• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

বেলা শেষে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২, ০৫:২৩ পিএম

বেলা শেষে

বনশ্রী দাস

জীবনের সন্ধ্যায় এসে দাঁড়িয়ে দেখি ফেলে আসা দিনের অনেক হিসাব মিলছে না।
সারা জীবন খালি মরীচিকার পেছনেই ছুটেছি ,কিন্তু কোনো কিছুতেই দক্ষতা অর্জন করতে পারিনি। 
জীবনের প্রত্যেকটি সঠিক মুহূর্তকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত, ফাঁকি দিলেই জীবনটা কেমন উল্টে-পাল্টে ছন্দহীন হয়ে যায়। 
আমি তো কিছুই চাইনি জীবনে, কখনও চাইনি করতালির বর্ষণ, কখনও চাইনি উপচেপড়া প্রশংসা, লাইম লাইটে আসতেও চাইনি, তর্ক-বিতর্কের মধ্যে নিজেকে জড়াইনি কখনও।

শুধু চেয়েছি একটু সম্মান আর আমার প্রতিটি কাজে নৈপূণ্যতা। 
কিন্তু সর্বদাই মিলেছে ঠোঁট ওল্টানো ভর্ৎসনা আর অভিশপ্ত অনূঢ়ার মতো এক তাল অবজ্ঞা।
জানি অপরিসীম মেধা নিয়ে আমি জন্মাইনি। বিচক্ষণতা, বুদ্ধিমত্তা অদম্য  সাহস আমার মধ্যে নেই। আমার অদক্ষ কাজ যে কোনো দিন স্বীকৃতি পাবে না তাও আমি জানি।
কখনও প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারিনি আমি, সর্বদাই ব্যর্থ হয়েছি আমার স্বল্প গুণগুলো নির্ভুলভাবে সবার সামনে তুলে ধরতে। নিজের ইচ্ছেগুলো ডানা মেলে আকাশে উড়িয়ে দিতে পারিনি কোনো দিনও। মন খুলে হাসতে ভয় হয়, আনন্দ করতে ভয় হয়, কারণ দস্যুর মতো অদমনীয় অজানা ভয় সর্বদাই আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
তাই কোনো কাজ করতে গেলে আমার অবচেতন মনের অন্তরালে সেই অনাকাঙ্খিত অজানা ভয় গ্রাস করে, সমস্ত কাজটা বিনষ্ট হয়ে যায়। আমি তীব্র ক্লান্তিকর শ্রমসাধ্য পরিশ্রম করেও কোনো বিষয়ে পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করতে পারিনি, প্রত্যেকটি বার ব্যর্থ হয়েছি, হেরে গেছি নিজের কাছে।
সমালোচকদের মতামত সর্বদাই গ্রহণ করেছি মাথা পেতে, আনন্দে হাসি মুখে, নিজেকে সংশোধন করার জন্য, তবুও ব্যর্থ হয়েছি বারংবার। আমি এক শিক্ষানবিস হয়েই থেকে গেলাম চিরটাকাল।
ঈশ্বরের কাছে শুধুই একটি প্রার্থনা, এই পার্থিব জগতের ঘৃণ্য আবিলতা ও নৃশংসতা আমার অন্তরাত্মাকে যেন স্পর্শ করতে না পারে কোনো দিন, আমি যেন এক পবিত্র বিশুদ্ধ ফুলের মতো তার চরণতলে নিজেকে নিবেদন করতে  পারি জীবনের বেলা শেষে এক দীর্ঘ শান্তির নিদ্রায়।

 

আর্কাইভ