• ঢাকা শনিবার
    ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এয়ারফোন ব্যবহারে যে ক্ষতি হয় কানে

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২১, ১১:৫৭ এএম

এয়ারফোন ব্যবহারে যে ক্ষতি হয় কানে

সিটি নিউজ ডেস্ক

করোনাভাইরাসে প্রাদুর্ভাবের ফলে লকডাউনে বাড়ি থেকে অনলাইন ক্লাস এবং হোম অফিসের কারণে হেডফোনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘরে কিংবা বাইরে থাকার সময় অনেকে কানে হেডফোন গুঁজে রাখেন? হেডফোন কিংবা এয়ারফোন ছাড়া থাকতে পারেন না! যদি এমন অভ্যাস থাকে তবে এখনই সাবধান হতে হবে। কেননা অতিরিক্ত এয়ারফোন ব্যবহারে কত বড় ক্ষতি করছেন তা আপনি নিজেও জানেন না।

এয়ারফোন কানের মোম সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়। মাঝেমাঝে কিছু সময়ের জন্য এয়ারফোন ব্যবহার তেমন ক্ষতি না করলেও দীর্ঘ সময় এটির ব্যবহার অত্যন্ত ক্ষতিকর। এয়ারফোন আমাদের কানের ময়লার সুরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিচ্ছে।

কানের ময়লা বা কানের খইল নিয়ে অনেকেই খুব অস্বস্তিতে ভোগেন। তারা প্রায়ই কান পরষ্কারের জন্য কটনবাড কিংবা অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু এই খইল আমাদের কানে কী ভূমিকা রাখছে তা জানলে অনেকেই এই কাজটি করা থেকে বিরত থাকবেন।

এক্ষেত্রে প্রথমেই বলে রাখা উচিত কানের ময়লা বা খইল হলো এক ধরনের মোম। মানুষসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর কানে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যা উৎপন্ন হয়। শ্রবণেন্দ্রিয়ের সুরক্ষা দিতে আমাদের শরীর নিজ থেকেই এটি উৎপন্ন করে। মূলত কানের ভেতরে তৈল ও ঘর্মগ্রন্থিগুলোর নিঃসরণে এই বিশেষ সুরক্ষা বর্জ্য তৈরি হয়।

তৈলাক্ত গুণের কারণেই কানের খইল প্রাথমিক অবস্থায় আঁঠালো হয়। কানের ভেতরের অংশকে এটি আর্দ্র ও কোমল রাখতেও ভূমিকা রাখে। আমাদের শরীর কানের স্পর্শকাতর স্থানটির চারপাশে এই মোম ছড়িয়ে দেয় যেন কোনও পোকা-মাকড়, ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং পানি সেখানে প্রবেশ করতে না পারে। ধুলাবালি আর নানা ধরনের অনুজীব এই আঁঠালো অংশে গিয়ে আটকা পড়ে।

আঁঠালো অবস্থায় কানের খইল হয় বাদামী। এটি যত শুকোতে থাকে, এর রঙ ততই সাদা হতে শুরু করে এবং প্রাকৃতিক নিয়মেই এটি শরীরের বাইরে চলে আসে।


কিন্তু এয়ারফোন কানের এই নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়। এক গবেষণার বরাতে সায়েন্স এলার্টের প্রতিবেদন বলছে, এয়ারফোন কানের মোমকে সংকুচিত করে তোলে। এটির তারল্যভাব কমে যায় এবং শক্ত হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিকভাবে শরীরের ভেতর থেকে এর বেরিয়ে যাওয়ার পথেও বাধা সৃষ্টি করে এয়ারফোন।

এর ফলে কানের স্পর্শকাতর অঞ্চলটিতে শ্বেতরক্ত কণিকা গিয়ে জমা হয় এবং অন্যান্য কোষের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে।

কানের ভেতরে স্বাভাবিক বাতাস চলাচলেও বাধা সৃষ্টি করে এয়ারফোন। এর ফলে কানের মোম স্বাভাবিক নিয়মে শুকায় না। দীর্ঘ সময় ধরে না শুকানোর ফলে এর মাঝে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাসজনিত সংক্রমণ ঘটে।

এ ছাড়া গ্রন্থিগুলোকে আরও বেশি হারে নিঃসরণ ঘটাতেও উদ্বুদ্ধ করে এয়ারফোন। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হারে মোম তৈরি হতে থাকে। যা উপকারের বদলে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।


এ ধরনের প্রতিক্রিয়া খুব দ্রুত শ্রবণেন্দ্রিয়র ওপর প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া কানে ব্যথা, মাথা ঘোরানো, ভোঁ ভোঁ আওয়াজ, চুলকানি ও মাথা ঝিম ঝিম করার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে।

মোট কথা, দীর্ঘ সময়ের জন্য কানকে আবদ্ধ করে রাখা শ্রবণেন্দ্রিয়র ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে গবেষকেরা বলছেন, এয়ারফোনের বদলে হেডফোন এ ধরনের ক্ষতি কিছুটা কম করে।

গবেষকদের আরেকটি পরামর্শ হলোপরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য যেহেতু কানেরই নিজস্ব একটি ব্যবস্থা রয়েছে, তাই কানের ভেতর কোনও কিছু দিয়ে গুতাগুতি না করাই ভালো।

জেডআই/এএমকে

আর্কাইভ