• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কনডম-বিতর্ক থেকে নেত্রী সায়নীর উত্থান কাহিনি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২১, ০৬:১৭ পিএম

কনডম-বিতর্ক থেকে নেত্রী সায়নীর উত্থান কাহিনি

বিনোদন ডেস্ক

ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। এতদিন তার পরিচয় শুধু অভিনেত্রী হলেও এখন তিনি ডাকসাইটে রাজনীতিক। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল যুব কংগ্রেস নেত্রী। রোববার (২১ নভেম্বর) তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খুনের চেষ্টার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে আগরতলা পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ৩০৭, ১৫৩ এবং ১২০ বি ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

টালিগঞ্জের রুপালি পর্দা থেকে অল্প বয়সে রাজনীতিতে পা। ‘কানামাছি’, ‘রাজকাহিনি’, ‘মায়ের বিয়ে’র অভিনেত্রী রাজনীতিতে আসামাত্রই নজরে পড়েন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সায়নী ঘোষকে প্রার্থী করা হয় আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে। নির্বাচনী প্রচারে নেমেই চমক দেখান। জনসংযোগ করার সঙ্গে তিনি দৌড় লাগাতেন ভিড় পিছনে ফেলে। তার সঙ্গে ছুটত জনতা। রুপালি পর্দার তারকাকে আরও একবার কাছ দেখে দেখার জন্য।

ভোটে বিজেপি-র অগ্নিমিত্রা পালের কাছে সাড়ে চার হাজার ভোটে হারলেও দলের অন্দরে পদমর্যাদা বেড়েছে। তার লড়াই কুর্নিশ আদায় করে নিয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বের। ভোটের পর তাকে দেয়া হয় যুব তৃণমূলের সভাপতির পদ। যে পদে তার আগে ছিলেন সঞ্জয় বক্সী, মদন মিত্র, শুভেন্দু অধিকারী, সৌমিত্র খাঁ এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতা।


অভিনয় এবং রাজনীতি হাত ধরাধরি করেই চলে। ছবির সঙ্গে চলছে ওয়েব সিরিজের শুটিংয়ের কাজ। ‘চরিত্রহীন’, ‘আস্তে লেডিজ’, ‘বউ কেন সাইকো’-র মতো ওয়েব সিরিজও জনপ্রিয় হয়েছে।

স্পষ্ট বক্তা সায়নীকে নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। ২০১৫ সালে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের টুইটার হ্যান্ডল থেকে একটি গ্রাফিক শেয়ার হয়েছিল। একটি শিবলিঙ্গের ছবি। তাতে কনডম পরাচ্ছেন এক মহিলা। গ্রাফিক থেকে বোঝা যাচ্ছে, মহিলাকে অ্যাডস সচেতনতার বিজ্ঞাপনের ম্যাসকট ‘বুলাদি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্রাফিকের ভিতরে লেখা, ‘বুলাদির শিবরাত্রি’। পোস্টের ক্যাপশনে ছিল, ‘এর থেকে বেশি কার্যকরী হতে পারেন না ঈশ্বর’। সেই পোস্টের ৬ বছর পরে সায়নীর বিরুদ্ধে কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন উত্তর-পূর্বের ৩ রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত।

অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি শিবের ভক্ত। ১৯৯৬ সালে শিবের পুজো দেয়ার জন্য পায়ে হেঁটে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা করেছিলাম। অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের এই ছবিটি দেখে আমার ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত হয়েছে। আমার আর্জি, আপনারা এই বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে।’


সেই সময় সায়নী জানিয়েছিলেন, ২০১৫ সালে তার টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল। তিনি দেখার পরে ওই পোস্টটি ডিলিট করে দেন। যদিও তাতে বিতর্ক থামেনি। বিধানসভা নির্বাচন পর্বে বারবার এই প্রসঙ্গে বিজেপির পক্ষে আক্রমণ করা হয় আসানসোল দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী সায়নীর বিরুদ্ধে।

বিতর্ক এখানেই থামেনি। টুইট করে সায়নীর যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি হওয়া নিয়ে মন্তব্য করতে তথাগত এর পর ফের টেনে আনেন ‘শিবলিঙ্গ ও কনডম’ প্রসঙ্গ। প্রশ্ন তোলেন সায়নীকে গুরুত্ব দিয়ে কি তৃণমূল হিন্দুদের অপমান করতে চাইছে?

এই প্রশ্নের জবাব দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বলেন, ‘বাংলায় হিন্দু-মুসলমান ভাগাভাগি চলে না। সেটা ভোটের রায়েই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেউ যদি হারের পরেও না শেখে তবে কিছু করার নেই।’


বিতর্ক তার সঙ্গে এক অভিনেত্রীর পুরোনো পোস্ট ঘিরেও। এক সময় তার সঙ্গে এক সহ-অভিনেত্রীর পুরোনো একটি ছবি নিয়ে কাটাছেঁড়া চলে নেটমাধ্যমে। নেটিজেনদের একাংশ নাকি সেই ছবি নিয়ে মিম তৈরি করেন। এর ফলে আবার খারাপ মন্তব্যও ধেয়ে আসে তার দিকে। তবে কোন সহ-অভিনেত্রীর সঙ্গে ছবি নিয়ে এই বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে কোনো কথা বলেননি সায়নী। দীর্ঘ পোস্টের মাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন ফেসবুকে। ‘আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি, অভিনয় করার দরুন এরকম বহু ছবি নানান জায়গাতে আপনারা দেখতে পাবেন। এমনি না পান গুগল সার্চ করলে অবশ্যই পাবেন।’

এমন এক লড়াকু নেত্রীকেই পুরভোটের আগে ত্রিপুরায় প্রচারে পাঠিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। যেখানে বেশ কিছু কর্মসূচিতেও অংশ নিতে দেখা যায় সায়নীকে।

এস/ডাকুয়া

আর্কাইভ