প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩, ০১:৫৮ এএম
শহীদ ক্যাপ্টেন বাশার। নীলফামারীর সবাই এ নামে তাঁকে চেনেন ও জানেন। পুরো নাম আরএএম খায়রুল বশার। স্বাধীনতার একজন অকুতোভয় সূর্য সৈনিক।
তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন চৌকস কমিশন্ড প্রাপ্ত অফিসার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করে ১৯৬১তে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সে সময় তাঁর কোর্সমেট ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশারফ। ১৯৬৮ সালে ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হয়ে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে আর্মি সাপ্লাই কোরে ষ্টেশন অফিসার কমান্ডিং হিসেবে যোগ দেন।
১৯৭১`র ২৩ মার্চ তিনি স্বয়ং শিশুকণ্যার প্যারামবুলেটরে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উড়িয়ে পুরো সেনানিবাস প্রদক্ষিণ করেন। ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে দখলদার পাকবাহিনীকে প্রতিহতে বাঙ্গালি অফিসার ও জোয়ানদের নিয়ে সেনানিবাস এলাকা ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন। একসময় পাকবাহিনীর ত্রি-মুখি আক্রমনে ডিফেন্স ভেঙ্গে গেলে ক্যাপ্টেন বাশার মূল বাহিনী থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে পড়েন এবং একক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় তিনি পাকবাহিনীর একজন চালকসহ একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেন।
অতপর; এক সময় ক্যাপ্টেন বাশারকে পাকড়াওয়ে মরিয়া পাকবাহিনী চট্টগ্রামের নিভৃত পল্লী থেকে তাকে আটক করে। তাঁকে ঢাকার শেরে বাংলা নগরস্থ জয়েন্ট ইন্টারগেশন সেলে পাকিস্তানী মেজর সরফরাজের নেতৃত্বে নারকীয় ও ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়। শত নির্যাতনেও স্বাধীনতার আদর্শে লালিত সন্তান ক্যাপ্টেন বাশার পাকবাহিনীকে কোন প্রকার তথ্য দিতে বারংবার দৃঢ়তার সাথে অস্বীকৃতি জানান। এক সময় হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনে ক্যাপ্টেন বাশারের দেহ নিথর হয়ে যায়। শহীদ হন ক্যাপ্টেন বাশার।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্যাপ্টেন বাশারের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ঢাকা সেনানিবাসের ষ্টাফ রোডের নামকরণ করেছে শহীদ বাশার গেইট নামে। চট্টগ্রাম সেনানিবাসেও গড়ে উঠেছে শহীদ বাশার বাস্কেটবল ষ্টেডিয়াম। নীলফামারীবাসীও মূল্যায়নে ত্রুটি রাখেনি। নীলফামারী শহরের প্রবেশ মুখে নির্মিত হয়েছে শহীদ ক্যাপ্টেন বাশার তোরণ (২৬ মার্চ ২০০৪)। শহরের পৌরমার্কেট থেকে পিটিআই মোড় পর্যন্ত সড়কের নামকরণ হয়েছে শহীদ ক্যাপ্টেন বাশার স্মরণী।
তথ্য
------
জন্ম : ১৯৪০
শহীদ : ১৯৭১
পিতা : শিক্ষাবিদ আছির উদ্দিন আহমেদ
মাতা : রিজিয়া বেগম
জন্মস্থান : সেনপাড়া, রংপুর ( নানাবাড়ি)
বাড়ি : সবুজপাড়া, নীলফামারী
শিক্ষা : নীলফামারী ইংলিশ হাই স্কুল, রাজশাহী সরকারি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
লেখক : সুজা মৃধা
নীলফামারী থেকে