প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২১, ০৬:২৪ পিএম
সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসিবি) সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে
মামলা করেছে দুদক। ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে
মামলা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২১
অক্টোবর) দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার অন্য পাঁচ আসামি হলেন, এসবিএসি ব্যাংকের খুলনা শাখার সাবেক
এমটিও তপু কুমার সাহা, ব্যাংকের মতিঝিলে বিএসসি টাওয়ার শাখার
সিনিয়র অফিসার বিদ্যুৎ কুমার মণ্ডল, এফএভিপি ও অপারেশন ম্যানেজার মোহা. মঞ্জুরুল
আলম, সাবেক শাখা প্রধান এস এম ইকবাল মেহেদী ও ব্যাংকের খুলনা শাখার ইও এবং
ক্রেডিট ইনচার্জ মো. নজরুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে
বলা হয়, ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালে অসৎ
উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি
করে মোট ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন এস এম আমজাদ
হোসেনসহ অভিযুক্তরা। পরে ওই অর্থ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও
সিঙ্গাপুরে পাচার করেছেন। ভুয়া ভিজিট প্রতিবেদন ও ভুয়া স্টক লট তৈরি করে খুলনা
বিল্ডার্স নামে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মালিককে ঋণ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন। এই ঋণের
বেনিফিসিয়ারীরা ব্যাংক থেকে ২০ কোটি ৬০ কোটি টাকা উত্তোলন করে বিভিন্ন লেয়ারিংয়ের
মাধ্যমে ওই অর্থ বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির হিসেবে স্থানান্তর করা হয়। আসামিরা
সংঘবদ্ধভাবে জড়িত থেকে আত্মসাৎ করা অর্থ নিজেদের ভোগ দখলে রাখেন। আসামিদের
বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি-১৮৬০ ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর সম্পৃক্ত ধারায়
মামলাটি করা হয়। গত ২০১৫ সালের ৮ আগস্ট থেকে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ওই
পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে।
এজাহারে আরও বলা
হয়, অনুসন্ধানকালে রেকর্ডপত্র, সংশ্লিষ্টদের
বক্তব্য পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ
অ্যান্ড ফার্মস থেকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট খুলনা বিল্ডার্স লিমিটেড নামের
প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা
ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে এস এম আমজাদ হোসেন ও ৪৯ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা তার
স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের নামে। নিবন্ধনের পাঁচ বছর পর গত ২০১৫ সালের ৮ আগস্ট ওই
প্রতিষ্ঠানের নামে এসবিএসি ব্যাংকের খুলনা শাখায় একটি চলতি (হিসাব
নম্বর-০০০৬১১১০০৪০৯৬) খোলা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১ জুন কোনো ধরনের সহায়ক
জামানত ছাড়াই খুলনা বিল্ডার্সের অনুকূলে ১৯ কোটি টাকা এসওডি (জেনারেল) ঋণ সীমা
প্রদান করার জন্য তৎকালীন চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন আবেদন করেন।
গ্রাহকের
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের খুলনা শাখা জরুরি ভিত্তিতে চলতি মূলধনের
প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আমজাদ হোসেনের পরিচালনাধীন প্রতিষ্ঠান খুলনা বিল্ডার্সের
অনুকূলে এসওডি ঋণসীমা ১৯ কোটি টাকা ও ১২ শতাংশ সুদ হারে এক বছরের মেয়াদে মঞ্জুরির
জন্য আমজাদ হোসেনের নির্দেশ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব যাচাই না করেই গ্রাহকের
আবেদনের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ঋণ প্রস্তাব তৈরি করেন ব্যাংকের খুলনা শাখার কর্মকর্তা
এমটিও তপু কুমার সাহা। ওই ঋণ প্রস্তাবে সুপারিশ করে স্বাক্ষর করেন শাখার সিনিয়র
অফিসার বিদ্যুৎ কুমার মন্ডল, এফএভিপি ও অপারেশন ম্যানেজার মোহা.
মঞ্জুরুল আলম, ভিপি ও শাখা প্রধান এস এম
ইকবাল মেহেদী।
দুদক জানায়,
গ্রাহকের
আবেদনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ২০১৬ সালে ১ জুন তারিখেই ওই ঋণ প্রস্তাব খুলনা শাখা
থেকে প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট ডিভিশনে প্রেরণ করা হয়। এরপর কোনো প্রকার ক্রেডিট
মিটিং ছাড়াই ওই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৯ কোটি অনুমোদনের জন্য ব্যাংকের প্রধান
কার্যালয়ের ঋণ পর্যালোচনা কমিটির মতামতের আলোকে বোর্ড মেমো পর্ষদ সভায় অনুমোদনের
জন্য উপস্থাপন করা হয়। ব্যাংকের নথিতে ক্রেডিট কমিটির কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
এস/এম. জামান