• ঢাকা শুক্রবার
    ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাল্টা চাষে বেকার তরুণের বাজিমাত

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২১, ০৩:৩৯ এএম

মাল্টা চাষে বেকার তরুণের বাজিমাত

মো. আমিরুজ্জামান, নীলফামারী প্রতিনিধি

পড়াশোনা শেষ করে চাকরি না পেয়ে শুরুর দিকে হতাশ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই হতাশা কাটিয়ে জীবনটাকে নতুনভাবে গড়েছেন নীলফামারীর মনিরুজ্জামান রাজু (২৬)। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন এই ডিপ্লোমা কৃষিবিদ। শুরু করেন মাল্টা চাষ।

 

২০১৮ সালে তার বাবার ২ বিঘা জমি দিয়ে শুরু করেন তিনি। তামাক চাষি বাবা রাজি ছিলেন না ছেলের এই কাজে। কারণ তামাক চাষে অল্প খরচে বেশি লাভ। কিন্তু তিন বছর না যেতেই বাবা স্বীকার করেন ছেলে তার ভুল করেনি। প্রতি বছর বাড়ছে আয় আর চাষের পরিমাণ।

 

নীলফামারীর প্রত্যন্ত ইউনিয়ন পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের ঝাড়পাড়া গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবক ডিপ্লোমা কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান রাজু। চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়াতে গিয়ে সেখান থেকে প্রথম সংগ্রহ করেন মাল্টার চারা। তারপর থেকে তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

 

জানা গেছে, প্রথম বছর ২ লাখ, তার পরের বছর আরও কিছু বেশি। এবার ইতোমধ্যে বিক্রি করেছেন ২ লাখ টাকা। আশা করছেন, আরও ৩ খেকে ৪ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি হবে। তার ইচ্ছা এই বাগানে তিনি নতুন নতুন ফলের চারা উৎপাদন করবেন।

 

বাগানের মালিক মনিরুজ্জামান রাজু সিটি নিউজ ঢাকা’কে জানান, প্রথমে এলাকার মানুষ তার বাগান করা দেখে অনেক বিরূপ মন্তব্য করেছেন। এখন তারাই বাগান করার জন্য পরামর্শ নিচ্ছেন। তার বাগানের মাল্টাও সুমিষ্ট। ফলে অনেকের কাছে চাহিদাও বেশি। তিনি খুচরা ও পাইকারি মাল্টা বিক্রি না করে সব অনলাইন অর্ডারে বিক্রি করেন। এতে করে লাভ বেশি থাকে এবং মাল্টাটি ভোক্তাপর্যায়ে পৌঁছে বলে তার ধারণা।

 

তিনি বলেন, ঢাকা, সিলেট ও ময়মনসিংহ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি জেলায় কুরিয়ার সার্ভিসে মাল্টা পাঠান। তার বাগানে বারী-১, পাকিস্তানি মাল্টা, বাউ-৩ ও ভেরিগেড মাল্টা রয়েছে। প্রায় ৫ বিঘা জমিতে ৩৫০টির উপরে মাল্টার গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ঝুলে পড়েছে মাল্টা। জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য মাটির নীচ দিয়ে পাইপ বসিয়েছেন। যাতে জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয়।

 

মাল্টা বাগানের শ্রমিক ও এলাকাবাসী বলেন, এই বাগানের কারণে আমরাও কাজ পেয়েছি, দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন বাগান দেখতে আসছেন। বাগান দেখে অনেকে করার উৎসাহ দেখাচ্ছেন। ইতোমধ্যে নিজের উৎপাদিত মাল্টার চারায় ৩টি বাগান করে দিয়েছেন। রাজুর মাল্টার বাগানে পেঁপে, আমড়া, লেবু ও অন্যান্য ফল ও ফুলের বাগান করেছেন।

 

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ৫ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ ছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির উন্নত মানের ফলের চারা উৎপাদনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজু। তার মতো অন্যান্য বেকার তরুণেরা এগিয়ে এলে অবশ্যই তামাক চাষ কমে যাবে।

 

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া এ ধরনের মাল্টা বাগান করার ক্ষেত্রে খুবই উপযোগী। যে কেউ লাভজনক সমন্বিত বাগান করতে এগিয়ে এলে চারা নিয়ে অনায়াসেই নতুন বাগান করতে পারবেন।

 

তিনি বলেন, রাজুর অর্গানিক বাগানে মাল্টার চাষ আমাকে মুগ্ধ করেছে। তার এই কাজ অনেককে অনুপ্রাণিত করবে।

 

টিআর/এম. জামান

আর্কাইভ