• ঢাকা শনিবার
    ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুৎচালিত ব্যক্তিগত গাড়ির নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পথে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১, ০৭:০৩ পিএম

বিদ্যুৎচালিত ব্যক্তিগত গাড়ির নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পথে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি আমদানিকৃত যানবাহনের জন্য চার্জিং নীতিমালা নিয়েও কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। নীতিমালা চূড়ান্ত হলেই মোটরযান আমদানি শুরু হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। তবে বাংলাদেশে এখন বিদ্যুৎচালিত যে বিপুলসংখ্যক ইজিবাইক আছে তার বাইরে প্রাইভেট কারসহ অন্য যানবাহনগুলো কবে নাগাদ আমদানি সম্ভব হবে তার কোনো সময়সীমা ঠিক হয়নি।

সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ইউছুব আলী মোল্লা বলেছেন, তারা বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিদ্যুৎচালিত যানবাহন সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করতে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। বৈঠকে একজন যুগ্ম-সচিবের নেতৃত্বে আরও একটি কমিটি করা হয়েছে। খসড়া নীতিমালা আরও পর্যালোচনা করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন তারা।

রিপোর্ট পাওয়ার পর আবার আলোচনা হবে, মন্ত্রণালয়ের মতামত নিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো পক্ষ আলোচনা করতে হবে। এসব ধাপ পেরোনোর পর নীতিমালা চূড়ান্ত করে আমরা মন্ত্রণালয়ে দিতে পারব। এতে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সারা দেশে অবৈধভাবে চলা বিদ্যুৎচালিত যানবাহন, বিশেষ করে ইজিবাইককে শৃঙ্খলায় আনতে প্রায় দুই বছর আগে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআরটিএ। কর্মকর্তারা বলছেন, শুরুতে বিদ্যুৎচালিত এ ধরনের যানবাহন চলাচলের সুযোগ রাখা হবে কি না তা নিয়ে সরকারের মধ্যে মতবিরোধ ছিল; কিন্তু পরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া আর পরিবেশবান্ধব বিবেচনায় বিদ্যুৎচালিত যানবাহন আমদানি ও চলাচলের জন্য নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় বিআরটিএ-কে একটি খসড়া প্রস্তাবনা পাঠাতে বললে সংস্থাটি একটি খসড়া পাঠায়, যাতে মূলত তখনকার বিদ্যুৎচালিত যানবাহনকে নিবন্ধনের আওতায় আনার ওপর জোর দেয়া হয়।

বিআরটিএ’র রোড সেফটি উইংয়ের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেছেন, তারা বুয়েটের সঙ্গে আলোচনা করে একটি খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন মন্ত্রণালয় এই নীতিমালা নিয়ে কাজ করছে। ওটা চূড়ান্ত করে তারাই ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবে। এরপর বিদ্যুৎচালিত সব ধরনের যানবাহন চলাচলের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করছি।

জানা গেছে, বিআরটিএ’র খসড়া মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর তা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে এবং একটি প্রতিনিধিদলকে ভারতেও পাঠানো হয়েছিল সেখানকার বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের ব্যবস্থাপনা, চলাচলসহ সার্বিক বিষয় দেখার জন্য।

মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী খসড়া নীতিমালায় যানবাহনের নিবন্ধনের ওপর জোর দেয়া হয়েছিল। এতে বলা হয় রিচার্জেবল ব্যাটারিতে সঞ্চিত বিদ্যুৎ শক্তির সাহায্যে চালিত মোটরযান, যেটি ব্যাটারি বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে রিচার্জ করা হয়, তাকেই ইলেকট্রিক মোটরযান বলা হবে। তবে বাইসাইকেল বা রিকশা এর অন্তর্ভুক্ত হবে না।

খসড়া নীতিমালায় ইলেকট্রিক মোটরযানের জীবনকাল মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ১০ বছর, তিন চাকার যানবাহন ৯ বছর ও হালকা, মধ্যম ও ভারী যানবাহনের জন্য ২০ বছর ধরা হয়েছে। অনুমোদিত চার্জিং স্টেশন, নিজস্ব ব্যবস্থাপনা, সোলার প্যানেল বা নবায়নযোগ্য যেকোনো জ্বালানি ব্যবহার করে রিচার্জ করা যাবে। তবে ইলেকট্রিক মোটরযানের নিবন্ধন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন ও রুট পারমিট দেয়ার প্রক্রিয়া প্রচলিত পদ্ধতিতেই হবে।

চার্জিং স্টেশন তৈরির ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, দেশে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি আমদানির পর সেগুলোর চার্জিং স্টেশন কোথায় হবে বা কেমন হবে কিংবা ট্যারিফ কেমন হবে- এসব বিষয়ে সম্প্রতি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। এ সভায় অংশ নিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রতিটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিতে বৈদ্যুতিক যান চার্জিং বিষয়ক টিম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে বৈদ্যুতিক যানবাহনের চার্জিং নীতিমালা গ্রাহকবান্ধব হতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রাখতে বৈদ্যুতিক গাড়ির উত্থান উত্তরোত্তর বাড়বে।

এ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাতেই জানানো হয় যে পেট্রল-চালিত যানবাহনের প্রতি এক হাজার কিলোমিটারের জন্য যেখানে ৫ হাজার ৩৭৫ টাকা খরচ হয়, সেখানে একই দূরত্বের জন্য বৈদ্যুতিক যানবাহনের ক্ষেত্রে খরচ হবে ১ হাজার ২৫০ টাকা। এ ছাড়া পেট্রল-চালিত যানবাহনের চেয়ে বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের যান্ত্রিক দক্ষতাও বেশি এবং এটি পরিবেশবান্ধব। বিআরটিএ অবশ্য বলছে, তারা রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু করেছেন; যাতে করে নীতিমালা চূড়ান্ত হলে গাড়ি আমদানি করে কাউকে বিপাকে না পড়তে হয়।

বিশ্বজুড়েই এখন বাড়ছে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ সালে বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের বিক্রি আগের বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশে এখনও বিদ্যুৎ চালিত কার বা মোটরযান চোখে না পড়লেও দেশজুড়ে অসংখ্য ইজিবাইক চলছে যেগুলোর ব্যাটারি বিদ্যুতে রিচার্জ করতে হয়। তবে অল্প কিছু ইলেকট্রিক কার ব্যক্তি উদ্যোগে এসেছে এবং সেগুলো নিবন্ধন পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ’র কর্মকর্তারা।

শামীম/এম. জামান

আরও খবর

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ