প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২২, ০৭:২০ পিএম
চটকদার ও লোভনীয় অফার। বাজারমূল্যের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম মূল্যে মোটরসাইকেল! সেই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে কার মনে না চায়। কিন্তু এই লোভনীয় অফার যে ফাঁদ ছিল তা অনুভব করতে পারেননি কেউ। ফলে হারিয়েছেন সহায়-সম্বল। বলছি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের কথা।
এই প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগের জন্য কেউ ঋণ করেছেন আত্মীয় স্বজন থেকে। কেউবা নিয়েছেন ব্যাংক লোন। কিন্তু আজ সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকটা সর্বশান্ত তারা। এখন না পারছেন ঋণ পরিশোধ করতে, না পারছেন বাড়িতে থাকতে। পাওনাদারদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের কেউ কেউ।
তাদেরই একজন তানজির সোহাগ। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে তার বসবাস। আলেশা মার্ট থেকে দুইটি মোটরসাইকেল কেনার জন্য ২ লাখ ৩২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। পরবর্তীতে পণ্য হাতে পাওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। বিনিয়োগের সেই টাকা ফেরত পেতে বেশ কয়েকবার আলেশা মার্ট প্রধান মঞ্জুর আলম শিকদারের বাড়িতে যান তিনি। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি।
সিটি নিউজ ঢাকাকে সোহাগ বলেন, ‘ওয়েডিং ফটোগ্রাফির কাজ করি। নতুন ডিভাইস কেনার কারণে বেশ কিছু টাকা ঋণগ্রস্ত ছিলাম। করোনাকালে খুব একটা কাজ পেতাম না। তাই পুরোপুরি ঋণ শোধ করতে পারিনি। একসময় ফেসবুকে আলেশা মার্টের বিজ্ঞাপন দেখতে পাই। চিন্তা করলাম, সেখান থেকে কিছু পণ্য কিনি। যেহেতু টাকা পেমেন্টের এক মাসের মধ্যেই বাইক ডেলিভারি দেয়ার কথা ছিল, তাই আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে আরও কিছু ঋণ নেই। ভাবছিলাম, বাইকগুলো বিক্রি করলে বেশ কিছু টাকা থাকবে। তাতে অন্তত ঋণগুলো পরিশোধ করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘বুঝতে পারি নাই এভাবে প্রতারণার শিকার হবো। নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছি। এখন ঋণ শোধ করতে করতে নিজের দম বেরিয়ে যাচ্ছে। অনেকের টাকা শোধ করতে না পেরে এখন পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। মঞ্জুর আমার জীবন তছনছ করে দিয়েছে।’
সোহাগ বলেন, ‘এভাবে আর কতদিন পালিয়ে বেড়াবো? অথচ দেখেন, আমাদের টাকা লোপাট করে আলেশার মালিক মঞ্জুর দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমার অনুরোধ- আমাদের টাকাগুলো ফিরিয়ে দেয়া হোক।’
সোহাগের মতো ভুক্তভোগী আরেকজন গ্রাহক সিরাজ। বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে দুইটা বাইকের জন্য ২ লাখ ১০ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। চেক পেলেও সবার মতো তার চেকও ডিজঅনার হয়। বর্তমানে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘লোভ করছিলাম, এখন ভুগতেছি। মানুষের টাকা দিতে পারছি না। তাই এখন এলাকায় যেতে পারছি না। আর পারতেছি না, কি করবো বলেন? টাকা পাবো কিনা তাও জানি না। কবে বাড়ি ফিরতে পারবো তাও জানা নেই। ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছি সব।’
সিরাজ বলেন, ‘আমার মতো অনেকেই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মঞ্জুর আলমের মতো প্রতারকদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হোক।’
এআরআই/এএল