• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

একটা রাতের কথা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২২, ০৫:১৭ পিএম

একটা রাতের কথা

নবনীতা সই

ঘড়িতে রাত দুটো। সবে প্রেমের সন্ধ্যে। অর্ণব ফোনটা রেখে সিগারেটটা ধরিয়ে ব্যালকনিতে বসে। কাল ছুটি। আজ রাতটা জাগার। যদিও কোনো দিনই রাত তিনটের আগে ঘুমাতে যাওয়া হয় না ও ঘরে রিতমা ও চ্যাটে ব্যস্ত, অর্ণব জানে। 
দুটো গ্রুপের ক্রিয়েটার আর অসংখ্য গ্রুপের অ্যাডমিন রিতমা। 
আজ প্রায় পাঁচ বছর ঘর আর বিছানা আলাদা হয়ে গেছে। অর্ণব ও তিনটে গ্রুপের ক্রিয়েটার, ফেসবুক আর হোয়াটস অ্যাপে মজে। 
দুজনে একসাথে হয় শুধু ছবি তুলতে। কখনও সেরা জুটি, কখনও সেরা পরিবার। যে গ্রুপে যে ইভেন্ট থাকে, হাসি হাসি মুখে জাস্ট ক্লিক। সব রকম ছবি কাজে লাগে। যদিও দুজনেই সেগুলো নিজেদের প্রফাইলে দেয় না।
দিলেও সি দা সিলেক্টড ফ্রেন্ড করে দেয়, তাও শুধুমাত্র বিবাহবার্ষিকীর দিন, ব্যাস। 
বাদ বাকি সব গ্রুপে দেয়। আজকাল দেখনদারির যুগ। সবাইকে জানানো প্রয়োজন কত সুখী আমরা। রিতমা সেটাই চায়।

অর্ণবের আবার, দুঃখের ভাবটা বেশি পছন্দ। বেশ দেবদাস লুকটা বেশি খায় মেয়েরা। কাধে শান্তি নিকেতনী ব্যাগ, মুখে বাসি দাঁড়ি আর সিগারেটের নিকোটিনে জ্বলে যাওয়া বুক।
মেয়েদের কাছে বিবাহিত জীবনে চরম অসুখী এক পুরুষ। যার বৌ তার কোনো যত্ন করে না। শুধু পয়সা নষ্ট করে। ব্যাস, বিগত যৌবনা বা জোর করে যৌবনকে ধরে রাখার চেষ্টায় মশগুল কোনো মহিলা অ্যাডমিন পেলেই হলো। স্বাবলম্বী যদি হয় তাহলে ছ’মাসের পার্টির খরচ, ঘোরা আর সেক্স ফ্রী। আর যদি গৃহবধূ হয় তো, প্রতিরাতে রগরে নেওয়া যায়। জীবনের এই চল্লিশের পর থেকে ষাট অবধি একটা একাকীত্বের সময়। তখন ছেলে মেয়ে বড় হয়ে স্বাধীন হয়ে যায়। আত্মীয় স্বজন নিজের টুকু বুঝে নিয়ে দূরে সরে যায়। স্বামী-স্ত্রী মধ্যে আর আকর্ষণ খুঁজে পায় না। এই সময়টা মোক্ষম। মেয়েরা সারাজীবন রোমান্টিক থাকে। একটু যত্ন, দিনে ঘণ্টায় ঘণ্টায় খোঁজ আর দুটো চারটে সহানুভূতির কথা, যার মধ্যে তোমাকে কেউ চিনলো না, তোমার স্বামী বুঝলো না কি স্ত্রী রত্ন পেয়েছিল, তোমার বয়স বোঝাই যায় না, তুমি এখন যে কোনো পুরুষকে পাগল করতে পারো, তোমার গলার আওয়াজে সেক্স উঠে যায় এই কথাগুলো কমন। যা রেকর্ডিং করে সব জায়গায় সেন্ড করা যায়। ব্যাস, আর কী উত্তাল প্রেমের বন্যা বয়ে যায়। এবার কবিতায় কমেন্ট আর রাতে ফোনে উত্তেজনা দুটোই চরমে। ছ-আট মাস জাস্ট ইগনোর। মেয়েরা অবহেলা সইতে পারে না। সরে যায় নীরবে। আমার ভালোবাসার পুরুষটি আমাকে আর চাইছে না বা ধোঁকা দিয়েছে, এটাও তাদের কাছে কষ্টের থেকে লজ্জার বেশি। গ্রুপ ছেড়ে দেয়। ধুর কিছু যায় আসে না, আবার নতুন আসবে। আবার প্রথম থেকে শুরু হবে।

টুং করে আওয়াজ হয় ফোনে, সিগারেটটার মুখটা অ্যাশট্রেতে গুজে অর্ণব ঘরে আসে। পাশের ঘরেই রিতমা তখন জোরে জোরে হাসছে। ফোনটা নিয়ে নেট অফ করে, করিডর দিয়ে বাথরুমের দিকে যেতে, রিতমার ঘরে কান পাতে অর্ণব। দরজা ভেড়ানো, আস্তে আস্তে দরজার ফাঁকে চোখ রাখে অর্ণব। 
রিতমা উপুড় হয়ে শুয়ে। নীল আভায় কি রহস্যময়ী লাগছে পিছন থেকে রিতমাকে। হাজার বার আবিষ্কৃত শরীরটা টানছে। রিতমা কারোর সাথে ভিডিও চ্যাট করছে। অর্ণব পুরোটা শুনতে চায়। ঠিক পর্ণ দেখার মতন সবটুকু শুষে নেবার আপ্রাণ চেষ্টা। হট করে রিতমা সোজা হতেই অর্ণব সরে আসে। 
শেষ ঘরটা রিমলি আর ঝিমলির। অর্ণবের দুই মেয়ের। দরজা বন্ধ। বাথরুমে গিয়ে গলায় চোখে মুখে জল দিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে অর্ণব। রিতমার ঘরে যে যায় না তা নয় কিন্তু আজ যাবে??? ওদিকে ফোনের অপেক্ষায় সুপর্ণা বসে আছে। নতুন পাখি। চাকরি করে আবার ডিভোর্সী। মানে সোনায় সোহাগা। অর্ণব সোজা ঘরে আসে। নিজের সবটুকু উত্তেজনা, কবিতা আর মোহের জাল ঢেলে দেয় সুপর্ণার ইনবক্সে। সুপর্ণাকে পাগল করে দিতে চায়। সামনের মাসের গাড়ির ই এম আই-টা দরকার। সুপর্ণাকে চাই। আজকাল রিতমা একদম কাছে আসতে দেয় না। মেয়েরা বড় হয়েছে। দুজনে আপোসে আলাদা আলাদা ঘরে জায়গা করে নিয়েছে। কাজলের সাথে কথা প্রায় বন্ধের মুখে। সায়নীর কাছে যাবার উপায় নেই। এখন সুপর্ণা ভরসা। কাজল পুরোপুরি কথা বলা বন্ধ করার আগেই সুপর্ণাকে বাগে আনতে হবে।

ঐদিকে একটা ঘরে সুপর্ণা স্বপ্ন দেখে, ত্যাগের, ভালোবাসার আর আবারও পুরুষ স্পর্শের। 
 

আর্কাইভ