শিবাজী সান্যাল
মা, মা এক গভীর অনুভূতির নাম
তপ্ত গ্রীষ্মে বটবৃক্ষের শান্ত ছায়ার নাম
মা, এক অপার নিঃশর্ত ভালোবাসা
মা, অরুণোদয়ের শুদ্ধ বিস্তৃত গেরুয়া
মা, অনন্ত পিপাসায় জীবনের মরুদ্যান
মা, এক গভীর অনুভূতির সম্পর্কের নাম।
মা, নয় মাস দশদিন ধরে নিজের রক্তের উত্তাপ
হাজার হাজার মুহূর্তের অপেক্ষার নাম
মা, নিজেকে বিলিয়ে, সমস্ত কষ্ট সয়ে,
অনেক অনেক ভালোবাসায়
নক্ষত্রের, চাঁদের, সোনালি স্বপ্নের প্রত্যাশা
মা, জন্মলগ্নের কান্নায়, অশ্রুতে, উৎসব আনন্দে
সৃষ্টির মহিমায় উজ্জ্বল এক জননীর নাম।
মা, এক অসীম অনুভূতির সবচেয়ে প্রিয় নাম।
মা, বুকের দুধ দিয়ে বুকে চেপে রাখার নাম
সন্তানের খাওয়া, স্নান, মিষ্টি হাসির খেলা
মা, সারারাত জেগে ঘুম পারানি গান
মা, টলমল পায়ে চলতে গিয়ে হাত ধরে রাখার নাম
মা, অ আ ক খ, শিশুশিক্ষা
১ ২ ৩ ৪ প্রতিটি শব্দের প্রথম উচ্চারণ
স্কুল থেকে ফিরলে খাওয়া সাজিয়ে রাখা
মা, জ্বর এলে রাত জেগে মাথায় জলপটি
বারবার করজোরে প্রার্থনা ভগবান।
মা, এক আশ্বাস, মা এক পরিপূর্ণ বিশ্বাস
ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠা শুধু এক মায়ের কাহিনী
কঠিন কাজে বেরুবার মুহূর্তে মা শক্তি, আশীর্বাদ
দিন শেষে মায়ের মুখ দেখে দিনের সার্থকতা
সারাদিনের সমস্ত ক্লান্তির অবসান।
মা, মন্দির মা চারধাম, মা গঙ্গোত্রীর পবিত্রতা
মা, লালপাড় শাড়িতে শ্রদ্ধানত তুলসীতলা
মা, দিন, মা রাত, মা ষড়ঋতুর নানারূপ
মা, সন্ধ্যার আকাশে মেঘমালা, কালিঘাট
মা, কপালের সিঁদুর, দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতি
মা, কল্পনা, শ্রদ্ধা, সীমাহীন স্নেহের নাম “মা” ।
মা, পূজার থালি, জবা, চন্দন, দুর্বা
মা, এক পরম বিশ্বাস, অপার স্নেহের বিশাল সমুদ্র
মা, ঘোর নিরাশাকালে শেষ আলো
মা, পরাজয়ের পরে আঁচলের নিশ্চন্ত শান্তি
মা, ভগ্ন হৃদয়ে উত্তাল জোয়ারে নতুন সম্ভাবনা
মা, সঙ্গীত ভৈরবী, উন্মুক্ত নির্মল বারিধারা
বলাকার ডানায় ভেসে আসা বিরাট নীলাকাশ
মা, জীবন, বেঁচে থাকার প্রেরণা, এগোবার উৎসাহ
মা, গরম ভাতের ধোঁয়া, কপালে দইয়ের ফোঁটা
নিশ্চিত এক বিন্দু, প্রতিমার মতো সুন্দর
চির জাগ্রত মূর্তি মন্দিরের।
মা, সঙ্গে থাকলে স্বর্গের স্পর্শ
সমস্ত বাধার প্রাচীর কেটে যায় মায়ের আশীর্বাদে
বয়সের ভারে শীর্ণদেহ, চোখে দেহে শক্তিহীন মা
তবুও শুধুই মায়ের অস্তিত্ব দেয় এক নির্ভরতা
মা, অপারশক্তি, এক পুষ্পময় বেদি, জীবনের
আনন্দ সরোবর।
মা চলে গেলে নিঃস্ব হয় মুখর পৃথিবী
মা চলে গেলে হয় না ভগবানের আরতি
হঠাৎ শূণ্য প্রতিটি ঘর, হয় না পড়া লক্ষ্মীর পাঁচালি
মা চলে গেলে জ্বলে না প্রদীপ, ধূপকাঠি
মা চলে গেলে কেউ এসে আর বসে না পাশে
মা চলে গেলে কেউ আর বোলায় না মাথায় হাত
মা চলে গেলে হয় না আর শুক্তো চচ্চরি
নলেন গুড়ের পায়েস, রাঙা আলুর পিঠে।
মা চলে গেলে বড় একা মনে হয়
দেয়ালের ফটো নিশ্চুপ তাকিয়ে থাকে
মা চলে গেলে কখনও কখনও মা শুধু স্বপ্নে আসে
মাকে আরও শীর্ণ, অসুস্থ, দুর্বল মনে হয়
মা কাছে আসে, হেসে পাশে বসে
চুলে বুলিয়ে হাত, জিজ্ঞেস করে,
“বাবু, সারাদিন ঘুরেছিস আজ, খেয়েছিলি তো?”
মাকে বারবার মনে পড়ে
সমস্ত মাকে জানাই আমার বিনম্র প্রণাম।
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন