• ঢাকা মঙ্গলবার
    ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, নির্মাণ হবে ৯৭ ভবন

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২১, ১১:৩৬ এএম

ঢাবির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, নির্মাণ হবে ৯৭ ভবন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির শতবর্ষ উদযাপন চলছে। এর বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ মূল অনুষ্ঠান আগামী ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। আর এই অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিয়েছে ঢাবি। যা বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক চিত্র। মূলত কোনো প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাই মাস্টারপ্ল্যান হিসেবে পরিচিত, যার মধ্যে সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে।

ঢাবির এই প্ল্যান বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক চিত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় মাস্টারপ্ল্যানটি অনুমোদন পেলেও প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত মতামতের পরই এটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। প্ল্যানের মধ্যে রয়েছে-নতুন করে ৯৭টি ভবন নির্মাণ, পুরোনোগুলো সংস্কার, টিএসসিকে আধুনিক করে গড়া, লাইব্রেরি সংস্কার, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে সোলারের আওতায় আনা, শিক্ষার্থীদের হাঁটার জন্য আলাদা লেন করা, সাইকেল চলাচলের জন্য আলাদা লেন করাসহ আরও বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে এই মাস্টারপ্ল্যানে।

সোমবার (১১ অক্টোবর) মাস্টারপ্ল্যানটি দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেখে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

তিন ধাপে যে ৯৭টি নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে এর মধ্যে একাডেমিক ভবন থাকবে ১৭টি, ছাত্রী হল ৮টি, ছাত্রদের ১৬টি। এছাড়া ২২টি হাউস টিউটর ভবন, শিক্ষক ও অফিসারদের জন্য ১২টি, স্টাফদের জন্য ৯টি ভবন থাকছে। অন্য ক্যাটাগরিতে থাকছে ১৩টি ভবন। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ভবন নির্মাণের পরিকল্পনাটি তুলে ধরা হলো-

একাডেমিক ভবন

প্রথম ধাপে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির হেরিটেজ অংশ সংরক্ষণ করে ১২ ও ৬ তলা ভবন, আইএসআরটি ও ফার্মেসি বিভাগের স্থলে ১০ তলা ভবন, বোটানি ডিপার্টমেন্টের জন্য তিনতলা ভবন, চারুকলায় ভাস্কর্য বিভাগ, সিরামিকস, গ্রাফিক ডিজাইন, ইতিহাস ভবন ও টিচার্স লাউঞ্জ ভেঙে ৫ তলা ভবন, বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে দশতলা শহীদ খাজা নিজামুদ্দীন ভূইয়া এমবিএ টাওয়ার, নীলক্ষেতের প্রেস ভবন ও পুলিশ ফাঁড়ি ভেঙে ১১ তলা একাডেমিক ভবন ও ৫ তলা প্রেস ভবন করা হবে।

দ্বিতীয় ধাপে কাজী মোতাহার হোসেন ভবন ভেঙে ৬ তলা বিশিষ্ট ভবন (ব্লক ১, ২ ও ৩) ও ২ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন (ব্লক ৪) করা হবে। বর্তমানে ২ তলা বিশিষ্ট বিজ্ঞান লাইব্রেরি ভেঙে ৬ তলা বিশিষ্ট লাইব্রেরি ভবন ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন ভেঙে ৩ তলা ভবন করা হবে।

তৃতীয় ধাপে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ইনস্টিটিউটে ১০ তলা একাডেমিক ভবন, বর্তমান আইবিএ ভবন ভেঙে ১২ তলা ভবন, গ্রিনরোডের টিনশেড স্কোয়াড ভেঙে ১০ তলা (ব্লক ১)ও ৫ তলা (ব্লক ২) ভবন করা হবে এবং আইবিএ হোস্টেল ভেঙে ১০ তলা (ব্লক ১) ও ৬ তলা (ব্লক ২) একাডেমিক ভবন। পরমাণু কমিশনে ১৫ তলা (ব্লক ১) ও ৩ তলা (ব্লক ২) বঙ্গবন্ধু পিস অ্যান্ড লিবার্টি ইনস্টিটিউট করা হবে। হাজারীবাগে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৩ তলা ভবন ভেঙে ১০, ৪ ও ৬ তলা একাডেমিক ভবন।

ছাত্রদের জন্য

প্রথম ধাপে নির্মাণ করা হবে শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক হলে ১২ ও ৮ তলা ভবন এবং ১১ তলা হাউস টিউটর ভবন, সূর্যসেন হলের উত্তর ব্লক ভেঙে ১১ তলা ভবন, হাউস টিউটর ভবন ভেঙে ১১ তলা হাউস টিউটর ভবন নির্মাণ, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে শহীদ আতাউর রহমান খাদিম ভবন ও ক্যাফেটেরিয়া ভেঙে ১৫ তলা ও ৬ তলা ভবন এবং প্রভোস্ট বাংলো ভেঙে ১১ তলা হাউস টিউটর ভবন।

দ্বিতীয় ধাপে ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রভোস্ট বাংলো ভেঙে ১২ তলা ভবন, ১১ তলা হাউস টিউটর ভবন, শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক হলে বর্তমান মেইন বিল্ডিং এ ১৫ তলা ভবন (ব্লক ১, ২) ও চার তলা ভবন (ব্লক ৩) এবং হল অডিটোরিয়াম ভবন ভেঙে ১১ তলা হাউস টিউটর ভবন করা হবে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের টিনশেড ভেঙে ১২ তলা (ব্লক ১) ও ১ তলা ভবন ভেঙে ৬ তলা (ব্লক ২) ভবন করা হবে এবং বর্তমান হাউস টিউটর ভবন ভেঙে ১১ তলা হাউস টিউটর ভবন করা হবে।

স্যার এএফ রহমান হলের ক্যান্টিন ও প্রভোস্ট বাংলো ভেঙে ১২ তলা (ব্লক ১) ও ৬ তলা (ব্লক-২) ভবন করা হবে। বর্তমান হাউস টিউটর ভবন ভেঙে ১১ তলা করা হবে। সূর্যসেন হলের মেইন বিল্ডিং ভেঙে ৬ ও ৪ তলা ভবন এবং ১১ তলা হাউস টিউটর ভবন করা হবে। পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হল ১০ তলা (ব্লক ১) ও ৪ তলা (ব্লক ২) ভবন নির্মাণ করা হবে।

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য হাজারীবাগে ড. কুদরত-ই-খোদা হলে ১০ তলা (ব্লক ১), ৮ তলা (ব্লক ২) ও ৫ তলা (ব্লক৩) ভবন নির্মাণ করা হবে। একইসঙ্গে কেয়া ভবন ভেঙে ১১ তলা হাউস টিউটর ভবন করা হবে।

তৃতীয় ধাপে কবি জসীম উদ্‌দীন হলের মেইন বিল্ডিং ভেঙে ১১ তলা (ব্লক ১), ৫ তলা (ব্লক ২), ৪ তলা (ব্লক ৩) ও ৩ তলা (ব্লক ৪)ভবন এবং ১১ তলাবিশিষ্ট হাউস টিউটর ভবন করা হবে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ৬ তলা (ব্লক ১) ও ৪ তলা (ব্লক) এবং ৬ তলাবিশিষ্ট হাউস টিউটর ভবন করা হবে। এছাড়াও গ্রিন রোডে ৮ তলা (ব্লক ১) ও ৩ তলা (ব্লক ২) বিশিষ্ট ছাত্রদের ভবন, শহীদুল্লাহ হলে ৬ তলাবিশিষ্ট হাউস টিউটর ভবন করা হবে।

ছাত্রীদের জন্য

প্রথম ধাপে নির্মাণ করা হবে নিউমার্কেট এলাকায় শাহনেওয়াজ হোস্টেলের জায়গায় ১৫ তলা জয়বাংলা হল, ১১ তলা হাউস টিউটর ভবন, শামসুন নাহার হলে হাউস টিউটর ও গ্যারেজ ভেঙে ১০ তলা ও ৬ তলা ভবন এবং ১১ তলা হাউস টিউটর ভবন (২০ ইউনিট), শহীদ অ্যাথলেট সুলতানা কামাল হোস্টেলের এক্সটেনশন হিসেবে ১১ ও ৮ তলা ভবন এবং ১১ তলা হাউস টিউটর ভবন, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে প্রভোস্ট, হাউস টিউটর ও সিকদার মনোয়ার ভবন ভেঙে ১০ তলা ভবন এবং ১১ তলা হাউস টিউটর ভবন।

দ্বিতীয় ধাপে নবাব ফৈজুন্নেসা ছাত্রী নিবাসে ১০ তলা বিশিষ্ট এক্সটেনশন ভবন করা হবে ইশা খান আবাসিক এলাকার ৮৭ নম্বর ভবন ভেঙে। ইশা খান আবাসিক এলাকার ৩১ নম্বর ভবন ভেঙে দুই তলাবিশিষ্ট ছাত্রীদের জিমনেশিয়াম করা হবে।

তৃতীয় ধাপে ছাত্রীদের জন্য গ্রিনরোডে টিনশেড ভেঙে ১২ তলা (ব্লক ১), ৬ তলা (ব্লক ২), ৪ তলা (ব্লক ৩) ও ৩ তলা (ব্লক ৪) হল করা হবে। একইসঙ্গে ১১ তলা হাউস টিউটর ভবন করা হবে। রোকেয়া হলের চামেলী ভবন, প্রভোস্ট বাংলো, টিচার্স কোয়ার্টার ভেঙে ১০ তলা (ব্লক ১) ও ৮ তলা (ব্লক-২) ভবন, ১ তলাবিশিষ্ট লাইব্রেরি ভবন ভেঙে ১১ তলা হাউস টিউটর ভবন, কবি সুফিয়া কামাল হলের এক্সটেনশন হিসেবে রেলওয়ের নিকটে দশ তলাবিশিষ্ট ভবন, ৬ তলা হাউস টিউটর ভবন (১০ ইউনিট)।

শিক্ষকদের জন্য

সূর্যসেন হল ও মুহসীন হল প্রভোস্ট বাংলো ভেঙে দুই তলাবিশিষ্ট প্রো-ভিসি বাংলো নির্মাণ করা হবে। দক্ষিণ ফুলার রোডের শিক্ষকদের ১২ ও ১৩নং ভবন ভেঙে ১৫ তলা (১১২ ইউনিট) রেসিডেন্সিয়াল টাওয়ার ও ধানমন্ডিতে ৭ তলা (২৪ ফ্ল্যাট) ব্যাচেলর টিচারদের জন্য ভবন হবে।

দ্বিতীয় ধাপে বর্তমান প্রভোস্ট কমপ্লেক্সে ১০ তলা ভবন ও ইন্টারন্যাশনাল হলের পাশে রশিদুল হাসান ভবন ভেঙে দশ তলা প্রভোস্ট কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হবে। দক্ষিণ ফুলার রোডের ১১, ৫৮ ও ১৫, ১৬, ১৭ নম্বর ভবন ভেঙে ১৫ তলাবিশিষ্ট (প্রতি ভবন ১১২ ইউনিটের) দুটি ভবন শিক্ষকদের রেসিডেন্সিয়াল টাওয়ার নির্মাণ করা হবে।

স্টাফদের জন্য

মাস্টারপ্ল্যানের দ্বিতীয় ধাপে বর্তমান আজিমপুরের বটতলায় অবস্থিত ৪, ৫ ও ৭নং ভবন ভেঙে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ২০ তলা (১৫২ ইউনিট) ভবন করা হবে। একই এলাকার ৪২ ও ৪৩ নম্বর ভবন ভেঙে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ২০ তলা (১৫২ ইউনিটের) ভবন করা হবে।

নীলক্ষেত আবাসিক এলাকার ২২, ২৬, ও ২৭ এবং ২৪, ২৫ নম্বর ভবন ভেঙে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য নির্মাণ করা হবে ১২ তলা করে (৮৮ ইউনিটের) দুইটি ভবন। দক্ষিণ নীলক্ষেত আবাসিক এলাকার ৫৪ ও ৭৫ নং ভবন ভেঙে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ১২ তলা (৮৮ ইউনিটের) ভবন নির্মাণ করা হবে।

তৃতীয় ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য হাজারীবাগে দুইটি (দশ তলা) সর্বমোট ৭২ ইউনিটের ভবন করা হবে। দক্ষিণ নীলক্ষেত আবাসিক এলাকার ৪০, ৪১ ও ৮৪ নম্বর ভবন ভেঙে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর জন্য ১২ তলা ৮৮ ইউনিটের ভবন করা হবে। একই এলাকার ৬০, ৬৮, ৭১,৭২ ও ৭৩ নম্বর ভবন ভেঙে চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারীদের জন্য অনুরূপ ভবন করা হবে। গ্রিনরোডে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ১০ তলা ৩৬ ইউনিটের ভবন করা হবে।

এছাড়া বর্তমান মেডিকেল সেন্টারটির পাশে খালি জায়গায় (উত্তর-পূর্ব) ৬ তলা মেডিকেল সেন্টার, কেন্দ্রীয় মসজিদ ভেঙে চার তলাবিশিষ্ট মসজিদুল জামিয়া কমপ্লেক্স, ডাকসু ভবন ভেঙে ১২ তলা আধুনিক বিল্ডিং, বর্তমান প্রশাসনিক ভবনের উত্তর-পশ্চিম ব্লক ভেঙে ২০ তলাবিশিষ্ট ভবন এবং দক্ষিণ অংশ ভেঙে ভিসি-প্রোভিসিদের ও কোষাধ্যক্ষের অফিস করা হবে। একই সঙ্গে করা হবে নতুন জিমনেশিয়াম ভবন।

এছাড়া নীলক্ষেত আবাসিক এলাকার ২৪ নম্বর ভবন ভেঙে ৪ তলাবিশিষ্ট অফিসার ক্লাব করা হবে। জগন্নাথ হলের অক্টোবর স্মৃতি ভবনের দক্ষিণ-পূর্ব কর্নারে ২ তলা বিশিষ্ট জাদুঘর করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্লাব ভেঙে দশ তলা (ব্লক ১) ও তিন তলা (ব্লক ২) ভবন নির্মাণ করা হবে। গ্রিন সুপার মার্কেটে দশতলা বাণিজ্যিক ভবন, গ্রিন রোডে দুই তলা মসজিদ, দক্ষিণ নীলক্ষেত আবাসিক এলাকায় তিন তলা মসজিদ, শহীদ সার্জেন্টে জহরুল হক হল ও দক্ষিণ নীলক্ষেত আবাসিক এলাকার ৪৫ নম্বর ভবন ভেঙে চার তলাবিশিষ্ট পার্কিং ভবন করা হবে। যেখানে একসঙ্গে তিনশ গাড়ি পার্ক করা যাবে।

এস/এএমকে/ডাকুয়া

আর্কাইভ