• ঢাকা বুধবার
    ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধবাজ নেতা রশিদ দোস্তামের বিলাসবহুল প্রাসাদে তালেবানরা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১, ০৭:১৪ পিএম

যুদ্ধবাজ নেতা রশিদ দোস্তামের বিলাসবহুল প্রাসাদে তালেবানরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

তালেবানবিরোধী হিসেবে পরিচিত আব্দুল রশিদ দোস্তাম প্রবাল। আফগানিস্তানের সাবেক এই ভাইস প্রেসিডেন্টকে যুদ্ধবাজ নেতা (ওয়ারলর্ড) হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। ২০০১ সালে তার বিরুদ্ধে দুই হাজার তালেবান সদস্যকে ড্রামে ভরে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।

সাবেক কমিউনিস্ট এই নেতা ২০১৯ সালে তালেবানের এক হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও হামলায় তার একজন দেহরক্ষী নিহত হন। সম্প্রতি তালেবান আফগানিস্তান দখল করলে তিনি তাজিকিস্তান পালিয়ে যান।

আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, রশিদ দোস্তামের ঐশ্বর্যপূর্ণ প্রাসাদ এখন তালেবান দখলে। আফগানিস্তানের সাবেক এই শাসক কেমন জীবন যাপন করতেন বাড়িটির মাধ্যমে তালেবান সদস্যরা সেই আভাস পাচ্ছেন। তালেবান বলছে, বছরের পর বছর দুর্নীতির ফল এই বিলাসবহুল বাড়ি।

 মোটা আপেল সবুজ কার্পেটে মোড়ানো বিশাল ভবনের ভেতরের একটি সোফায় ঘুমাচ্ছিলেন তরুণ একজন তালেবান সদস্য। পাশেই বিশ্রাম নিচ্ছিল তার কালাশনিকভ রাইফেলও। এই তালেবান সদস্য যেখানে ঘুমাচ্ছিলেন তার পাশে প্রকাণ্ড সাতটি অ্যাকুরিয়ামের একটিতে বিদেশি মাছ বুদ্বুদ শব্দ করছিল।

তালেবান সদস্যরা এই প্রাসাদে সংগঠনটির অন্যতম শক্তিশালী কমান্ডার সালাউদ্দিন আইয়ুবির নিরাপত্তা দায়িত্ব পালনের জন্য রয়েছেন। আফগানিস্তানের চারটি প্রদেশের সামরিক কমান্ডার সালাউদ্দিন আইয়ুবি গত ১৫ আগস্ট ১৫০ জন যোদ্ধা নিয়ে এই বাসায় ওঠেন।

বিলাসবহুল এই অট্টালিকা পরিদর্শন গিয়ে এএফপি নিউজ যা দেখেছে অধিকাংশ আফগান নাগরিকের কাছে তা অকল্পনীয় হবে।

প্রাসাদের ভেতরে রয়েছে গুহা আকৃতি হলরুমের অসংখ্য কাচের ঝাড়বাতি, বড় নরম তুলতুলে সোফা, সজ্জিত লাউঞ্জ, ফিরোজা রঙের টাইলসে আবৃত সুইমিং পুল। এ ছাড়া রয়েছে গরম পানির ঝরনার গোসলখানা, তুর্কি স্টিমবাথ এবং সুসজ্জিত জিম।

প্রকাণ্ড এ বাড়িতে অবস্থান করা তালেবান সদস্যদের জন্য এটা যেন পৃথিবীর বাইরের কোনো অভিজ্ঞতা। কারণ, বছরের পর বছর তারা যুদ্ধের জন্য সুখ ত্যাগ করে সমতল কিংবা পাহাড়-পর্বত ও উপত্যকায় বসবাস করেছেন। 

তবে বাড়ির বর্তমান প্রধান তালেবান কমান্ডার স্পষ্ট করে জানান, তারা এই রকম বিলাসবহুল জীবন যাপন করবেন না। সালাউদ্দিন আইয়ুবী বলেন, ‘ইসলাম আমাদের বিলাসবহুল জীবন যাপন করতে বলে না।’ মৃত্যুর পর জান্নাতে বিলাসবহুল জীবন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আব্দুর রশিদ ছিলেন সাবেক প্যারাট্রুপার, ১৯৮০ এর দশকে আফগান কমিউনিস্ট সরকারের প্রধান কমান্ডার, সমরবিদ এবং আফগানিস্তানের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট। চার দশকের বেশি সময় দেশের দ্বন্দ্ব-সংঘাত প্রত্যক্ষ করার মাধ্যমে তিনি ঝানু রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছিলেন।

যুদ্ধবাজ নেতা আব্দুল রশিদ দোস্তাম দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাপক অর্থবিত্তের মালিক হন। তালেবান তাকে ঘৃণা করার পেছনে যৌক্তিক কারণ রয়েছে।

২০০১ সালে মরুভূমির মধ্যে ড্রামে ভরে তিনি দুই হাজার তালেবান সদস্যকে অন্য জায়গায় পাঠাচ্ছিলেন। কিন্তু আলো-বাতাসহীন কনটেইনারে প্রচণ্ড সূর্যের তাপে ওই তালেবান সদস্যরা দম বন্ধ হয়ে মারা যান।

তবে আব্দুল রশিদ দোস্তামের বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবান কমান্ডার সালাউদ্দিন আইয়ুবি তার ওপর প্রতিশোধ নেবেন না বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো নির্যাতিত হয়েছে এমন অন্য কেউ যদি এই বাড়িতে আসত, তাহলে আপনি বাড়ির চেয়ার-টেবিল দেখতে পেতেন না। তারা সব ধ্বংস করে ফেলত।’

আফগানিস্তানের বর্তমান শাসকদল তালেবান ভবিষ্যতে অবৈধ অর্থে এমন বিলাসবহুল কিছু করার অনুমতি দেবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তালেবান কমান্ডার সালাউদ্দিন আইয়ুবি বলেন, ‘আমরা সব সময় দরিদ্র মানুষের পাশে থাকব।’

শামীম/এম. জামান

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ