প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২১, ১০:৫৪ পিএম
ভয়ংকর এক সৌরঝড় আছড়ে পড়তে যাচ্ছে পৃথিবীতে। এ ধরনের সৌরঝড়কে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘করোনাল ম্যাস ইজেকশান (সিএমই)’ যা পুরো সৌরমণ্ডলের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। মহাজাগতিক এই ঘটনার ফলে ব্যাহত হতে পারে পৃথিবী নামক এই গ্রহের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এমনই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। অবশ্য সত্যিকার অর্থে ব্যাপারটা ঠিক কী ধরনের হবে, তা নিয়ে আরও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের আরভিনে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই অশনিসংকেত দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি পিয়ার রিভিউ পর্যায় পেরিয়ে একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, আসন্ন সৌরঝড়ের মতো ভয়ংকর দুর্যোগ বা সৌরঝড় আধুনিক বিশ্ব দেখেছিল ১৮৫৯ এবং ১৯২১ সালে। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, ১০০ বছর পর ফের ভয়ংকর সৌরঝড়ের মুখোমুখি হতে চলেছে পৃথিবী।
১৯২১ সালে ভয়ংকর সেই সৌরঝড় আছড়ে পড়ায় পৃথিবীর যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তা অভূতপূর্ব। বিজ্ঞানের পরিভাষায় তার নাম ‘ক্যারিংটন অ্যাফেক্ট’। সেই সৌরঝড়ের ঝাপটায় পৃথিবীকে ঘিরে থাকা বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্রে বড় বড় ফাটল ধরেছিল। আর তার ফাঁক দিয়ে ঢুকেছিল অত্যন্ত বিষাক্ত সৌরকণা আর মহাজাগতিক রশ্মি।
এই ঝড় আঘাত হানার পর সূর্য থেকে বের হবে লাখ লাখ টন গ্যাস। ক্ষতিগ্রস্ত হবে পৃথিবীর জিপিএস সিগনাল, স্যাটেলাইটগুলো আর বৈদ্যুতিক গ্রিডগুলো। পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চলে নর্দার্ন অরোরাগুলোও স্পষ্ট হয়ে উঠবে এই সৌরঝড়ের কারণে।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানায়, সূর্য থেকে রশ্মি বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। নাসা নিশ্চিত করেছে, এই রশ্মি এখন সূর্যের কেন্দ্রে আছে আর পৃথিবীর দিকেই তাক করে আছে। যেকোনো সময় এই ঝড় পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ডে আছড়ে পড়লে ভেঙে পড়তে পারে রেডিও সিগনাল। কিন্তু সূর্যের ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়তা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করতে পারবে না। মানুষেরও কোনো ক্ষতি হবে না।
তবে, জিপিস ব্যবস্থা ক্ষতির মুখে পড়বে। সূর্যের তেজ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে দেখা যাবে অরোরা হিসেবে। উত্তর আর দক্ষিণ মেরুতে অরোরা তৈরি করবে এই সৌরঝড়। এই ঘটনায় কেঁপে উঠবে পৃথিবীর চারপাশে থাকা চৌম্বক ক্ষেত্র। দুই মেরুতে আরও ঘনঘন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠতে দেখা যাবে মেরুজ্যোতি।
এই সৌরঝড়ের জন্য কিছুক্ষণের জন্য হলেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ মেরু, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও উত্তর মেরুর যাবতীয় রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থা। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিশ্বের একাংশের বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থাও। ব্যাহত হতে পারে জিপিএস-মোবাইল-বিদ্যুৎ পরিষেবাও।
সে সঙ্গে জিওম্যাগনেটিক অ্যাকটিভিটির প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের হাডসন ভ্যালিতে অরোরা (মেরুপ্রভা) দৃশ্যমান হতে পারে।
পাঁচটি ধাপের মধ্যে এবারের সৌরঝড় ‘জি৩’ পর্যায়ের, এর চেয়ে কম হলে বিদ্যুতের গ্রিড অপারেটরদের জন্য শংকার কারণ হতো বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
কী এই জিওম্যাগনেটিক স্টর্ম?
নাসার মতে, সৌরবাতাস থেকে যখন এক শক্তিশালী তরঙ্গ পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে আছড়ে পড়ে তখন পৃথিবীর আবহে একটা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অবশ্য শুধু তরঙ্গই নয়, সূর্য থেকে এই সময় পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে প্লাজমাও। জানা গেছে, এই ঘটনায় সূর্যের এক্স ১ ফ্লেয়ার বেরিয়ে আসে।
জেডআই/এম. জামান