নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
করোনাভাইরাসের বিষণ্নতার মধ্যেই যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দেশেজুড়ে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে ঈদের নামাজ আদায়। তবে করোনা পরিস্থিতিতে ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহগুলোতে এবারও নামাজ হয়নি। মসজিদের ভেতর শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারা দেশে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় ঈদগাহ মাঠে এ বছরও অনুষ্ঠিত হয়নি ঈদের জামাত। এ ছাড়াও শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানেও আয়োজন ছিলো না ঈদের নামাজের। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। বায়তুল মোকাররমে এ বছর মোট পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রত্যেকটি জামাতেই মুসল্লিদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। সকাল সাতটা থাকে প্রতিটি জামাত চলার সময় বিপুলসংখ্যক মানুষকে মসজিদের বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। মসজিদে জায়গা না পেয়ে দক্ষিণ গেটের বাইরে স্টেডিয়ামের সামনের সড়কেও অনেককে নামাজে অংশ নিতে দেখা যায়।
বুধবার (২১ জুলাই) সকাল ৭টায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান।এরপর পর্যায়ক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় শেষ ঈদ জামাত।
সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জামাতের ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী। তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯টায়। এতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা এহসানুল হক। আর পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেমের ইমামতিতে সকাল ১০টায় হয় চতুর্থ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১১টায় পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতের ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ূর রহমান খান।
নামাজ শেষে খুতবা পেশ করা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় দোয়া ও মোনাজাত। এ সময় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করা হয়। পাশাপাশি সম্প্রতি বৈশ্বিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও নিহতদের জন্যও দোয়া করা হয়েছে। করোনা থেকে মুক্তির জন্য মুসল্লিরা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানান।
তবে ঈদের নামাজ শেষে এবারও চোখে পড়েনি মুসল্লিদের হাত মেলানো ও কোলাকুলির দৃশ্য। করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ থেকে বিরত থাকেন মুসল্লিরা।
সবগুলো জামাতেই দক্ষিণ গেট দিয়ে মুসল্লিদের সারি ধরে আর্চওয়ে দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদে এ বছর পর্যায়ক্রমে সকাল ৬টা, সকাল সাড়ে ৭টা ও সকাল ৯টায় তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদুল আজহার জামাত সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ—মসজিদুল জামিআয় অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের এই জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদ জামাতে ইমামতি করেন মসজিদের সিনিয়র ইমাম খতীব ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দীন। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ আদায় করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
পুলিশ সদর দফতরের এ আইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা জানান, সামাজিক সুরক্ষা বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাধারণ মুসল্লিরাও অংশগ্রহণ করেন।
এ ছাড়াও সারা দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে তা তুলে ধরা হল-
রাজশাহী : এ বছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে শাহ মখদুম (রহ.) দরগা-সংলগ্ন ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৭টায় প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ওই জামাতে ইমামতি করেন জামেয়া ইসলামিয়া শাহ্ মখদুম মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা শাহাদাত আলী।
খুলনা : টাউন জামে মসজিদে প্রধান ও প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায়। এতে ইমামতি করেন খতিব মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ। পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯টায় এবং তৃতীয় ও শেষ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে খুলনা সিটি করপোরেশন পরিচালিত বায়তুন নূর জামে মসজিদ কমপ্লেক্সে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে প্রথম ও সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকাল ৭টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৭টায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি বিএল কলেজ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৭টায়।
সিলেট : সিলেটের কোনো খোলা মাঠেই এবার ঈদের জামাত হয়নি। তবে সকাল ৮টায় সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার মসজিদে ঈদের জামাত হয়। একই সময়ে হজরত শাহপরান (রহ.) মাজার মসজিদ ও গাজী বুরহান উদ্দিন (রহ.) মাজার মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
বন্দর বাজারের কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদে সকাল ৭টা, ৮টা ও ৯টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া সিলেটের বন্দরবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, তাঁতীপাড়া হাজী আব্দুল মুকিত জামে মসজিদ ও হাওয়াপাড়া জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ইফাত/টিআর/এএমকে
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন