প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২২, ০১:৪৬ এএম
আগামী
জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বাজারে আসছে স্বাদে-গন্ধে
অতুলনীয় রংপুরের বিখ্যাত হাঁড়িভাঙ্গা আম। তাই শেষ মুহূর্তে বাগান
পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন
আম চাষিরা। এ বছর আমের সাইজ
কিছুটা ছোট ও ফলন
তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে বলে
জানান চাষিরা।
মঙ্গলবার (১৭ মে) সরেজমিনে রংপুর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ এলাকায় দেখা যায়, বাগানে সারি সারি আম গাছ। বাড়ির উঠান ও ধানের জমির আইলসহ চারিদিকে সারি সারি আমের বাগান। গ্রামের প্রতিটি সড়কের দুই ধারে, প্রতিটি বাসা-বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গায় লাগানো হয়েছে আমগাছ। প্রত্যেকটি গ্রাম যেন আমের গ্রাম।
সারি সারি সবুজ গাছে
ঝুলছে থোকা থোকা হাঁড়িভাঙা
আম। গোলাকৃতির মাঝারি আমগুলো নজর কাড়ছে সবার।
আর সেইসঙ্গে চলছে অগ্রীম আমের
বাগান কেনাবেচার পালা। ঢাকা, বরিশাল, চট্রগ্রাম, ফরিদপুরসহ দূর-দূরান্ত থেকে
অনেকেই এসেছেন বাগান কেনার জন্য। মৌসুমী আম ব্যবসায়ী কিংবা
অনলাইনে যারা কেনাবেচা করেন
তারা এসেছেন বাগান দেখার জন্য।
আম বাগানে কথা হয় আম চাষি মেহেদী হাসানের সঙ্গে। তিনি সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর বাগানে আমের ফলন খারাপ হয়েছে। তাই বাইরে থেকে বাগান কিনতে পার্টি আসলেও এখনও বিক্রি করিনি। আরও প্রায় এক মাস সময় আছে, এর মধ্যে আমের আরও পরিচর্চা করে ফলন ভালো করার চেষ্টা করব।’
পদাগঞ্জের
আম চাষি মিলন মিয়া
বলেন, ‘দুই দফা শিলাবৃষ্টি
ও ঝড়ে আমের মুকুলের
ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের অনেক আম চাষির
স্বপ্ন কিছুটা হলেও ভেঙে গেছে।
তবে এবার যেহেতু দেশে করোনার প্রকোপ
নেই তাই আশা করছি
বাইরের জেলাগুলো থেকে এবার বেশি
আড়ৎদার আসবে এখানে। এবং
আমরা ভালো দামে আম
বিক্রি করতে পারব।’
খোড়াগাছ এলাকার আম চাষি রউফ মিয়া বলেন, ‘গতবারের মতো এবারও দুইটি বাগানের আম সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। এখন যিনি বাগান কিনেছেন তিনি বাগান পরিচর্চা করছেন।’
আম
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে তারা
জানান, প্রতি বছর মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ
হাটেই শত কোটি টাকার
আম কেনাবেচা হয়। তবে এবার
আম গাছে প্রচুর মুকুল
এসেছিল কিন্তু ঘন ঘন শিলাবৃষ্টি
আর ঘুর্ণিঝড়ে মুকুলগুলো ঝড়ে যায়। তাই এবার
কি পরিমাণ আম কেনাবেচা হবে
তা এখন বলা সম্ভব
নয় বলে জানান তারা।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‘এবার ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। গতবছরের তুলনায় ফলন কম হলেও হেক্টর প্রতি ১২-১৫ টন আম আসবে। জুনের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে আসতে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও জুনের শেষ সপ্তাহে ভালোভাবেই বাজারে আম আসবে।’
সরকার নির্ধারিত সময়ের আগে আম বাজারজাত না করার জন্য আম চাষিদের অনুরোধ জানিয়ে এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘লাভের আশায় আগাম আম বাজারজাত করলে হাঁড়িভাঙ্গা আমের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাবে না। হাঁড়িভাঙ্গা আমের প্রতি মানুষের খারাপ ধারণা তৈরি হবে।’
দেশ-বিদেশে হাঁড়িভাঙ্গা আম বেশ জনপ্রিয়। এই আম আশবিহীন এবং অত্যন্ত সুমিষ্ট হওয়ায় মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। শুরুতে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় এই আমের ব্যাপক চাষ হতো।
জনপ্রিয়তার
কারণে হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষে প্রসার
ঘটে বর্তমানে রংপুরের বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, নীলফামারীর সৈয়দপুর, সদর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর,
খানসামা, চিরিরবন্দর প্রভৃতি এলাকায় গড়ে উঠেছে এই
আমের বাগান। ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিকভিত্তিতে গড়ে উঠেছে
এসব বাগান।
এএমকে