প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৩, ১০:০৪ পিএম
বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কায় হাওড়ের ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বৈরী আবহাওয়ায় ধান কাটা, পরিবহন, ধান শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা বাধাগ্রস্ত হয়। তাই আবহাওয়া অনুকূলে থাকতেই গোলায় ধান তুলতে চান কৃষকরা।
সরেজমিন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকার হাওড়ে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা দলবেঁধে কাস্তে দিয়ে জমির পাকা ধান কাটছেন। হাওড়ের প্রতিটি খলায় মাড়াই ও ধান শুকানোর কাজ চলছে। শুকনো ধান বস্তায় ভরে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কিষান-কিষানিরা।
সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, বৈশাখ মাসে হঠাৎ করে বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টিও হয়। এতের ধানের ক্ষতি হয়, তাই আবহওয়া ভালো থাকতেই গোলায় ধান তোলার জন্য পাকা ধান দ্রুত কাটা হচ্ছে।
নীলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, এই মাসে আবহাওয়ার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। ১৫ দিন ধরে তীব্র গরম, তাই ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা বেশি। এ জন্য জমির পাকা ধান কেটে ফেলা হচ্ছে।
গৌবিনপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, বৃষ্টি হলে ধান কাটা, পরিবহন, মাড়াই, শুকানো কোনো কাজ করা যায় না। ঘরে বসে দিন কাটাতে হয়।
ধান কেটে আঁটি বাঁধছেন সুনামগঞ্জ হাওড়ের এক কৃষক।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, সুনামগঞ্জ মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান হওয়ায় আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দেয়া খুব কঠিন। পাহাড়ের অবস্থান কাছে হওয়ায় আবহাওয়ার গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য ইন্ডিয়ান রাডারগুলোর কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। সুনামগঞ্জে ৩-৪ দিনের আবহাওয়ার খবর মোটামুটি সঠিকভাবে দেয়া যায়। এখানে নির্ভুল আবহাওয়া নির্ণয় করা খুবই কঠিন। তবে কাছাকাছি ওয়েদার ফোরকাস্ট দেয়া যায়। ২৪ এপ্রিল বৃষ্টিপাতের বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। দিন যত ঘনিয়ে আসবে, তত বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, জেলায় পুরোদমে বোরো ধান কাটা চলছে। জমির সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলা যায়, এ বছর বাম্পার ফলন হবে। হাওড়ে ধান কাটার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন আড়াই লাখ ধানকাটা শ্রমিক। সাড়ে নয়শ কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ১৫২ রিপার ধান কাটার কাজ করছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এপ্রিলের মধ্যে হাওড়াংশের ৯০ ভাগ ধান কাটায় আশাবাদী তিনি। ৫ মে-র মধ্যে শতভাগ ধান কাটা যাবে বলে তিনি মনে করেন।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভালো আছে। তবে জমিতে পাকা ধান ফেলে রাখা যাবে না। কৃষকদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মাঠে ধান শুকাচ্ছেন সুনামগঞ্জের হাওড়ের কিষান-কিষানি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, এ বছর জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। হাওড়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার ও নন হাওড়ে ৫৭ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত হাওড়ে ৪৫ হাজার ৮৮৪ হেক্টর ও নন হাওড়ে ১ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। হাওড় ও হাওড়ের বাইরে সব মিলিয়ে ৪৭ হাজার ৩৯ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। ধান কাটায় নিয়োজিত রয়েছে পৌনে আড়াই লাখ শ্রমিক ও ৯৫০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার ১৫২টি। জেলার ছোট-বড় ১৪৭টি হাওড়ে তিন হাজার মাড়াই মেশিন ধান মাড়ার কাজ করছে।
এডিএস/