• ঢাকা শুক্রবার
    ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হেলেনা জাহাঙ্গীরের আদ্যপান্ত

প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২১, ১০:০৩ পিএম

হেলেনা জাহাঙ্গীরের আদ্যপান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

নানা কর্মকাণ্ডে আলোচিত নাম হেলেনা জাহাঙ্গীর। তিনি একাধারে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং নারী উদ্যোক্তা। সম্প্রতি 'আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ' নামের একটি সংগঠনের পোস্টারের সূত্র ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন তিনি। ভুঁইফোড় এ সংগঠনের সভাপতি হিসেবে তার নামও এসেছে। যদিও তিনি বলেছেন, তিনি ওই পদ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেননি।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাতে গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় তাকে। এর পর তাকে র‍্যাব সদর দফতরে নেয়া হয়। বাসা থেকে জব্দ করা হয় বিদেশি মদ, অবৈধ ওয়াকি টকি সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, বিদেশি মুদ্রা, চাকু ও হরিণের চামড়া। 

শুক্রবার বিকেলে তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তরও করে র‌্যাব। পরে তার বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আদালতে ৫দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পুলিশের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। শুক্রবার (৩০ জুলাই) রাতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত এ আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা করা হয়েছে। 

হেলেনার জাহাঙ্গীর আদ্যপান্ত:

১৯৭৪ সালের ২৯ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় হেলেনার জন্ম। বাবা মরহুম আবদুল হক শরীফ ছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। ঢাকায় জন্ম হলেও তিনি বড় হন বন্দরনগরী চট্টগ্রামের হালিশহরের মাদারবাড়ী সদরঘাট এলাকায়। পড়াশোনা করেছন স্থানীয় কৃষ্ণচূড়া স্কুলে। চাকরিসূত্রে তার বাবা রাশিয়ায় চলে গেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামে ফিরে যান হেলেনা।

১৯৯০ সালে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ৮ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর হেলেনার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় জাহাঙ্গীর। স্বামীর সংসারে হেলেনা জাহাঙ্গীর পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন ও স্নাতক সম্পন্ন করেন। পড়াশোনা শেষ করে হেলেনা জাহাঙ্গীর শুরুতে চাকরির চেষ্টা করতে বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারভিউও দিলেও এক পর্যায়ে উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর শুরু করেন তার উদ্যোক্তা জীবন।

বিয়ের ছয় বছর পর ১৯৯৬ সালে রাজধানীর মিরপুর-১১ এলাকায় একটি ভবনের দুটি ফ্লোর নিয়ে তিনি প্রিন্টিং ও অ্যামব্রয়ডারি ব্যবসা শুরু করেন। এর মাধ্যমে পোশাক শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের জন্য লোগো ও স্টিকার প্রিন্ট করা হয়। নিট কনসার্ন প্রিন্টিং ইউনিট লিমিটেড দিয়ে শুরু করে জয়যাত্রা গ্রুপের আওতায় একে একে হেলেনা গড়ে তোলেন জয় অটো গার্মেন্টস লিমিটেড, জেসি এমব্রয়ডারি অ্যান্ড প্রিন্টিং এবং হুমায়রা স্টিকার লিমিটেড। সবগুলো প্রতিষ্ঠানেরই ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। সব মিলিয়ে ১২ হাজার কর্মী কাজ করছেন তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।

ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সদস্যপদ পাওয়ার এক মাসের মাথায় নির্বাচনে নেমে ও পরিচালক নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় চলে আসেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। পোশাক শিল্প মালিকদের দুটি সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএরও সক্রিয় সদস্য তিনি। জয়যাত্রা নামে একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশনেরও মালিক তিনি। এ ছাড়া, রোটারি ক্লাবের একজন ডোনার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কারও নিয়েছেন তিনি।

এভাবেই ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে অল্প সময়ের মধ্যে হেলেনা জাহাঙ্গীরের উত্থান হয়েছে। 

রাজনৈতিক অঙ্গনেও হেলেনার দাপুটে উত্থান ও পদচারণা রয়েছে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। সাম্প্রতিক ঘটনার পর তাকে ওই কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। তবে হেলেনা জাহাঙ্গীর জানান, তাকে এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি বা নোটিশ দেয়া হয়নি।

এ ছাড়া তিনি কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি কয়েকটি বিদেশযাত্রার সফরসঙ্গী হয়েছিলেন বলেও জানা যায়।

বর্তমানে আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হলেও এর আগে তার জাতীয় পার্টিতে এবং তারও আগে বিএনপির রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতার খবর পাওয়া যায়। গণমাধ্যমে ওই দুটি দলের প্রধান খালেদা জিয়া ও হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের সঙ্গে ছবিও প্রকাশিত হয়েছে।

প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। যদিও পরে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। নির্বাচনের সময়ে কোনো রাজনৈতিক দলের অংশ না হয়ে স্বতন্ত্র রাজনীতি করার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন তিনি।

শুধু রাজনৈতিকভাবেই নয়, বিভিন্ন সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক সংগঠনগুলোর সঙ্গেও হেলেনা জাহাঙ্গীরের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তিনি প্রায় এক ডজন সামাজিক সংগঠনের নেতৃস্থানীয় দায়িত্বে রয়েছেন।

গুলশান ক্লাব, গুলশান নর্থ ক্লাব, বারিধারা ক্লাব, কুমিল্লা ক্লাব, গলফ ক্লাব, গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাব, বিজিএমইএ অ্যাপারেল ক্লাব, বোট ক্লাব, গুলশান লেডিস ক্লাব, উত্তরা লেডিস ক্লাব, গুলশান ক্যাপিটাল ক্লাব, গুলশান সোসাইটি, বনানী সোসাইটি, গুলশান জগার্স সোসাইটি ও গুলশান হেলথ ক্লাবের সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

সম্রাট/টিআর/ নির্জন

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ