প্রকাশিত: মে ৮, ২০২১, ০৯:৪৮ পিএম
করোনার
প্রথম ধাক্কায় গত বছরের এপ্রিল-মে মাসেই অনেক
পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর যেসব পোশাক শ্রমিক
চাকরি হারিয়েছেন, তাদের অনেকেই বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন
করেছেন। কারখানা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে
সঙ্গে শ্রমিকদের মাত্র ১৫ শতাংশ কোনো-না-কোনো কাজ
পেয়েছেন।
চাকরি
হারানো শ্রমিকদের মধ্যে যারা নিজেদের কারখানায়
কাজ ফিরে পাননি, তাদের
২০ শতাংশ দিনমজুরের কাজ করছেন। ২০
শতাংশের মতো শ্রমিক কাজ
করছেন অনানুষ্ঠানিক খাতে। আরও ২০ শতাংশ
শ্রমিক পোশাক খাতের বাইরে বিভিন্ন কারখানায় কাজ নিয়েছেন। নিজেরাই
কিছু করার চেষ্টা করেছেন,
এমন শ্রমিক প্রায় ২৭ শতাংশ। মাত্র
৬ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিক
তৈরি পোশাক খাতেই কাজ ফিরে পেয়েছেন।
বাকি কয়েক শতাংশ অন্যান্য
খাতে গেছে।
শনিবার
(৮ মে) বেসরকারি গবেষণা
প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ
(সিপিডি) ও সজাগ কোয়ালিশনের
যৌথভাবে আয়োজিত ‘করোনায় তৈরি পোশাক খাতের
করপোরেট জবাবদিহিতা’
শীর্ষক এক সংলাপে উপস্থাপিত
মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে
ধরা হয়েছে।
একটি
সমীক্ষার ভিত্তিতে মূল প্রবন্ধটি তৈরি
করা হয়। এতে আরও
বলা হয়, নতুন কাজে
শ্রমিকদের আয় কমে গেছে।
আগে যেখানে শ্রমিকেরা মাসে ৮ থেকে
১২ হাজার টাকা আয় করতেন,
সেখানে চাকরি হারানোর পর নতুন কাজে
তারা এখন মাসে গড়ে
সাত হাজার টাকা আয় করেন।
তা ছাড়া চাকরি হারানোর
সময়ে অনেকেই তাদের পাওনা পাননি।
মূল
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা
পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। ১০২ জন গার্মেন্টস
মালিক, ৩০১ জন পোশাক
শ্রমিক ও ১০০ জন
বেকার পোশাক শ্রমিকের ওপর এই সমীক্ষা
করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব
করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন,
‘শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দিতে হবে। এ
জন্য মালিকপক্ষের দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। শ্রমিক শ্রেণির
প্রাপ্য পরিশোধে মালিকেরা যেন নজর দেন।
শ্রমিক নেতাদেরও শুধু শ্রমিক স্বার্থ
নয়, মালিকদের যৌক্তিক পরিস্থিতিও বিবেচনা করতে হবে।’ টিপু মুনশি আরও
বলেন, ‘গত বছর বিদেশি
ক্রেতারা যে পোশাক ১৫
ডলারে কিনত, সেই পোশাক এখন
১২ ডলার দিতে চাচ্ছে।
তাই ক্রেতাদের কাছ থেকে উপযুক্ত
দাম পাওয়ার বিষয়ে আওয়াজ তুলতে হবে।’
পোশাক
শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক
হাসান বলেন, করোনার কারণে বিদেশি ক্রেতাদের অনেকে ব্যাংকে ঋণখেলাপি হয়ে গেছে। তাই
দামও পড়ে গেছে। এ
ছাড়া ২০১৫ সালের পর
পোশাকের বৈশ্বিক বাজার বাড়েনি। করপোরেট সুশাসন জোরদারের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন,
‘আট বছর পর বিজিএমইএর
নির্বাচন হয়েছে। এবার নতুন প্রজন্মের
অনেক প্রতিনিধি কমিটিতে এসেছে। তাদের নিয়ে করপোরেট সুশাসন
প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেব।’
‘মজুরি কমে গেলে বিপদে
পড়েন শ্রমিকেরা। বাড়িওয়ালারা টাকা কম নেয়
না, ওষুধের দামও কম নেয়
না। তখন শ্রমিকেরা খাওয়া
কমিয়ে দেয়।’ এভাবে করোনায় চাকরি হারানো বা আয় কমে
যাওয়া শ্রমিকদের দুর্দশার কথা বর্ণনা করেন
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির
নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার। তিনি তৈরি পোশাক
শিল্প মালিকদের শুধু ক্রেতামুখী জবাবদিহি
নয়; শ্রমিকমুখী জবাবদিহিও নিশ্চিত করার দাবি জানান।
আরিয়ান/সিআর/এম. জামান