প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২২, ০৭:৪২ পিএম
হাজারো গ্রাহকের পুঁজি হাতিয়ে নেয়া মঞ্জুর আলম শিকদারের বিষয়ে অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ফলে যে কোনো সময় গ্রেফতার করা হতে পারে তাকে। এমনটাই জানিয়েছেন পুলিশের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা।
শনিবার (৮ অক্টোবর) সিটি নিউজ ঢাকাকে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাধারণত যেকোনো স্পর্শকাতর ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে তদন্ত করা উচিত। না হলে সুষ্ঠু তদন্ত বাধাগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন কারণে আলেশা মার্ট প্রধানের ক্ষেত্রে সেটি বিলম্ব হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মঞ্জুর আলমকে নিয়ে যেভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে- বিষয়গুলো সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নজরে এসেছে। এ কারণে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে অতি দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত বলে মনে করছেন অনেকে। যে কারণে তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি তরান্বিত করা হচ্ছে।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মঞ্জুর আলম শিকদারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত অনেক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তারপরও তাকে গ্রেফতার না করার বিষয়টি গণমাধ্যমে আসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন মহলে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করছে।’
পুলিশের আরেকজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, গত বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কয়েকজন কর্মকর্তা সুপারিশ করে বলেছেন, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, কিউকম ও ইভ্যালির মতো প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু আলেশা মার্টের ব্যাপারে পদক্ষেপ না নেয়ায় বিষয়টি গণমাধ্যমে চাউর হয়েছে। সে কারণে মঞ্জুর আলমকে গ্রেফতারের বিষয়টি তরান্বিত করা উচিত।
বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বশীল একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‘যে কোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে আলেশা মার্ট প্রধানকে গ্রেফতার করা উচিত। কারণ গ্রাহকেরা তাদের পাওনা অর্থ ফেরত চাইতে চাইতে পেরেশান হয়ে গেছে। তাদের কেউ কেউ আত্মাহুতিরও হুমকি দিয়েছেন। এ অবস্থায় কোনো কিছু ঘটে গেলে এই দায় কে নেবে? তাই মঞ্জুর আলমকে আইনের আওতায় আনার বিষয়টি তরান্বিত করাই হবে উত্তম সিদ্ধান্ত।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সাধারণত এ ধরণের ঘটনায় গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য অভিযুক্তকে আইনি কাঠামোর মধ্যেই সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু আলেশা মার্ট প্রধানকে নিয়ে যেভাবে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে এমন পরিস্থিতিতে তাকে গ্রেফতার করার পক্ষে মত দিয়েছেন একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা।’
মঞ্জুর আলমকে গ্রেফতার করা হলে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ না হওয়ার কোনো শঙ্কা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘তাকে গ্রেফতার করা হলেও গ্রাহকেরা যেনো টাকা ফেরত পায় সেদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর রয়েছে। সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়া হবে। এমনকি গ্রাহকদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে যা প্রয়োজন তাই করা হবে বলেও জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ই-কমার্স ব্যবসার নামে হাজারো গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আলেশা মার্ট প্রধান মো. মঞ্জুর আলম শিকদার। এখন আলেশা মার্টের অফিস বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। দিচ্ছেন না গ্রাহকদের অর্ডারকৃত পণ্য বা পাওনা টাকা। একাধিকবার ফেসবুক লাইভে এসে গ্রাহকদের পাওনা টাকা ফেরত দেয়ার তারিখ দিলেও তা বাস্তবায়ন করেননি তিনি। ফলে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে প্রতারিত গ্রাহকেরা।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় শতাধিক মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে, জারি হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানাও। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন ধুর্ত মঞ্জুর আলম শিকদার। যে কারণে বিভিন্ন পদস্থ ব্যক্তি ও সংস্থার সঙ্গে আলেশা মার্ট প্রধানের গোপন লেনদেনের অভিযোগ তুলছেন নিঃস্ব হওয়া গ্রাহকেরা।
এআরআই