প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২১, ১১:৫৪ পিএম
করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে দ্রুত সচল হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। তার
ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রেও। এ বছর নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে
(চীন বাদে) প্রবাসী আয় বাড়তে চলেছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হারে, যা আগের অনুমানগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। অথচ মাত্র এক বছর আগেই করোনার আঘাতে
রেমিট্যান্স প্রবাহ নেমে গিয়েছিল ১ দশমিক ৭ শতাংশতে। সেই পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে
শুরু করেছে।
গত বুধবার (১৭ নভেম্বর) প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর (চীন বাদে) সম্মিলিত প্রবাসী আয় ৫৮
হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। টানা দ্বিতীয় বছর দেশগুলোতে
প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ও বিদেশি উন্নয়ন সহযোগিতার (ওডিএ) চেয়ে প্রবাসী
আয় বেশি হতে চলেছে।
প্রয়োজনের সময় অভিবাসীদের পরিবারকে বাড়তি সহায়তা দেয়ার তাগিদ রেমিট্যান্স
প্রবাহ বাড়ার পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে। রয়েছে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল আর্থিক
প্রণোদনা এবং তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে রাশিয়া-উপসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনৈতিক গতিশীলতার
প্রভাবও।
বিশ্বব্যাংক বলছে, এ বছর বিশ্বের বেশির ভাগ অঞ্চলেই প্রবাসী আয়
বাড়ছে। তবে সবচেয়ে বেশি বাড়ছে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে, প্রায় ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। এরপর মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, দক্ষিণ এশিয়ায় ৮ শতাংশ, সাব-সাহারান আফ্রিকায় ৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং
ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। এমনকি চীনকে বাদ দিয়ে পূর্ব এশিয়া ও
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রবাসী আয়ও বাড়ছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ।
তবে ২০২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ বেশ চড়া লক্ষ করা গেছে। বিশ্বব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রাইস ডেটাবেজ অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বিশ্বজুড়ে রেমিট্যান্স খরচ ছিল গড়ে ৬ দশমিক ৪
শতাংশ, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি)
নির্ধারিত ৩ শতাংশের দ্বিগুণেরও বেশি।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের মধ্যে
রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ সবচেয়ে বেশি সাব-সাহারান অঞ্চলে। সেখানে ২০০ ডলার পাঠাতে
গেলে আট শতাংশ অর্থাৎ ১৬ ডলার খরচ করতে হয়। বিপরীতে, রেমিট্যান্স খরচ
সবচেয়ে কম দক্ষিণ এশিয়ায়। এ অঞ্চলের দেশগুলোতে রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ গড়ে ৪
দশমিক ৬ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছর দক্ষিণ
এশিয়ায় ১৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় ঢুকতে পারে। এর মধ্যে ভারতের আয় ৪ দশমিক
৬ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে। একই সময় পাকিস্তানের প্রবাসী
আয় বাড়তে পারে রেকর্ড ২৬ শতাংশ। এ বছর দেশটি ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স
পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বছর দক্ষিণ এশিয়ায় এফডিআইয়ের চেয়ে প্রবাসী আয় দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে বলে
জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির হিসাবে, বিশ্বের মধ্যে
দক্ষিণ এশিয়ায় রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ সবচেয়ে কম। তবে এ অঞ্চলে ব্যাংকের মাধ্যমে
রেমিট্যান্স পাঠানোর চেয়ে ডিজিটাল পদ্ধতি বা অন্য চ্যানেলে অর্থ পাঠানোর খরচ এখনও
কম। এ কারণে প্রবাসীরা এসব চ্যানেল ব্যবহারেই বেশি আগ্রহী। এ অবস্থায় রেমিট্যান্স
সংক্রান্ত সাশ্রয়ী নীতি চালুর মাধ্যমে দক্ষিণ এশীয় সরকার ও প্রবাসী উভয়ই লাভবান
হতে পারে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।
শামীম/এম. জামান