মোহাম্মদ আলী
হাটছি পথ
সেই পথে...
একদিন যার ধারজুড়ে ফুটে থাকতো
লাল সবুজ ঘাসফুল
ফটিক শুভ্র মিষ্টি শিশিরে
সিক্ত পায়ে আলতো চুমুর
হিম শিহরণ!
মেঠো-কাঁচা সেই অবয়ব
আজ হয়েছে যার শিল-প্রস্তে উত্তরণ
আজকে পথটা দেখে
নিজেই বিষম খাই
একবার -দু'বার এমনকি বারবার,
দু:স্বপ্নে চলা দীর্ঘ সিঁড়ি পথ
হেটে হেটে চমকে ওঠা
দৃষ্টি দহন, জ্বলে হৃদয় অনির্বার!
হঠাৎ স্মৃতির দোল, আরে এ-তো আমারই শহর!
শৈশবে কচি পায়ে হেটে চলা
ঘাসের আস্তরণ
থোক-থোক জল ভেজা কাদার গালিচা
আ-জানু বিদিকিচ্ছি সিক্ত দু'চরন!
সেও এক সমরখন্দের মখমলি অনুভব!
সেলুকাসের আবিষ্কার, বিচিত্র উদ্ভব!
দখিনা--পূবালি উতলা হাওয়া
পুরোটা আকাশ খোলা জানালার হাওয়া
চোখ-কান-মুখজুড়ে আজও পাই ছোঁয়া!
ভোর হলেই সারি সারি
কত শত গরু গাড়ি
রিক্সার টুন টুন
হাটুরেদের গুনগুন
সব কিছু চির চেনা, স্মৃতিতে নতুন!
মনে পড়ে এ পথেই উঠতো সে দিন ঢেউ
রুখবে সে তরঙ, এমন ছিল না তো কেউ!
উঠতো গণজোয়ার বায়ান্ন-উনসত্তরের;
পদভারে প্রকম্পিত সূর্য-সন্তানদের
বজ্রমুষ্ঠি কণ্ঠচিরে স্লোগানে--স্লোগান!
ঘটে গেল দেশজুড়ে মহাউত্থান!
ওই তো ওরা--আমার সহপাঠীরা
অগ্রজ--অনুজ সূর্য সারথীরা!
হাটছে ওরা আজও যেন স্মৃতির আল্-পথে
কালামের মোড়--শিরিষ তলা সদাইখানা সঙ্গে;
শেষ মিছিলের ক্লান্তি নিয়ে নিতাম খানিক জিরিয়ে
চিড়ে-মুড়ি-জলযোগ, সেই ট্রাফালগার-স্কোয়ারে!
কুড়াল-চৈতু, আলম-সাধু, ছিল মান্নান-গাছি
মনো পাগলি-আবাই- বিসাউ-ডিমাটু আর মাছি
এরা ছিল নগর নন্দন--পথের রাজা-রানী
নিশি-রাতের কোকিল এরা আজও সে ডাক শুনি;
গর্ব বলি আবেগ বলি কিংবা অহংকার
একটাই ছিল এ শহরের ফুটবল মাঠটার
আর ছিল হ্যামিলনের বাঁশি খোকনদার ;
ছিল চাচা মিয়া
নামলে মাঠে বাঁশি নিয়া
যদি হয় একটা গোল
অমনি লাগলো গণ্ডগোল
নীলু মোক্তার উচিয়ে ছাতি
চারদিকে হাতাহাতি
ধমক-ধামক, থমকে যেত সব হট্টগোল
হায়রে সে সব কোথায় গেল যতীন- টুকুর ঢোল!
এ শহর এখন আমায় চেনে না-আমিও চিনি না একে
কি যেন গুমরে ওঠে আমার এ বুকটা থেকে!
শহরটা পড়েছে ঢাকা --আমিও পড়েছি চাপা
ইট-কাঠ-আকর -কড়ি সিমেন্ট লৌহ ছড়াছড়ি
এ দিক দেয়াল ওদিক দেয়াল বন্দী কারাগার
শহর বধির, আমি বোবা সব একাকার!
আহ! নিজেকে শুধিয়ে বলি, থাক না সে সব পুরনো কথা!
মেঘে-মেঘে অনেক বেলা
শেষ তো প্রায় হয় যে খেলা!
নবীন বাগে নবীন ফুল
জলতরঙ্গে উচ্ছল কূল
নেই না কেন ডুব দিয়ে এর খানিক স্বাদ
শেষ সন্ধার আবাহনে
আসুক না প্রভাত!
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন