• ঢাকা মঙ্গলবার
    ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শঙ্কা কাটিয়ে মাসকাটে গর্জে উঠল টাইগাররা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২১, ০২:১১ এএম

শঙ্কা কাটিয়ে মাসকাটে গর্জে উঠল টাইগাররা

জাফিউল ইসলাম বাবু

বাংলাদেশ কি পারবে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে যেতে? কত ভয়, কত শঙ্কা আর অনিশ্চয়তা ভর করেছিল টাইগার সমর্থকদের মনে। স্কটল্যান্ডের কাছে অপ্রত্যাশিত হারের পর এই শঙ্কা জেগেছিল। তবে সব অনিশ্চয়তা দূরে ঠেলে ঠিকই সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, সাকিব আল হাসানরা। ওমানের রাজধানী মাসকাটের আল-আমিরাত স্টেডিয়ামে রেকর্ড গড়া জয়ে উল্লাসে মাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশে বসে সেই উল্লাসে শামিল হয়েছে গোটা দেশ।

বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৮২ রানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে নেমে ৯৭ রানে অলআউট হয়েছে পাপুয়া নিউ গিনি। তাতে ৮৪ রানের জয় পেয়েছে টাইগাররা। টি-টোয়েন্টিতে রানের হিসেবে টাইগারদের এটি সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে  ৭১ রানের জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। রেকর্ড গড়া এই জয়ে বিগ্রুপে শীর্ষে বাংলাদেশ। তবে পরের ম্যাচে ওমানকে হারালে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে স্কটল্যান্ডই।

এ দিন আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে চতুর্থ ওভারেই দুই উইকেট হারায় পাপুয়া নিউ গিনি। তৃতীয় ওভারে আঘাত হানেন সাইফউদ্দিন। তৃতীয় ওভারে তার ফুল লেংথের বলটা ফ্লিক করতে গিয়ে মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন লেগা সিয়াকা।

সাইফউদ্দিনের পর তাসকিন আহমেদ পাপুয়া নিউ গিনির দ্বিতীয় উইকেট তুলে নিলেন। নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট পান বাংলাদেশি পেসার। অধিনায়ক আসাদ ভালাকে এক হাতের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরান উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান। ৯ বলে ৬ রান করেন ভালা।

এরপর বোলিংয়ে এসেই জোড়া শিকার করেন সাকিব আল হাসান। এই স্পিনারের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই ক্যাচ দিলেন চার্লস আমিনি। ২ বল পর ক্যাচ দিয়েছেন সাইমন আটাইও। এবার অবশ্য বেশ সহজই ছিল সেটা, ভুল করেননি মেহেদী হাসান। ৪ বলের ব্যবধানেই সাকিব তুলে নেন ২ উইকেট। প্রথম ওভারে ২ রানে ২ উইকেট নেওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় ওভারে দেন ৪ রান। তৃতীয় ওভারে আরও নিজের তৃতীয় উইকেট শিকার করেন তিনি। সেসে বাউকে (৭) মোহাম্মদ নাঈমের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরত পাঠান সাকিব।

সাকিব ঝড়ের পর নিজের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট পান মেহেদী হাসান। নরমান ভানুয়াকে বাউন্ডারি সিমানায় মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে বিদায় করেন এই স্পিনার।

এরপর নিজের চতুর্থ ওভারে আবারও বোলিংয়ে আসেন সাকিব। এবার হিরি হিরিকে বিদায় করে ম্যাচের চতুর্থ উইকেট শিকার করে শহীদ আফ্রিদিকে ছুঁয়ে ফেলেন এই টাইগার স্পিনার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন আফ্রিদির সমান ৩৯ উইকেট সাকিবের। আফ্রিদি ৩৯ উইকেট নিতে খেলেছিলেন ৩৪ ম্যাচ। সাকিবের এটি ২৮তম ম্যাচ।

১৫তম ওভারে আবারও বোলিংয়ে আসেন সাইফউদ্দিন। এবার চ্যাড সোপারকে নিজেত দ্বিতীয় শিকার বানান এই পেসার। কিপলিং ডরিগা একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করলেও জয়ের জন্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। ২০তম ওভারের তৃতীয় বলে তাসকিনের শিকার হয়ে বিদায় নেন ডেমিয়েন রাভু। এরই সঙ্গে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। তাতে সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত হয় লাল-সবুজ দলের।

ব্যাটে বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে ৪৬ রান করার পর বোলিংয়ে ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ৯ রান দিয়ে ৪টি উইকেট শিকার করেন এই বিশ্ব খ্যাত এই স্পিনার। তাসকিন ও সাইফউদ্দিন ২টি করে এবং মেহেদী হাসান ১টি উইকেট পেয়েছেন।

রোববার (২১ অক্টোবর) গ্রুপ পর্বে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে ব্যাট করতে নেমে সূচনা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ।

লিটন দাসের সঙ্গে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে নেমে প্রথম ওভারের প্রথম বলেই খোঁচা মেরে বেঁচে গিয়েছিলেন মোহাম্মদ নাঈম। কিন্তু দ্বিতীয় বলে আর বাঁচতে পারেননি। কাবুয়া ভাগি-মোরেয়ার বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন এই ওপেনার। আগের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। এই ম্যাচে রানের খাতাই খুলতে পারেননি নাঈম।

আগের ম্যাচে তিন নম্বরে নেমেছিলেন মেহেদী হাসান। তবে এই ম্যাচে নেমেছেন সাকিব আল হাসান। লিটন দাসের সঙ্গে জুটি বাঁধেন এই অলরাউন্ডার। চতুর্থ ওভারে দুইজনেই ছক্কা হাঁকান। তাতে স্কোর বোর্ডে ১৬ রান যোগ হয় এই ওভার থেকে।

সাকিব-লিটনের ব্যাটে ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে শেষে ১ উইকেটে ৪৫ রান তোলে বাংলাদেশ। তবে অষ্টম ওভারের প্রথম বলেই এই জুটি ভাঙেন কাবুয়া ভাগি-মোরেয়া। লিটন দাসকে বিদায় করেন তিনি। বিদায়ের আগে সাকিবের সঙ্গে ৫০ রানের জুটি গড়েন তিনি। এর মধ্যে লিটনের রান ২৩ বলে ১ চার আর ১ ছক্কায় ২৯।

লিটনের বিদায়ের পর নেমে সুবিধা করতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। ৮ বলে ৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটার। তবে অনডাউনে নামা সাকিব এক প্রান্ত ধরে রেখে স্কোর বোর্ডে দলের রান বাড়াচ্ছিলেন। অতি গরমে খানিকটা অস্বস্তিতে ভুগেছিলেন তিনি।

অস্বস্তি কাটাতে ভালার বলে দারুণ এক ছক্কা হাঁকান সাকিব। ছয়ের পর আবারও তুলে মারতে গিয়ে চার্লস আমিনির দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হলেন সাকিব। অফস্টাম্পের বাইরের বলটা টেনে মারতে গিয়েছিলেন, তবে টাইমিং হয়নি ঠিকঠাক। বাউন্ডারির কাছাকাছি থেকে অনেকটা ছুটে এসে সামনে ঝাঁপিয়ে টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত অন্যতম সেরা ক্যাচ নিয়েছেন আমিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ৩৭ বলে ৩ ছক্কায় ৪৬ রান করেন তিনি।

এরপর দুর্দান্ত ব্যাট করে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। পরের বলেই ফিরে যান তিনি। ডেমিয়েন রাভুর বল তুলে মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ধরা পড়ে বিদায় নেন তিনি। তার আগে ২৮ বলে ৫০ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এ ওভারের শেষ বলে আউট হন নুরুল হাসানও। শর্ট লেংথের বলটা আপার-কাট করতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি, ফিরেছেন কোনো রান না করেই। তবে ১৪ বল থেকে ২০ রান নিয়ে সাজঘরে ফেরেন আফিফ।

শেষ ওভারে সাইফউদ্দিনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ১৮১ রানের বিশাল পুঁজি পায় বাংলাদেশ। মাত্র ৬ বলে ১টি চার আর ২টি ছক্কায় ১৯ রান করেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড গড়ল টাইগাররা।

এবারের বিশ্বকাপে যাত্রাটা শুভ হয়নি টাইগারদের। স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হেরে মিশন শুরু করে বাংলাদেশ। তবে পরের ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে ২৬ রানের জয়ে ঘুড়ে দাঁড়ায় লাল-সবুজ দল। গ্রুপের শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউ গিনিকে হারিয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায় লাল-সবুজের বাংলাদেশ।

জেডআই/এম. জামান

আর্কাইভ