• ঢাকা শুক্রবার
    ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছুটির দিনে বাজারে গিয়ে হতাশ ক্রেতারা

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২১, ০৯:৪২ এএম

ছুটির দিনে বাজারে গিয়ে হতাশ ক্রেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে উপস্থিত হন বিভিন্ন পেশার লোকজন। কিন্তু বাজারে মোটা চাল, সয়াবিন, পাম অয়েল সুপার, পেঁয়াজ, রসুন, ব্রয়লার মুরগি, চিনি, জিরা, খোলা ময়দা ও এলাচের অতিরিক্ত দাম দেখে থমকে যান ক্রেতারা। বাজারে সবকিছুর চড়া দাম দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে (৮ অক্টোবর) বাজারে আসা প্রায় সব ক্রেতারাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখে জানিয়েছেন তাদের ক্ষোভের কথা, অসহায়ত্বের কথা। চাহিদা মতো বাজার করতে না পেরে ফিরে গেছেন অনেকে।

এদিন রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার ও মালিবাগ বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধির চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার পণ্য মূল্য তালিকায় লক্ষ করা গেছে। টিসিবি জানায়, এক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়েছে।

দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৪২ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের দাম শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপারের দাম ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

প্রতি কেজি দেশি রসুন ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও আমদানি করা রসুন ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, চিনি ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, জিরা ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ, খোলা ময়দা ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ ও ছোট দানার এলাচ ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

জানতে চাইলে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেড় বছরে আয় কমে যাওয়ায় ভোক্তাকে সব কিছুতেই ব্যয় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাড়তি দর তাকে দিশেহারা করে তুলছে। তাই সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে পর্যালোচনা করা উচিত।

বাজার তদারকির পাশাপাশি পণ্যের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরবরাহ ও মজুত গড়ে তোলা উচিত। এতে বাজারে পণ্যের দাম কমবে। ভোক্তারাও সুফল পাবেন। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চালের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে।

সব ধরনের চালের দাম না বাড়লেও আজ প্রতি কেজি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। যা এক দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকায়।

মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা আনোয়ার বলেন, কয়েকদিন চালের দাম কিছুটা কমতির দিকে থাকলেও মিলাররা আবার চালের দাম বাড়াতে শুরু করেছেন। তারা প্রথম ধাপে মোটা চালের দাম বাড়িয়েছেন। ফলে তাদের বেশি দরে এনে বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।

গেল শনিবার থেকে ধাপে ধাপে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। সরবরাহ ও মজুত ঠিক থাকলেও পূঁজায় আমদানি কমার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। ফলে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা দুই দিন আগেও ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকায়।

এদিন নতুন করে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। দুই দিনের ব্যবধানে বোতলজাত সয়াবিনের মধ্যে পাঁচ লিটারে ১০ টাকা বেড়ে ৭৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাম অয়েল সুপার লিটারে ৫ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি চিনি ৭৮-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা এক দিন আগেও ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা রফিকুল  ইসলাম বলেন, ‘বাজারে ক্রেতাদের অনুকূল পরিবেশ নেই। পণ্যের কোনও সংকট না থাকলেও দাম বাড়তি। বাজারে সব পণ্য পাওয়া গেলেও বাড়তি দরে কিনতে হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি নেই। যা করা হয় তা সবই লোক দেখানো। কাজের কাজ কিছু হয় না।’

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছেপ্রতি কেজি আমদানি করা রসুন ১০ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি জিরা ২০ টাকা বেড়ে ৪২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খোলা ময়দা কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৪৩ টাকায় বিক্রি হয়ে হয়েছে পাশাপাশি প্রতি কেজি ছোট দানার এলাচ ২০০ টাকা বেড়ে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

খুচরা বাজারে আকারভেদে লাউ ৬০-৮০ টাকা, ফুলকপি ৪৫-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, আকারভেদে বেগুন ৬০-৮৫ টাকা, শিম ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা, টমেটো ১৪০-১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া কাঁচামরিচ ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে অধিদফতরের পক্ষ থেকে তদারকি জোরদার করা হয়েছে। যৌক্তিক দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও অনিয়ম পেলেই শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে।

জেডআই/এএমকে

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ