তথ্য/পত্রের ভিত্তিতে পণ্য চালান/কন্টেইনার চূড়ান্ত খালাস দিয়ে থাকেন। তবে কিছু কিছু পণ্য চালানের শুল্কায়ন প্রস্তাব সহকারী কমিশনার/ডেপুটি কমিশনারসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণ করা হয়। বর্ণিত কার্যক্রমের সকল রেকর্ড ASYCUDA WORLD SYSTEM এ সংরক্ষিত থাকে।
গোয়েন্দা শাখার কার্যক্রম কি: চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিজস্ব একটি গোয়েন্দা শাখা (AIR) রয়েছে, যা সরাসরি সাধারণত একজন সহকারী কমিশনার/ডেপুটি কমিশনার তত্তাবধান করেন। ওই শাখায় ২-৩ জন রাজস্ব কর্মকর্তা, ১০-১৫ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক ৩য়/৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী রয়েছে। AIR শাখা প্রতিদিন যেকোন সূত্র থেকে প্রাপ্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অনেক পণ্য চালানের খালাস স্থগিত/লক করে থাকেন।
উল্লেখ্য, সকল কাস্টম হাউসের অধীন খালাসযোগ্য চালান যেকোন সূত্র থেকে প্রাপ্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিআইসি/শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরও অনুরূপভাবে পণ্য চালানের খালাস স্থগিত/লক করে থাকেন। সাধারণত যে সংস্থা কর্তৃক খালাস স্থগিত/লক করা হয় তাদের ইস্যুকৃত পত্র/অনুমোদন ব্যতীত এ ধরনের আটককৃত পণ্য চালান খালাস দেয়া হয় না।
সাধারণত শুল্ক কর আদায়/পরিশোধের সময়/পরিশোধের পর ওই ২২টি চালান খালাসের পূর্বে/প্রাক্কালে ASYCUDA WORLD SYSTEM এ ২২টি চালানের মধ্যে ৬টি চালান শুধুমাত্র চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃক, ১০ টি চালান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এবং সিআইসি কর্তৃক যৌথভাবে, ১টি চালান শুধুমাত্র সিআইসি কর্তৃক এককভাবে, ১টি চালান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর যৌথভাবে এবং ৪টি চালান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, সিআইসি ও শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, ঢাকা যৌথভাবে লক/আটক করা হয়। ফলে পণ্য চালানের খালাস স্থগিত হয়ে যায়।
আলোচিত ২২টি বি/ই ভুক্ত পণ্য চালান কায়িক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত না হওয়ায় এই ২২টি বি/ই ভুক্ত পণ্য চালান আমদানিকারক/তার মনোনীত প্রতিনিধি সি এন্ড এফ কর্তৃক দাখিলকৃত ডিক্লারেশন/বিই এর সাথে সংযুক্ত আমদানি দলিলাদির (যেমন, ইনভয়েস, প্যাকিং লিস্ট, আইজিএম/বিএল, এলসি/এলসিএ ইত্যাদি) ভিত্তিতে শুল্কায়নপূর্বক শুল্ক কর আদায় করে সেই সময় (অর্থাৎ আইডি ও পাসওয়ার্ড অপব্যবহারের খবর প্রকাশিত হওয়ার অনেক পূর্বে) রাজস্ব কর্মকর্তা কর্তৃক ২০ টি পণ্য চালান এবং সহকারী কমিশনার কর্তৃক ২টি পণ্য চালান খালাসের আদেশ দেয়া হয়েছিল।
পরবর্তীতে অভিযুক্ত ২২ টি বি/ই ভুক্ত পণ্য ভর্তি চালান/কন্টেইনার রাজস্বকর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম ও ফজলুল হক এর ইউজার আইডি ব্যবহার করে ASYCUDA WORLD SYSTEM থেকে ডেলিভারী দেখানো হয়। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা/রাজস্ব কর্মকর্তা/সহকারী কমিশনার/ডেপুটি কমিশনার এর স্বাক্ষরিত/জাল স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে ক্লিয়ারেন্স এর ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে পণ্য চালান খালাস দেয়া হয়েছিল।
২২টি বি/ই ভুক্ত চালান পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট (PCA) এর মাধ্যমে চালান খালাসে অনিয়ম/শুল্ক ফাঁকির পরিমাণ সনাক্ত করা সম্ভব।
যেমন: সংশ্লিষ্ট আইজিএম এ উল্লেখিত পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ এবং ব্যাংক থেকে সংগৃহীত মূল কাগজপত্র/ডকুমেন্ট উভয়ের সঙ্গে হুবহু মিল আছে কি না তা যাচাই করা।
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহকারী দেশের সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারকের বরাবর পত্র লিখে পত্রের জবাবের সাথে ইতোপূর্বে ২২টি চালানের শুল্কায়ণকৃত কাগজপত্র/তথ্যের সঙ্গে পূর্বে দাখিলকৃত সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টেশন এর হুবহু মিল আছে কি না ইত্যাদি যাচাই করে।
আমদানি নীতি আদেশ, শুল্কের হার, আমদানিকৃত পণ্যের শুল্কযোগ্য মূল্য ইত্যাদি পরীক্ষা করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
এসব ত্রুটি বিচ্যুতির বাইরে বর্ণিত ইউজার আইডি ব্যবহার করে কোন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল বা অন্য কোন জালিয়াতির মাধ্যমে যে সকল চালান খালাস নেয়া হয়েছে তার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে IGM এ বিদ্যমান চালান খালাস হয়নি এমন ৫,৫৮৪ টি পণ্য চালানের বর্তমান অবস্থা সরেজমিনে তদন্ত করা যায়। এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৮ সালের ৩১ জানুয়ারী ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের বর্ণিত পত্র এবং আলোচ্য তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশে উল্লিখিত তথ্যাদি ক্ষেত্রবিশেষ অপব্যাখ্যা করে, একটি জালিয়াতি চক্র রাজস্ব আহরণে ধস নামানোর জন্যই পত্র পত্রিকায় মিথ্যা, ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছিল। এর ফলে আমদানি কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন উচ্চ মহলে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।
আমি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কমিশনার পদে যোগদানের পর (ক) আমার কর্মকালীন সময়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম এর আহরণকৃত রাজস্ব বিগত অর্থবছর ২০১৬-১৭ এর চেয়ে ১৬% বেশি ছিল।
উল্লেখ্য, ডিসেম্বর ২০১৮ সনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্বের প্রবৃদ্ধি কম হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেননা এই সময় ব্যবসায়ীসহ অধিকাংশ জনগনের মধ্যে অহেতুক ভয়-ভীতি/বিনিয়োগে অনিশ্চয়তার ঝুঁকির বিষয়টি কাজ করে থাকে। যার কারনে আমদানি বাণিজ্য হ্রাস পায়। বিধায় রাজস্বের পরিমাণও তুলনামূলকভাবে হ্রাস পায় এবং আমদানি পণ্যের এলসি কম খোলা হয়ে থাকে।
তথাপি আমি কাস্টম হাউস, চট্টগ্রামে শেষ কর্মদিবস ২৮/০১/২০১৯ তারিখ পর্যন্ত অর্থাৎ আমার কর্মকালীন সময়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ০১/০৭/২০১৮ হতে ২৮/০১/২০১৯ তারিখ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮%। কিন্তু আমি বদলী হওয়ার পর বছর শেষে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩%। নির্বাচনের বছর হিসেবে উক্ত সময়ে রাজস্ব আদায় ভালো ছিল বলে প্রতীয়মান। উল্লেখ্য, বিগত ৩০ বছরে ৮টি জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
উপরোক্ত অর্থবছরসমূহে কোন অর্থবছরেই রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ৫-৭% এর বেশি হয়নি। শুধুমাত্র ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি নেগেটিভ ছিল। কিন্তু এই ৩০ বছরে অন্যান্য অর্থবছরগুলোতে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি ছিল। সেই হিসেবে আমার কর্মকালীন সময়ে রাজস্ব আহরণ সন্তোষজনক ছিল।
আমার সময়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের প্রতি মাসে শত শত চালান কায়িক পরীক্ষার মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করা হয়েছে। এজন্য আমি ভালো কাজের পুরষ্কার হিসেবে আর্থিক অনুদান পাবো বলে আশা করেছিলাম।
আমি বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কর্মরত নেই। আমার পক্ষে বি/ই ভিত্তিক ফাঁকিকৃত রাজস্ব এবং ধার্যকৃত জরিমানা আহরণ সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। তবে আমার গৃহীত কার্যক্রমের ফলে এই ফাঁকিকৃত রাজস্বের আহরণের পরিমাণ প্রায় শত কোটি টাকার মত হবে বলে মনে করি।
কিভাবে একটি পন্য বা কন্টেনার ছাড় করা হয়। সেক্ষেত্রে কার কি দায়িত্ব তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়- রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে অভিযুক্তর দায় মোচন যোগ্য। তবে যারা এই সিটেমের কন্ট্রোলার তারাই দোষী। কারন ইউজার আইডি খোলা পাসওয়ার্ড দেয়া বা বন্ধ করা সফট সিসটেম এক্সপার্টদের কাজ। যেখানে বিপুল অংকের টাকা লোপাটের সুযোগ যেখানে আছে সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁক থাকবে কেন? যিনি নতুন যোগদান করবেন তাকে একটি ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়া হয়। তিনি চলে যাওয়ার পরও সেই ইউজার আইডি কেন বন্ধ করা হয়নি। এ দায় তো ইউজারের হতে পারেনা। সিসটেম কন্ট্রোলারদের সংশ্লীষ্টরাই এরজন্য প্রথম দায়ী। এ ক্ষেত্রে অবসরে যাওয়া ইউজারদের ধরে টানাটানির হয়রানির সামিল বৈ কি? তাই এই অন্যায়টি ইকুইটি অব ল এর পরিপন্থি।