প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১, ০৯:৪৩ পিএম
করোনার টিকা না নেওয়ায় ফ্রান্সে প্রায় তিন হাজার স্বাস্থ্যকর্মী চাকরিচ্যুত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ফ্রান্সে নতুন একটি আইন জারি করা হয়েছে। সেই আইনে দেশটির সব স্বাস্থ্য, বৃদ্ধনিবাস ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের করোনা টিকার ডোজ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
নতুন
এই আইনের জেরেই চাকরি হারিয়েছেন এই স্বাস্থ্যকর্মীরা, যারা করোনা
টিকার একটি ডোজও নেননি।
অবশ্য ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভিয়ের ভিরান এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার
বলেছেন, যারা চাকরিচ্যুত হয়েছেন,
তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই এটি সাময়িক একটি
ব্যাপার হিসেবে বিবেচনা করা হবে। স্থায়ীভাবে
তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে- বিষয়টি এমন নয়।
বিবিসির
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাকরি
থেকে অব্যাহতি পাওয়া এই ব্যক্তিদের মধ্যে
ডাক্তার, নার্স, হাসপাতালের কর্মচারী, স্বেচ্ছাসেবী- সব ধরনের স্বাস্থ্যকর্মী
আছেন, তবে ডাক্তারের সংখ্যা
তুলনামূলক বেশ কম।
গত
১২ জুলাই ফ্রান্সের স্বাস্থ্যকর্মীদের সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেছিলেন, যেসব
স্বাস্থ্যকর্মী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে
করোনা টিকার অন্তত একটি ডোজ নিতে
ব্যর্থ হবেন, তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া
হবে।
এ
সম্পর্কিত এক ভাষণে স্বাস্থ্যকর্মীদের
উদ্দেশ্যে ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমি আপনাদের যা
বলছি, তা সচেতনভাবেই বলছি;
এবং আমি জানি, আপনারা
আপনাদের দায়িত্ব পালনের খাতিরেই টিকার ডোজ নেবেন।’
প্রেসিডেন্টের
ভাষণের পর টিকার জন্য
নিবন্ধন করতে হিড়িক পড়ে
যায় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই মাত্র এক মাসের মধ্যে
দেশটির সব স্বাস্থ্যকর্মী করোনা
টিকার ডোজ নিতে পারেননি।
যারা এই সময়সীমার মধ্যে
টিকার ডোজ নিতে ব্যর্থ
হয়েছেন তাদেরই চাকরি গেছে।
এ
দিকে এক ধাক্কায় এত
স্বাস্থ্যকর্মীর চাকরি যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে ফ্রান্সের অনেক হাসপাতাল।
দেশটির
দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নিসে ৪৫০
জন স্বাস্থ্যকর্মী চাকরিচ্যুত হয়েছেন, বৃহস্পতিবার শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন তারা। পাশের শহর মন্টিলিমারের একটি
হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মচারীর না থাকায় খুব
জরুরি নয়- এমন অস্ত্রোপচার
বন্ধ রেখেছেন তারা।
ফ্রান্সের
বিরোধী দল কমিউনিস্ট পার্টির
অনেক এমপি সরকারের এই
সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন, তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভিয়েরে
ভিরান বৃহস্পতিবার দেশটির সংবাদমাধ্যম আরটিএল রেডিওকে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যসেবার মান বজায় রাখা
ও জনগণের মধ্যে টিকার পক্ষে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য এটি প্রয়োজনীয়
ছিল।
তিনি
আরও বলেন, ‘এটি একটি সাময়িক
স্থগিতাদেশ এবং যারা চাকরিচ্যুত
হয়েছেন, তারা যদি টিকার
ডোজ নেন এবং এ
সম্পর্কিত প্রমাণ হাজিরে সক্ষম হন, সেক্ষেত্রে এই
স্থগিতাদেশ পুনর্বিবেচনা করা হবে।’
পর্যাপ্ত
করোনা টিকার ডোজ মজুদ থাকা
সত্ত্বেও বিশ্বের যেসব দেশের জনগণ
টিকার ডোজ নেওয়ার বিষয়ে
উদাসীনতা দেখিয়েছে, সেসব দেশের মধ্যে
ফ্রান্স অন্যতম। চলতি বছর জুন
পর্যন্ত দেশটিতে টিকার অন্তত একটি ডোজ নেওয়া
নাগরিকদের শতকরা হার ছিল মাত্র
৪০ শতাংশ।
কিন্তু
তার পরের মাসে, জুলাইয়ে
যখন সরকার ভ্যাকসিন পাসপোর্ট চালু ও প্রদর্শন
বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করে
তখন দেশটির জনগণ এ বিষয়ে
সচেতন হন।
সর্বশেষ
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ফ্রান্সের
মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই করোনা
টিকার অন্তত একটি ডোজ নিয়েছেন।
শামীম/এম. জামান