• ঢাকা শনিবার
    ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

আমি কর্নেল বলছি

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২২, ১২:৪২ এএম

আমি কর্নেল বলছি

অমল ভট্টাচার্য্য

আমি কর্নেল দেবাশীষ সামন্ত।

দেখতে দেখতে তিন মাস হয়ে গেল মা আর মালিনীকে দেখি না।

মালিনী আমার স্ত্রী।

হ্যাঁ তিন মাস আগে আমার সঙ্গে মালিনীর বিয়ে হয়েছে।

বিয়েটা একটু দেরিতেই করলাম।

আসলে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার বাবা মারা যানক্যান্সারে।

বাবা একটা শাড়ির দোকানে হিসাব রাখতেন।

মাআমি আর বাবা তিন জনের সংসার।

বাবার মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবেই সংসারে দুর্দিন ঘনিয়ে এলো।

মাকে কাজ করতে পথে নামতে হলো।

ছোটবেলা থেকেই আমি লেখা-পড়াটা ঠিকঠাক করতাম।

মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম আর আমার অধ্যাবসায় আমাকে খড়্গপুর আই আই টিতে পৌঁছে দিলো।

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যোগ দিলাম ভারতীয় সেনাতে।

মাআমার মাআমার চোখের তারা

আমার বাবা আমার মজবুত শিরদাঁড়া।

 

সেনাতে যোগ দিয়ে যে দিন জলপাই রঙের পোশাক পড়েছিলাম,

সে দিনের অনুভূতি আমি প্রকাশ করতে পারবো না।

আমাকে সে দিন দেখতে কেমন লাগছিল জানি না,

কেবল উত্তেজনার পারদে থরথর করে কাঁপছিল আমার মনের আয়না।

কঠিন ট্রেনিং শেষে যখন আমাকে ক্যাপ্টেনের ব্যাজ পরানো হলো,

সেই সময় মায়ের মুখটাই সামনে ভাসছিল।

সেই থেকে আজও যখনই জলপাই রঙের পোশাক পড়ি চোখের সামনে ভেসে ওঠে মায়ের মুখ,

যখনই কোনো শত্রুর সম্মুখীন হয়েছি শিরদাঁড়া বাবার আশীষে হয়েছে মজবুত।

 

মাআমার মাআমার দেশ,

এ সুখের নেই যে কোনো শেষ।

চাকরিতে যোগদানের মাসছয়েক পর সাত দিনের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলাম।

মাকে নিয়ে দোকানে গিয়েছিলাম একটা ভালো মোবাইল কিনে দেবো ভেবে।

দোকানদার জিজ্ঞেস করলেনমোবাইল কি আপনার জন্য?

নাআমার মায়ের জন্যভালো স্মার্ট ফোন দেখান।

স্মার্ট ফোন আপনার মা ব্যবহার করতে পারবেন?

আমি হেসে বললামমায়েরা সব পারে।

যে মা তার ছেলেকে বুকে আগলে রেখে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বানাতে পারে সেই মা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে পারবে না?

এরপর ঘরে এসে তিনদিন মাকে শিখিয়েছিলাম কিভাবে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে হয়।

আমার মা এখন ফেসবুকহোয়াটস app সব ব্যবহার করতে পারে।

আসলেই মায়েরা সব পারে,

সন্তান জন্ম দিতে পারে আবার দেশের জন্য সেই সন্তানকে ছাড়তেও পারে।

 

অনেকদিন ধরেই মা বলছিলএবার বিয়েটা কর।

বুড়ো হয়ে গেলি তোবিয়ে কবে করবি?

মাকে বলেছিলামনিজেদের একটা বাড়ি করেই বিয়ে করবো।

মাসছয়েক আগে একটা ফ্ল্যাট কিনেছি,

মা মেয়ে পছন্দ করলো,পনের দিনের ছুটি নিয়ে গিয়ে বিয়ে করলাম।

 

বিয়ের মানে বৌভাতের দিনদুয়েক পরেই হবে,

আমার পিসি তখনও অতিথি হিসেবে আমাদের বাড়িতেই ছিলেন,

সকালবেলা আমি চা করে সবাইকে দিচ্ছিমালিনীও সেখানেই ছিল,

পিসি আমাকে বললেনবৌ থাকতে তুই চা করলি কেন?

আমি উত্তর দেওয়ার আগেই আমার মা পিসিকে বললেনএটাই তো সৈনিকের শিক্ষা।

পিসি রেগে মাকে বললেনবৌকে মাথায় তুলো না,

মা হেসে বললেনমাথায় কেন তুলবোওকে আমার বুকের মাঝে আগলে রাখবো।

মাআমার মাআমার দেশ,

যার স্নেহের নেই যে কোনো শেষ।

 

সত্যি বলছি----

আজকাল  জলপাই রঙের পোশাক পড়লে মায়ের মুখটা ঠিক আগের মতোই ভেসে ওঠে,

অবসরে অফিসার্স মেসে যখন ক্লান্তি কাটাতে একটা পেগ নিয়ে বসি

পেগে ভেসে ওঠে মালিনীর মিষ্টি হাসি।

পারি নাপেগে চুমুক লাগিয়ে মালিনীর হাসি নিঃশেষ করতে।

ছুটি পেয়েছি কালকেই রওয়ানা দেবো বাড়ির উদ্দেশ্যে,

কাটাবো কয়েকটা দিন হাস্যরসে।

-----------------------------------

আর্কাইভ