প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২২, ১২:৪২ এএম
আমি কর্নেল দেবাশীষ সামন্ত।
দেখতে দেখতে তিন মাস হয়ে গেল মা আর মালিনীকে দেখি না।
মালিনী আমার স্ত্রী।
হ্যাঁ তিন মাস আগে আমার সঙ্গে মালিনীর বিয়ে হয়েছে।
বিয়েটা একটু দেরিতেই করলাম।
আসলে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার বাবা মারা যান, ক্যান্সারে।
বাবা একটা শাড়ির দোকানে হিসাব রাখতেন।
মা, আমি আর বাবা তিন জনের সংসার।
বাবার মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবেই সংসারে দুর্দিন ঘনিয়ে এলো।
মাকে কাজ করতে পথে নামতে হলো।
ছোটবেলা থেকেই আমি লেখা-পড়াটা ঠিকঠাক করতাম।
মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম আর আমার অধ্যাবসায় আমাকে খড়্গপুর আই আই টিতে পৌঁছে দিলো।
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যোগ দিলাম ভারতীয় সেনাতে।
মা, আমার মা, আমার চোখের তারা
আমার বাবা আমার মজবুত শিরদাঁড়া।
সেনাতে যোগ দিয়ে যে দিন জলপাই রঙের পোশাক পড়েছিলাম,
সে দিনের অনুভূতি আমি প্রকাশ করতে পারবো না।
আমাকে সে দিন দেখতে কেমন লাগছিল জানি না,
কেবল উত্তেজনার পারদে থরথর করে কাঁপছিল আমার মনের আয়না।
কঠিন ট্রেনিং শেষে যখন আমাকে ক্যাপ্টেনের ব্যাজ পরানো হলো,
সেই সময় মায়ের মুখটাই সামনে ভাসছিল।
সেই থেকে আজও যখনই জলপাই রঙের পোশাক পড়ি চোখের সামনে ভেসে ওঠে মায়ের মুখ,
যখনই কোনো শত্রুর সম্মুখীন হয়েছি শিরদাঁড়া বাবার আশীষে হয়েছে মজবুত।
মা, আমার মা, আমার দেশ,
এ সুখের নেই যে কোনো শেষ।
চাকরিতে যোগদানের মাসছয়েক পর সাত দিনের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলাম।
মাকে নিয়ে দোকানে গিয়েছিলাম একটা ভালো মোবাইল কিনে দেবো ভেবে।
দোকানদার জিজ্ঞেস করলেন, মোবাইল কি আপনার জন্য?
না, আমার মায়ের জন্য, ভালো স্মার্ট ফোন দেখান।
স্মার্ট ফোন আপনার মা ব্যবহার করতে পারবেন?
আমি হেসে বললাম, মায়েরা সব পারে।
যে মা তার ছেলেকে বুকে আগলে রেখে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বানাতে পারে সেই মা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে পারবে না?
এরপর ঘরে এসে তিনদিন মাকে শিখিয়েছিলাম কিভাবে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে হয়।
আমার মা এখন ফেসবুক, হোয়াটস app সব ব্যবহার করতে পারে।
আসলেই মায়েরা সব পারে,
সন্তান জন্ম দিতে পারে আবার দেশের জন্য সেই সন্তানকে ছাড়তেও পারে।
অনেকদিন ধরেই মা বলছিল, এবার বিয়েটা কর।
বুড়ো হয়ে গেলি তো, বিয়ে কবে করবি?
মাকে বলেছিলাম, নিজেদের একটা বাড়ি করেই বিয়ে করবো।
মাসছয়েক আগে একটা ফ্ল্যাট কিনেছি,
মা মেয়ে পছন্দ করলো,পনের দিনের ছুটি নিয়ে গিয়ে বিয়ে করলাম।
বিয়ের মানে বৌভাতের দিনদুয়েক পরেই হবে,
আমার পিসি তখনও অতিথি হিসেবে আমাদের বাড়িতেই ছিলেন,
সকালবেলা আমি চা করে সবাইকে দিচ্ছি, মালিনীও সেখানেই ছিল,
পিসি আমাকে বললেন, বৌ থাকতে তুই চা করলি কেন?
আমি উত্তর দেওয়ার আগেই আমার মা পিসিকে বললেন, এটাই তো সৈনিকের শিক্ষা।
পিসি রেগে মাকে বললেন, বৌকে মাথায় তুলো না,
মা হেসে বললেন, মাথায় কেন তুলবো, ওকে আমার বুকের মাঝে আগলে রাখবো।
মা, আমার মা, আমার দেশ,
যার স্নেহের নেই যে কোনো শেষ।
সত্যি বলছি----
আজকাল জলপাই রঙের পোশাক পড়লে মায়ের মুখটা ঠিক আগের মতোই ভেসে ওঠে,
অবসরে অফিসার্স মেসে যখন ক্লান্তি কাটাতে একটা পেগ নিয়ে বসি
পেগে ভেসে ওঠে মালিনীর মিষ্টি হাসি।
পারি না, পেগে চুমুক লাগিয়ে মালিনীর হাসি নিঃশেষ করতে।
ছুটি পেয়েছি কালকেই রওয়ানা দেবো বাড়ির উদ্দেশ্যে,
কাটাবো কয়েকটা দিন হাস্যরসে।
-----------------------------------