প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২২, ০৭:০২ পিএম
‘আমি অসুস্থ, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমাকে বাঁচতে দিন মঞ্জুর সাহেব। আমার টাকাগুলো ফেরত দিন। আমি আর পারছি না।’ এভাবেই আর্তনাদ করছিলেন লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা জাকির হোসেন সুমন।
সুমন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের প্রতারিত গ্রাহকদের একজন। আলেশা মার্ট থেকে বাজাজ প্লাটিনা মডেলের ১০০ সিসির একটি বাইক কেনার জন্য গত বছরের ১৩ জুন ৬৪ হাজার ৭৯৫ টাকা বিনিয়োগ করেন। শর্তানুযায়ী ৪৫ দিনে তাকে মোটর সাইকেলটি ডেলিভারি দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার এক মাস পরেও বাইকটি ডেলিভারি দেয়া হয়নি। এর মাঝেই দুরারোগ্য এক ব্যাধিতে আক্রান্ত হন সুমন।
‘আমি গরীব মানুষ। একটা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করি। যে টাকা বেতন পাই তাতে চলতেই কষ্ট হয়। জমানো তো দূরের কথা। একটা পুরাতন বাইক ছিল, সেটি বিক্রি করে দেই। নিজের জমানো আরও কিছু টাকাসহ নতুন বাইক কেনার উদ্দেশ্যে আলেশা মার্টে বিনিয়োগ করি। কিন্তু বাইকতো পেলামই না উল্টো টাকাগুলোও হারালাম।
জাকির হোসেন সুমন বলেন, ‘আমি গরীব মানুষ। একটা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করি। যে টাকা বেতন পাই তাতে চলতেই কষ্ট হয়। জমানো তো দূরের কথা। একটা পুরাতন বাইক ছিল, সেটি বিক্রি করে দেই। নিজের জমানো আরও কিছু টাকাসহ নতুন বাইক কেনার উদ্দেশ্যে আলেশা মার্টে বিনিয়োগ করি। কিন্তু বাইকতো পেলামই না উল্টো টাকাগুলোও হারালাম।’
তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ। আমার অত সম্পদ নাই। টাকাগুলো ফেরত দিতে আলেশা মার্ট কর্তৃপক্ষকে বেশ কয়েকবার জানানো হলেও তারা কর্ণপাত করেনি।’ এ সময় আলেশা মার্ট প্রধানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমার অনুরোধ- আমার সামান্য কিছু টাকা। এগুলো ফেরত দিয়ে দিন।’
আলেশা মার্টের প্রতারণার শিকার এই ভুক্তভোগী জানান, পণ্য হাতে না পাওয়ায় গত বছর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে অসুস্থতার কথা জানিয়ে আলেশা মার্ট কর্তৃপক্ষের নিকট রিফান্ড দাবি করেন তিনি। আলেশা মার্ট থেকে রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত অফিসে আসতে বলা হয় সুমনকে। অসুস্থ শরীর নিয়ে বনানী অফিসে আসেন তিনি। সেখানে তার মেডিকেল রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। সুমন মেডিকেল রিপোর্ট জমা দিলে তাকে রিফান্ড চেক প্রদান করা হয়।
অক্টোবরের ১১ তারিখে চেকটি ইস্যু করা হলেও টাকা তোলার ডেট দেয়া হয় ১৮ তারিখ। কিন্তু ১৮ তারিখে রামগঞ্জের সোনালি ব্যাংকে গেলে চেকটি ডিজঅনার হয়। বিষয়টি রেহান নামের একজন আলেশা মার্ট কর্মকর্তাকে অবগত করেন সুমন। তিনি তাকে অপেক্ষা করতে বলেন নভেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত।
সুমন জানান, তখনও আলেশা মার্ট কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের নিকট থেকে অর্ডার গ্রহণ করছিল। নভেম্বরের ১০ তারিখ পেরিয়ে একসময় চলে আসে ২০২২ সাল। এর মাঝে বন্ধ হয়ে যায় আলেশা মার্ট।
‘সেদিনও টাকা পাইনি। ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারি একাউন্টে কোনো টাকা নাই। হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। এদিকে টাকা না পেলে প্রাথমিক চিকিৎসাও হবে না। এই যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হবে বহুদিন।’
পরবর্তীতে অসুস্থ শরীর নিয়ে সুমন আসেন তেঁজগাওয়ের নাসরিন টাওয়ারে। যেখান থেকে সে সময় আলেশা মার্টের কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। সেখানে রাসেল নামক এক আলেশা মার্ট কর্মকর্তা তাকে নতুন চেক দেন। এমনকি সে সময়েও সুমনকে আবার তার মেডিকেল রিপোর্ট জমা দিতে হয়।
তবে এবার চেক থেকে টাকা উত্তোলনের ডেট দেয়া হয় ১১ জুলাই। সুমন অপেক্ষা করতে থাকেন সেই দিনটির। তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে চার মাসের এই অপেক্ষা ছিল কয়েক হাজার বছরের মতো।
তবুও সুমন আশাবাদী, কেননা টাকাগুলো পেলেই প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে পারবেন তিনি। এক সময় এসে যায় সেই দিনটি। মনে অনেকটা আশা নিয়েই চেকটি নিয়ে ব্যাংকে যান তিনি। কিন্তু তার সকল আশা নিরাশায় পরিণত হয় এক মুহূর্তে।
সুমন বলেন, ‘সেদিনও টাকা পাইনি। ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারি একাউন্টে কোনো টাকা নাই। হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। এদিকে টাকা না পেলে প্রাথমিক চিকিৎসাও হবে না। এই যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হবে বহুদিন।’
শুধু একজন জাকির হোসেন সুমনই শেষ নয়। আলেশা মার্ট প্রধান মঞ্জুর আলম শিকদারের প্রতারণায় নিঃস্ব হয়ে এ রকম শত শত সুমন রাস্তায় ঘুরছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত এই প্রতারণার বিচার চাচ্ছে তারা। ফেরত চাচ্ছে তাদের কষ্টার্জিত টাকা।
এআরআই