প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২১, ০৭:৫৩ পিএম
র্যাপিড অ্যাকশন
ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হাতে
গ্রেফতার হওয়া আওয়ামী লীগের
উপকমিটির পদ হারানো আলোচিত
ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। তার মধ্যে ডিজিটাল
নিরাপত্তা আইনে করা একটি
মামলায় তাকে তিন দিনের
রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
শনিবার
(৩১ জুলাই) রিমান্ডের প্রথম দিনেই মুখ খুলতে শুরু
করেছেন হেলেনা। তিনি বেশ কিছু
বিস্ফোরক ও চাঞ্চল্যকর তথ্য
দিয়েছেন। বিতর্কিত এই ব্যবসায়ী রাষ্ট্রের
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রথমে সখ্য গড়ে পরবর্তীতে
ব্ল্যাকমেইল করতেন বলে জানা গেছে।
এরপর ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকা
আদায় করতেন।
শুক্রবার
(৩০ জুলাই) রাজধানীর গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল
নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ
ক্ষমতা আইনে র্যাব
বাদী হয়ে দুটি মামলা
দায়ের করে। এর মধ্যে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা
মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম
রাজেশ চৌধুরী তিন দিনের রিমান্ড
মঞ্জুর করেন।
এ
দিকে শনিবার দুপুরে উত্তরা র্যাব সদর
দফতরে সাংবাদিকদের র্যাবের আইন
ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন,
‘ব্ল্যাকমেইল করে তাদের (রাষ্ট্রের
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) কাছ থেকে টাকা
আদায় করার তথ্য আমরা
পেয়েছি। এ বিষয়টি খতিয়ে
দেখা হচ্ছে।’
র্যাব কর্মকর্তা বলেন,
‘হেলেনা সুনির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির জন্য
থেমে থাকেননি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে তার (হেলেনা)।
উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যাকেই প্রয়োজন
হয়েছে তাকে তিনি ঘায়েল
করেছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ
ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলেছেন এবং
সেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছেন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। আমাদের মামলার কারণ এটাই। তিনি
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন, যা তাদের বিব্রতকর
অবস্থায় ফেলেছে। জনগণের মধ্যেও বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
মঈন
বলেন, ‘আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন
এ মামলাটির র্যাব তদন্ত
করবে তাহলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে আমরা আবেদন করব।
তবে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের
সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে
হবে।’
তিনি
বলেন, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীরের স্বামী ১৯৯০ সাল থেকে
গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে অন্যদের সঙ্গে পার্টনারশিপে ব্যবসা শুরু করে এখন
পর্যন্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। আমরা জানতে পেরেছি,
গত দুই বছরে বিভিন্ন
মাধ্যম এবং টেলিভিশনে চাকরি
দেয়ার কথা বলে, এজেন্সি
দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন
জনের কাছ থেকে বিভিন্ন
পরিমাণ টাকা আদায় করতেন
হেলেনা। এসব তার অফিস
স্টাফদের ওপর চাপিয়েছেন। বাসায়
এবং অফিস থেকে যে
পরিমাণ ভাউচার পাওয়া গেছে তা এখনও
পর্যালোচনা করা হচ্ছে। জয়যাত্রা
টেলিভিশনের আইডি কার্ড ব্যবহার
করে অনেক প্রতিনিধিও এই
চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন বলে আমরা জানতে
পেরেছি।’
মঈন
আরও বলেন, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীর আমাদেরকে জানিয়েছেন- তার ১৫ থেকে
১৬টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া বেশ
কয়েকটি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে তিনি জড়িত। বিভিন্ন
সময় চাঁদাবাজি কিংবা ব্ল্যাকমেইল করে আদায় করা
টাকাগুলো তিনি ফাউন্ডেশনের কাজে
লাগাতেন। সুনামগঞ্জে তিনি ত্রাণ বিতরণ
করায় স্থানীয়রা তাকে পল্লী মাতা
উপাধি দিয়েছেন। ফাউন্ডেশনের নামে প্রবাসীদের কাছ
থেকে অনেক টাকা এনেছেন।
এগুলো কী কাজে ব্যবহার
করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি
কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এ
ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে ফ্ল্যাট কিংবা গাড়ির সংখ্যা কতগুলো সে বিষয়ে প্রকৃত
কোনো তথ্য আমাদের দিতে
পারেননি হেলেনা। কখনও ৬টি গাড়ি,
কখনও ৮ গাড়ির কথা
বলছেন। এসব বিষয়ে যারা
তদন্ত করবেন তারা খতিয়ে দেখবেন।’
উল্লেখ্য,
গত ২৯ জুলাই দিবাগত
রাতে গুলশানের ৩৬ নম্বর রোডের
৫ নম্বর বাসা থেকে দীর্ঘ
প্রায় ৪ ঘণ্টা অভিযান
শেষে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র্যাব। এ সময় তার
বাসা থেকে বিদেশি মদ,
অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম
ও হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়। আটকের
পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য
র্যাব সদর দফতরে
নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার
ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয়
গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্মানহানি
করার অপচেষ্টার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার দেখায়।
পরে তাকে গুলশান থানায়
হস্তান্তর করে র্যাব।
জেডআই/এম. জামান