• ঢাকা শুক্রবার
    ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় বাড়ছে মিশ্র ফলের চাষ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২১, ১১:১২ পিএম

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় বাড়ছে মিশ্র ফলের চাষ

সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম ব্যুরো

কিছু দিন হলো শেষ হয়েছে আমের মৌসুম। উঠতে শুরু করেছে পেঁপে। ক’দিন পরই ফলন আসবে আনারস গাছে। থোকায় থোকায় ধরেছে আমলকী। সতেজ হয়ে উঠেছে লটকন গাছগুলোও। এভাবেই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মিশ্র ফল চাষের এমন অপার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।

পরিকল্পিত এই চাষাবাদে এগিয়ে আসা মানুষেরা বলছেন, পতিত জমির পরিকল্পিত ব্যবহার আর দীর্ঘমেয়াদি কাঠের আবাদ থেকে সরে এসে মিশ্রফল চাষে স্বচ্ছতা এসেছে তাদের। আর পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বলছে, দুর্গম পাহাড়ে বসবাস করা মানুষকে মিশ্র ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব ফলের উৎপাদনে।


খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার দুর্গম শান্তিপুর গ্রাম। পথের ধারে পাহাড়ের ঢালে মনোযোগ দিয়ে বাগান পরিচর্যা করছেন রেশমি চাকমা। দুই একর আয়তনের এই পাহাড়টিই তার আয়রোজগারের একমাত্র অবলম্বন। ক’বছর আগে পতিত থাকলেও এখন সেখানে করেছেন মিশ্র ফল চাষ। গেল মৌসুমে ২ লাখ ২০ হাজার টাকার আম আর এক লাখ টাকার আনারস বিক্রি করেছেন তিনি। ক’দিন বাদেই আমলকী আর লটকনও বাজারে তুলবেন। এরপর ফলন আসবে মাল্টা আর আনারসে। এভাবেই বছর জুড়ে ফলন আসছে শুধু একটি জমি থেকে।

রেশমি চাকমা জানান, মূলত ২০০৬ সালে তিনি আর তার স্বামী মিলে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। শুরুতে পামঅয়েল গাছের চাষ করেছিলেন। কিন্তু পাহাড়ি জমিতে গাছগুলো হৃষ্টপুষ্ট হলেও ফলন আসেনি তেমন। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে জীবিকার সন্ধানে তার স্বামী চলে যান চট্টগ্রামে। সেখানে একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। মাঝে মধ্যে আসেন বাড়িতে। ২০১৬ সাল থেকে পাম গাছ কেটে তিনি নিজেই শুরু করেন ফল চাষ। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্পের ট্রেনিং নিয়ে একটি জমিতে একাধিক ফলন চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। সেই থেকে মিশ্র ফলের চাষ শুরু করেন।


সরেজমিন তার বাগান ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ি ঢালের একপাশে আম আর একপাশে মাল্টা বাগান। প্রতিটি গাছের দূরত্ব ১৫ ফুট। মাঝখানে একটা করে লটকন। কোথাও আমলকী আবার কোথাও তেঁতুল গাছের সমাহার। মাটিতে ঘাসের মতো ছড়িয়ে আছে আনারস গাছ। এককথায় প্রায় দুই একর আয়তনের পাহাড়টিতে আর এক ইঞ্চি জমিও পতিত নেই।

রেশমি চাকমার বাগান থেকে কিছুদুর এগোলে চোখে পড়ে আরেকটি মিশ্র বাগান। যেখানে গাছ থেকে পেপে পেড়ে প্যাকিং করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন কয়েকজন। ওই বাগানের মালিক মুং সুই ত্রিপুরা। তিনি জানান, তার পূর্বপুরুষেরা সবাই আকাশি সেগুনসহ দীর্ঘমেয়াদি কাঠের বাগান করতেন। যেখান থেকে টাকা আসতে সময় লাগত ২৫ থেকে ৩০ বছর। তাই সেখান থেকে সরে এসে কাঠের বাগান কেটে ফলের আবাদ শুরু করেছেন তিনি। এখন একটার পর একটা ফল উঠতে শুরু করে। একটার টাকা দিয়ে অন্যটা পরিচর্যাসহ সংসারের খরচও রোজগার করেন তিনি। শুধু খাগড়াছড়ি নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনি জেলার বিভিন্ন পাহাড়ে এখন এমন মিশ্র ফল বাগানের দেখা মেলে।


মিশ্র ফল চাষ প্রকল্পের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, রাস্তার পাশে বা শহর এলাকার পাহাড়গুলোতে এমন পরিকল্পিত চাষাবাদ হলেও দুর্গম পাহাড়গুলো এখনও রয়েছে পতিত। তাই এসব এলাকার বাসিন্দাদের মিশ্র ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে ফল উৎপাদনে বিপ্লব ঘটানোর পাশাপাশি পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া মানুষদের উন্নয়নের মল স্রোতধারায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। তবে তার জন্য প্রয়োজন সরকারের আন্তরিকতা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা জানান, পার্বত্য এলাকায় বসবাস করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরেই প্রচলিত চাষাবাদে অভ্যস্ত। তাই তাদেরকে এ ধরনের পরিকল্পিত চাষাবাদে আগ্রহী করে তুলতে ব্যাপক প্রচারণার পাশাপাশি দুর্গম এলাকার পিছিয়ে পড়া মানুষ যাতে তার ফলনের ন্যায্যমূল্য পান, সে বিষয়টির নিশ্চয়তা দিতে কাজ করছেন তারা।

এস/এম. জামান

আর্কাইভ