• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

গায়ে পেট্রল ঢেলে আত্মাহুতির হুমকি প্রতারিত গ্রাহকের

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২২, ০৪:৪৬ এএম

গায়ে পেট্রল ঢেলে আত্মাহুতির হুমকি প্রতারিত গ্রাহকের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিভিন্ন মাধ্যমে লোভনীয় অফারের বিজ্ঞাপন। অর্ধেক মূল্যে গাড়ী কিংবা মোটর সাইকেল। আলেশা মার্ট ব্যস্ত তখন গ্রাহক আকৃষ্ট করার মিছিলে। চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে মানুষও হুমড়ি খেয়ে পড়েন তাতে। কেউ নিজের পছন্দের জিনিস কিনতে, আবার কেউ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে। কিন্তু এই লোভনীয় অফারের পেছনে যে এক দুরভিসন্ধি রয়েছে তা আঁচ করতে পারেননি কেউ। পা দেন ফাঁদে। প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করেন নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ। আর প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন এমন অসংখ্য গ্রাহক। অনেকেই নিজের সর্বস্ব বিনিয়োগ করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এখন গায়ে পেট্রোল ঢেলে আত্মাহুতি দিয়ে মুক্তির পথ খুঁজছেন।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাওনা টাকা না পেলে প্রেস ক্লাবে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দেয়া গাজী আনিসের পথ বেছে নিবেন বলে হুমকিও দিয়েছেন কেউ কেউ। ফেসবুক ভিত্তিক ‘আলেশা মার্ট কাস্টমার এসোসিয়েশন’ নামক একটি গ্রুপে এ রকম বেশ কয়েকটি পোস্ট দেখা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক লিখেছেন, ‘আর কত অপেক্ষা! ১০ মাস পার হয়ে গেল এখনও টাকা ফেরত পাবার বিন্দুমাত্র লক্ষণ নাই। নিজের সব সম্বল আলেশা মার্টে বিনিয়োগ করেছি। এখন এই টাকা না পেলে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যা করতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।’

মঞ্জুর আলম শিকদার ও আলেশা মার্টের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ভূমিকা পালনে হতাশা প্রকাশ করেছেন শ্যামল কুমার দাস নামক আরেক গ্রাহক। তিনি লেখেন, ‘যে দিন গাজী আনিস সাহেবের মতো গায়ে পেট্রোল ঢেলে দিয়ে আলেশা মার্ট এর কোনো গ্রাহক আত্মাহুতি দেবে সে দিনই প্রশাসনের টনক নড়বে।’

বিনিয়োগ করা টাকা না পেয়ে মঞ্জুর আলম শিকদারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই। তাদেরই একজন মো. ইব্রাহিম। তিনি লিখেন, ‘শিকদার মানুষের টাকা না দিয়ে মরে গেলে পাওনাদাররা কিন্তু লাশ দাফন করতে দেবে না।’

জুয়েল পারভেজ নামক একজন লিখেন, ‘শিকদার রিমান্ডের মাইর নয়তো পাবলিকের গণপিটুনি খাওয়ার আগে গ্রাহকদের টাকাগুলো দে।’

জসিম ইসলাম নামক আরেকজন লিখেন, ‘আগুন খাইলে সে আগুনে পুড়তে হয়। শিকদার ভদ্রলোকের পড়ার সময়ে এসে পড়েছে, শিকদার সাহেব ভদ্রলোক রেডি হয়ে যাও।’

রাকিবুল ইসলাম নামক এক গ্রাহক মঞ্জুর আলমের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবি তুলে লিখেন, ‘আলেশা মার্ট নামক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান লোভনীয় ডিসকাউন্ট এর ফাঁদে ফেলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছে। কিন্তু আজ প্রায় ১ বছরের অধিক সময় ধরে আমাদের মতো সাধারণ গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে টাকা ফেরত না দিয়ে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা এ সকল প্রতারকদেরকে আর বিশ্বাস করতে পারছি না।’

তিনি আরও লিখেন, ‘সংশ্লিষ্ট দফতরকে জোরালো আহ্বান জানানো যাচ্ছে যে, আলেশা মার্টের চেয়ারম্যানের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক! প্রতিনিয়ত মানুষের টাকা হারানোর কান্না ও হাহাকার আমরা দেখতে পাই। ই-কমার্সের নামে আর কোনো প্রতারক প্রতিষ্ঠান যেন গড়ে উঠতে না পারে সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে আমার এই অনুরোধ রইলো।’

উল্লেখ্য, গত ২ ডিসেম্বর নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে অফিশিয়াল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট।

২০২১ সালের ১ জানুয়ারি অনলাইনে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে আলেশা মার্ট। অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টে বিশেষ মূল্য ছাড়ে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির ৫ দফা ক্যাম্পেইন চালানো হয়। এসব ক্যাম্পেইনে ৪৫ হাজার গ্রাহক পণ্যের অর্ডার দেন। চার দফায় ক্যাম্পেইনের পণ্য ডেলিভারিও দেয়া হয়। তবে পঞ্চম দফায় সাত হাজার ৩০০ গ্রাহকের অর্ডারের মোটরসাইকেল দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

 

এআরআই/এএল

অর্থ ও বাণিজ্য সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ